এক হাত নিয়েই অলিম্পিকে ব্রাজিলের টেবিল টেনিস খেলোয়াড়
অন্য সব টেবিল টেনিস খেলোয়াড়ের মতোই স্ম্যাশ আর চপ করেন ব্রুনা আলেকজান্দ্রে। তবে তাঁর সার্ভ করার ধরনটা আলাদা। বাঁ হাতে র্যাকেটটার সঙ্গে বলটা ধরে ওপরে তোলেন, বাঁ হাতেই এরপর করেন সার্ভ। অবশ্য সেটি ছাড়া উপায়ও নেই। তাঁর যে ডান হাতটিই নেই!
এখন সার্ভটা করতে পারেন অনায়াসেই। শুধু তা-ই নয়, এখন সার্ভই তাঁর খেলার অন্যতম শক্তির জায়গা। কিন্তু ২২ বছর আগে যখন প্রথম ব্যাট হাতে তুলে নিয়েছিলেন, সাত বছরের ব্রুনার জন্য এক হাতে এমন কিছু করা ছিল অনুমিতভাবেই বেশ কঠিন। সেই ব্রুনা গতকাল ইতিহাস গড়েছেন। প্রথম ব্রাজিলিয়ান হিসেবে অংশ নিয়েছেন অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিকে।
তিন মাস বয়সেই থ্রম্বোসিসের কারণে ডান হাতটা কেটে ফেলতে হয় ব্রুনার। ২৯ বছর বয়সী টেবিল টেনিস খেলোয়াড় তাতে দমে যাননি মোটেও। এএফপিকে তিনি বলেছেন, ‘অলিম্পিকে খেলতে অনেক বছর ধরে চেষ্টা করছি। আমি জানতাম কাজটি কঠিন। কারণ, ব্রাজিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশ কঠিন।’
সেই কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে আসার পর ব্রুনা বলেছেন, ‘তবে আমি সফল হয়েছি। এখানে আসি। আজ আমার বড় একটা স্বপ্ন পূর্ণ হলো।’
যদিও অলিম্পিক অভিষেকটা শুরুতেই শেষ হয়ে গেছে তাঁর। বিশ্বের শীর্ষ খেলোয়াড়ের সঙ্গে প্রথম রাউন্ডেই খেলা পড়েছিল, তাতে হেরে গেছেন। কিন্তু মনোবল হারাচ্ছেন না মোটেও, ‘যেকোনো কিছু সম্ভব, এটি দেখানোই বড় ব্যাপার। আপনার এক হাত থাকুক বা এক পা।’
ফলে প্রথম রাউন্ডে হারলেও উদ্যাপন করবেন ঠিকই, ‘আমি উদ্যাপন করছি এবং আরও কয়েক দিন করে যাব। যে স্বপ্নটা সত্য হচ্ছে আজ।’
টেবিল টেনিসের পাশাপাশি স্কেটবোর্ডিং ও সাইক্লিংয়েও দক্ষতা আছে ব্রুনার। টেবিল টেনিসে টোকিও প্যারালিম্পিকে রুপাও জিতেছেন। তার আগে রিওতে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। আপাতত প্যারালিম্পিকে সোনা জয়ে চোখ তাঁর, ২০২৮ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকেও ফিরতে চান।
ব্রুনা বলেছেন, ‘অন্য (প্যারা) অ্যাথলেটরাও আছে, যারা অলিম্পিক গেমসে খেলতে পেরেছে। আমার মনে হয়, শুধু আমাদের খেলা নয়, প্রতিবন্ধকতা আছে, এমন মানুষকে খেলায় আনতেও এটি সহায়তা করবে।’
ব্রুনা প্রথম প্যারা অ্যাথলেট নন, যিনি অলিম্পিকের টেবিল টেনিসে অংশ নিচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ার মেলিসা ট্যাপার খেলছেন তৃতীয়বারের মতো। তাঁর ডান হাত প্যারালাইজড।
ব্রুনার অনুপ্রেরণা অবশ্য পোলিশ খেলোয়াড় নাটালিয়া পারটিকা। ২০০৮ বেইজিংয়ের পর ২০১২ সালের অলিম্পিকেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। পারটিকার অনেক ভিডিও ইউটিউবে দেখেছেন উল্লেখ করে ব্রুনা বলেছেন, ‘সে আমার অনুপ্রেরণার উৎস। শুধু আমাকে নয়, মেলিসা ট্যাপার এবং আরও অনেককে প্রেরণা জুগিয়েছে।’
তবে তিনি নিজেও যে অন্যদের অনুপ্রেরণা জোগাতে পারেন, ব্রুনা জানেন সেটি, ‘আমার মনে হয়, এটি অনেক দরজা খুলে দিতে পারে। আমাদের দেশে সবার অংশগ্রহণের ব্যাপারটি উন্নত হতে পারে। সেখানে খেলা বড় একটা ভূমিকা রাখতে পারে।’
অবশ্য কখনোই কেউই তাঁকে ভিন্ন চোখে দেখেনি বলেও জানিয়েছেন ব্রুনা, ‘রাস্তায়, স্কুলে, কোথাও (কাউকে ভিন্ন চোখে দেখতে) দেখিনি। এটি আমাকে অনেক সহায়তা করেছে।’
আপাতত অলিম্পিক-যাত্রা শেষ এখানেই। এবার তাঁর মনোযোগ প্যারালিম্পিকের দিকে, যেটি শুরু হবে ২৮ আগস্ট। ব্রুনা বুঝেছেন, প্যারালিম্পিকের সঙ্গে অলিম্পিকের পার্থক্য অনেক। তবে তাঁর মূলমন্ত্র, ‘স্বপ্ন দেখা ছেড়ো না।’