আদানি, মণিপুর নিয়ে উত্তপ্ত হবে ভারতের সংসদ অধিবেশন

ভারত পার্লামেন্ট ভবনছবি: রয়টার্স

ভারতের সংসদের শীতকালীন অধিবেশন যে উত্তপ্ত হবে, প্রথম দিনই তার ইঙ্গিত পাওয়া গেল। আজ সোমবার অধিবেশনের প্রথম দিন প্রয়াত সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক প্রস্তাব পাঠের পর লোকসভা ও রাজ্যসভা মুলতবি হয়ে গেলেও বিরোধীরা বুঝিয়ে দিলেন, আদানি ঘুষকাণ্ড, মণিপুর পরিস্থিতি ও ওয়াক্‌ফ বিলের বিরোধিতায় তাঁরা সরব হবেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা আন্দাজ করেই সোমবার অধিবেশন শুরুর প্রাক্কালে বলেন, মানুষ বারবার যাদের প্রত্যাখ্যান করছে, তারা অন্যদের বলার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। সংসদে গোলমাল করছে। ফলে নতুন সদস্যরা কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না। এই প্রত্যাখ্যাতরা তাদের ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে সংসদ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। অথচ সংসদের কাজ হলো আলোচনা ও বিতর্কের মধ্য দিয়ে মানুষের সমস্যা তুলে ধরা, বিল পাস করা।

সংসদের গত অধিবেশনে সরকার ওয়াক্‌ফ বিল এনেছিল। সেই বিলের উদ্দেশ্য দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ভূমিকা প্রতিষ্ঠা করা। মুসলমান সমাজের মধ্য থেকে তার তীব্র বিরোধিতা করা হয়। বিরোধী দলগুলোও ধর্মীয় বিষয়ে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতায় সরব হয়। ফলে বিলটি আরও বিবেচনার জন্য সরকার সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠিয়েছিল। এই অধিবেশনে সেই কমিটির সুপারিশ নিয়ে আলোচনার পর ভোটাভুটি হওয়ার কথা। সেটাকে কেন্দ্র করে সংসদ উত্তপ্ত হবে।

নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা মণিপুর পরিস্থিতি নিয়েও বিরোধীরা সরব হবে এই অধিবেশনে। এক বছর ধরে অশান্ত মণিপুরকে শান্ত করতে পারেনি সেখানকার বিজেপি সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারও চূড়ান্ত ব্যর্থ। সেই প্রসঙ্গ তোলারও চেষ্টা করবে বিরোধীরা।

কিন্তু সবচেয়ে উত্তপ্ত হওয়ার শঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রে আদানি ঘুষকাণ্ড নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত উদ্যোগপতি গৌতম আদানি ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ঘুষ দিয়ে প্রকল্প আদায় ও সেই তথ্য গোপন করে বন্ড মারফত যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের গুরুতর অভিযোগ এনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। সেই অপরাধে গৌতম আদানি ও তাঁর আত্মীয় সাগর আদানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আদানি প্রসঙ্গে আলোচনার দাবি জানিয়ে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে লোকসভায় মুলতবি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আদানিকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা ও উদাসীনতা বিশ্বের কাছে ভারতের মাথা নিচু করে দিয়েছে। এর জবাব প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হবে।

মোদি–আদানি ঘনিষ্ঠতা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা অনেক দিন ধরেই সরব। কিন্তু ঘটনা হলো, এখনো সংসদের কোনো কক্ষেই আদানি প্রসঙ্গ আলোচিত হয়নি। সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। এবারও হবে না বলা যায়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের অভিযোগের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও আদানির রপ্তানি করা বিদ্যুৎ চুক্তিসহ অন্য কয়েকটি প্রকল্পের চুক্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিষয়ে সহযোগিতার জন্য এক আন্তর্জাতিক আইন ও তদন্তকারী সংস্থাকে তারা নিয়োগ করেছে।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সংসদে আদানি–মোদি সম্পর্ক নিয়ে গুরুতর অভিযোগ করেছিলেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে আদানির সঙ্গে চুক্তিতে মোদির চাপ দেওয়া নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন। সরকার অবশ্য আজ পর্যন্ত সংসদে আদানি প্রসঙ্গে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। এবার যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের পদক্ষেপের পর বিজেপি বলেছে, ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করতে সুপরিকল্পিতভাবে এসব আজগুবি অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এসব চক্রান্ত। তাই সংসদের অধিবেশন শুরুর আগেই এ ধরনের মনগড়া অভিযোগ তোলা হয়।