শ্রীলঙ্কার জমিতে ভারতবিরোধী কাজ করতে দেব না: দিশানায়েকে

প্রথম বিদেশ সফরে ভারতকে বেছে নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকেছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে বলেছেন, শ্রীলঙ্কার জমি থেকে তিনি ভারতবিরোধী কাজ হতে দেবেন না। গতকাল সোমবার দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা বলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুঢ়া বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে শ্রীলঙ্কা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমি প্রধানমন্ত্রীকে এই আশ্বাস দিয়েছি যে আমরা আমাদের জমি থেকে ভারতের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ হতে দেব না। ভারতের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা আরও বাড়বে। আমি আবার আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা ভারতকে সমর্থন করে যাব।’

সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দিশানায়েকে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফরে আমি ভারতে এসেছি। শ্রীলঙ্কার আর্থিক সংকটে এবং ঋণের পুনর্গঠনে ভারত যেভাবে সাহায্য করেছে, তাতে আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আমি বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, ব্রিকস, হাইড্রোগ্রাফিক গবেষণা ও বেআইনিভাবে মাছ ধরা বন্ধ করার মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি।’

মোদি যা বলেছেন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ‘আমরা মাল্টি-প্রোডাক্ট পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদ্যুতের গ্রিড বসানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ভারত এলএনজি সরবরাহ করবে।’

এ ছাড়া রামেশ্বরম থেকে তালাইমানার পর্যন্ত ফেরি চলাচলেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুই দেশই প্রতিরক্ষা চুক্তি করা নিয়ে সম্মত হয়েছে। মোদি দুই দেশের নিরাপত্তা স্বার্থের কথা জানিয়ে বলেছেন, মৎস্যজীবীদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই দেশই এ ক্ষেত্রে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নেবে বলে ঠিক হয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, মৎস্যজীবীদের ক্ষেত্রে কোনো দেশই বলপ্রয়োগ করবে না বলে ঠিক হয়েছে।

মোদি জানিয়েছেন তিনি আশা করেন, শ্রীলঙ্কা সরকার সে দেশে বসবাসকারী তামিলদের আশা পূরণ করবেন।

দিশানায়েকের সফরের গুরুত্ব

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘দিশানায়েকে প্রথম বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে ভারতকে বেছে নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি একটা বার্তা দিয়েছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে তিনি কতটা বেশি গুরুত্ব দেন।’

শরদ গুপ্তা আরও বলেন, ‘মনে রাখতে হবে নেপালের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কে পি শর্মা ওলি প্রথমে চীনে গিয়েছিলেন, মালদ্বীপের প্রধানমন্ত্রী মোহামেদ মুইজ্জু নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে তুরস্কে গিয়েছিলেন। আর ভারতে দাঁড়িয়ে তিনি (দিশানায়েকে) যে শ্রীলঙ্কার জমি ভারতবিরোধী কাজে লাগাতে দেবেন না বলেছেন, এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।’

শরদ বলেছেন, ‘ভারত মহাসাগরে চীনের তৎপরতা নিয়ে ভারতের একটা উদ্বেগ আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বামপন্থী নেতা দিশানায়েকের মন্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ রোহন সমরাবীরা বলেছেন, ‘ভারত ও শ্রীলঙ্কা যৌথভাবে হাইড্রোগ্রাফিক গবেষণা করতে সম্মত হয়েছে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন ঠিক এই কাজই করছে। শ্রীলঙ্কার দিক থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পাইপলাইন, সেতুসহ পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে ভারত সহযোগিতা করবে। এটা শ্রীলঙ্কার কাছে সুখবর।’