ট্রাম্পের অভিবাসী বিতাড়ন
‘উড়োজাহাজে আমাদের হাত-পা বাঁধা ছিল, পানি খেতে দেয়নি, যেতে দেয়নি বাথরুমে’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ব্রাজিল সরকার। তারা বলেছে, এটা অভিবাসীদের মৌলিক অধিকারের প্রতি ‘নিদারুণ অসম্মান’।
কেন উড়োজাহাজের যাত্রীদের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা ওয়াশিংটনের কাছ থেকে চাওয়া হবে বলে গত শনিবার জানিয়েছে ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার স্থানীয় সময় রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত অভিবাসীদের নিয়ে একটি উড়োজাহাজ ব্রাজিলের উত্তরের শহর মানাউসে অবতরণ করে। উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরে অবতরণের পরপরই ব্রাজিলিয়ান কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের দ্রুত যাত্রীদের হাতকড়া খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ব্রাজিলের বিচার মন্ত্রণালয়।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই অভিবাসীদের প্রতি খড়্গহস্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। শপথ গ্রহণের পরপরই তিনি নিজের ওই প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজে নেমে পড়েছেন। দেশজুড়ে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ধরপাকড় ও তাঁদের গণহারে বিতাড়িত করা হচ্ছে।
বিচার মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বিচারমন্ত্রী রিকার্ডো লেবানদোভস্কি প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভাকে ব্রাজিলের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের প্রতি নিদারুণ অসম্মান দেখানোর বিষয়টি জানিয়েছেন।
ওই উড়োজাহাজে ব্রাজিলের ৮৮ জন নাগরিক ছিলেন বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাতের ফ্লাইটে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কেন অসম্মানজনক আচরণ করা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিতে ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অনুরোধ করবে।
‘কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়েছিলেন’
শুক্রবার রাতের ওই ফ্লাইটে ব্রাজিলে আসা যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন এদগার দা সিলভা মোউরা। ৩১ বছর বয়সী মোউরা পেশায় একজন কম্পিউটার টেকনিশিয়ান। যুক্তরাষ্ট্রে সাত মাস বন্দী থাকার পর তিনি বিতাড়িত হয়ে দেশে ফিরেছেন।
মোউরা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘উড়োজাহাজের ভেতর তারা আমাদের পানি দেয়নি, আমাদের হাত-পা বাঁধা ছিল। এমনকি তারা আমাদের বাথরুমে পর্যন্ত যেতে দেয়নি। খুব গরম ছিল, কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়েছিলেন।’
যাঁদের হৃদ্রোগের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য এ যাত্রা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল—বলেছেন ২১ বছর বয়সী ফ্রিল্যান্সার লুইজ অ্যান্টোনিও রদ্রিগুয়েজ সান্তোস। এই তরুণও ওই ফ্লাইটে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘উড়োজাহাজে কারিগরি সমস্যার কথা বলে চার ঘণ্টা আমাদের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ছাড়া রাখা হয়। (ট্রাম্প আসায়) পরিস্থিতি এরই মধ্যে পাল্টে যেতে শুরু করেছে। অভিবাসীদের সঙ্গে অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে।’
ধরপাকড়
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা যে উড়োজাহাজ মানাউসে অবতরণ করেছে, সেটির প্রকৃত গন্তব্য ছিল দেশটির দক্ষিণ–পূর্বের শহর বেলো রিজনটি। কিন্তু কারিগরি সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেটি মানাউসে অবতরণ করতে বাধ্য হয়।
সরকারি একটি সূত্র এএফপিকে বলেছে, ওই উড়োজাহাজে যাঁদের বিতাড়ন করা হয়েছে, গত সোমবার ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর জারি করা অভিবাসন বিষয়ে নির্বাহী আদেশের সঙ্গে তাঁরা সম্পৃক্ত নন; বরং দুই দেশের মধ্যে ২০১৭ সালে সই হওয়া একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
ব্রাজিলের মানবাধিকারমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, অটিজম আছে এমন শিশুরাও ওই ফ্লাইটে ছিল...তাদের গুরুতর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
ব্রাজিলের টেলিভিশনে দেখানো ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, উড়োজাহাজটি থেকে নেমে আসা কারও কারও হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল পরানো।
এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ব্রাজিলের নাগরিকদের তাঁদের চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ব্রাজিলিয়ান এয়ার ফোর্সের (এফএপি) একটি উড়োজাহাজের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিচারমন্ত্রী। সম্মানের সঙ্গে ও নিরাপদে তাঁদের যাত্রা শেষ করা নিশ্চিত করতে প্রেসিডেন্ট এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
শুধু ব্রাজিল নয়, কলম্বিয়া ও গুয়াতেমালার অবৈধ অভিবাসীদেরও নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ অবৈধ অভিবাসী রয়েছেন।