ব্রাজিল কিংবদন্তির ভবিষ্যদ্বাণী, বার্সায় এটাই মেসির শেষ মৌসুম
হালে বার্সার সঙ্গে মেসির সম্পর্কটা মোটেও আগের মতো নেই। ঘরে-বাইরে নানা সমস্যায় জর্জরিত ক্লাব নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। বোর্ডের ওপর বিরক্ত হয়ে রেগেমেগে মৌসুম শুরুর আগেই ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিলেন।
তবে চুক্তির জোরে এ বছরের মতো মেসিকে বার্সেলোনায় আটকে রাখা গেলেও চুক্তি না বাড়ালে আগামী মৌসুমে মেসিকে ছেড়ে দিতেই হবে। কিন্তু মেসি কি বার্সায় নতুন চুক্তি সই করবেন? বার্সেলোনার সাবেক ব্যালন ডি’অরজয়ী ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রিভালদোর সেটা মনে হচ্ছে না।
স্পেনে খেলোয়াড়দের বেতনের পেছনে সবচেয়ে বেশি খরচ করত বার্সেলোনা। মেসির বেতন নিয়ে নানা অঙ্কের কথাই শোনা যেত এত দিন। অনেকে দাবি করতেন, কর দেওয়ার পরও ৫ কোটি ইউরো পেতেন বার্সেলোনা অধিনায়ক। অর্থাৎ করসহ বার্সেলোনার খরচ হতো ১০ কোটি ইউরো। তবে ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী মেসি গত মৌসুমে বেতন-ভাতা হিসেবে ৯ কোটি ২০ লাখ ডলার পেয়েছেন।
লুইস সুয়ারেজ, আঁতোয়ান গ্রিজমান, ইভান রাকিতিচরাও কম পেতেন না। সব মিলিয়ে বেতনের জন্য বার্সেলোনার বাজেট ছিল ৬৫ কোটি ৬৪ লাখ ইউরো, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৬৭ কোটি ১৪ লাখে।
কিন্তু এ মৌসুমে বেতন দেওয়ায় অত উদার হতে পারবে না বার্সেলোনা।
করোনাভাইরাসের কারণে মাঠে দর্শক ফেরেনি বলে ক্লাবগুলো আয়ের একটা বড় দিক হারিয়ে ফেলেছে। আবার ক্লাবের স্মারক বিক্রির পথও বন্ধ হয়ে গেছে। স্পনসরদের কাছ থেকে পাওয়া আয়েও ভাগ বসিয়েছে করোনা। সব মিলিয়ে ক্লাবগুলোর আয় কমে গেছে অনেক।
যেহেতু স্পেনে একটি ক্লাব তাদের আয়ের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ বেতনের জন্য ব্যয় করতে পারে, এ খাতে খরচও তাই এ মৌসুমে কমাতেই হচ্ছে তাদের। খরচ কমাতে গেলে মেসির বেতনও কমাতে হবে।
নতুন চুক্তিতে কি বেতন কমাতে রাজি হবেন মেসি? তা-ও আবার এমন এক সময়ে যেখানে ক্লাবের ভেতর-বাইরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি বিরক্ত?
রিভালদোর মোটেও মনে হচ্ছে না সেটা, ‘বার্সেলোনা এর মধ্যেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে বেতন কমানোর ব্যাপারে কথাবার্তা বলেছে। স্কোয়াডের সবার বেতন যেন কমে, সে প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে রাজি হয়নি স্কোয়াডের কেউ। বেতন কমানোর জন্য বার্সার এই তোড়জোড় খেলোয়াড়দের কাছে নতুন কিছু নয়। তবে খেলোয়াড় মানুক বা না মানুক, ক্লাবের এসব প্রচেষ্টা দ্বারা বোঝা যায়, মেসির চুক্তি নবায়নের বিষয়টা মোটেও সহজ হবে না।’
সে কারণে মেসির বার্সায় থাকার সম্ভাবনাও দেখছেন না রিভালদো, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মেসির কাছে অন্য ক্লাবের প্রস্তাব অনেক বেশি থাকবে। ও এমনিতেই মৌসুম শুরুর আগে ক্লাব ছাড়তে চেয়েছিল। তাই বোর্ড যদি সেভাবে মেসিকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে না রাখতে পারে, তাহলে আমার মনে হয় না বার্সেলোনা বোর্ড আর মেসিকে ধরে রাখতে পারবে।’
ক্লাব ছাড়তে চাইছেন—এমন এক খেলোয়াড়ের বেতন কমাতে চাওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু কদিন আগেই খবর বেরিয়েছে, মেসি বেতন না কমাতে রাজি হলে দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে ক্লাব। তবে সেটা ছিল ক্লাবের ভেতরের খবর। যার সত্য বা মিথ্যা পরিষ্কারভাবে বলা কঠিন ছিল।
তবে এবার লা লিগাও জানিয়ে দিয়েছে মেসি ও তাঁর সঙ্গীদের বেতন না কমিয়ে উপায় নেই বার্সেলোনার। অন্তত ফিফার আর্থিক সংগতির নীতি (এফএফপি) ভাঙার মতো অপরাধ না করতে চাইলে তো বটেই।
তবে এত কিছুর পরেও বেটফেয়ারে লেখা কলামে রিভালদো জানিয়েছেন মেসিকে ধরে রাখার টোটকা। যদিও সে টোটকা আদৌ বার্সেলোনা অনুসরণ করতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে তিনি নিজেও সন্দিহান, ‘শুধু বার্সেলোনা যদি কোনোভাবে এবার লিগ কিংবা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারে, কোচ রোনাল্ড কোমান যদি দেখাতে পারেন তাঁর অধীনে বার্সেলোনা সুন্দর ফুটবল খেলছে, তাহলে হয়তো মেসি বার্সায় থাকার বিষয়টা আরও ভালোভাবে ভেবে দেখবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার মনে হচ্ছে, এটাই বার্সার হয়ে মেসির শেষ মৌসুম।’