ফিরমিনোর স্বপ্ন রোনালদো হওয়া
আত্মঘাতী গোল একটি। বাকি ৪ গোল ব্রাজিলের মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগের সম্মিলিত প্রয়াস। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের এমন সৌরভই পেতে চান সমর্থকেরা। বলিভিয়ার বিপক্ষে ২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের এই পারফরম্যান্স মুগ্ধ করাই স্বাভাবিক। মাঝমাঠ গোল করেছে, জোড়া গোল পেয়েছেন অ্যাটাকিং থার্ডের স্ট্রাইকার। এমন ব্রাজিলকে দেখতে কারও অন্তত খারাপ লাগার কথা নয়।
একটা সময় ছিল যখন ব্রাজিলের খেলায় ‘নম্বর নাইন’ স্ট্রাইকারের গোল না করাটাই ছিল অস্বাভাবিক বিষয়। দিন পাল্টেছে। এখন গোল করার জন্য শুধু বিশেষজ্ঞ স্ট্রাইকারের ওপর কেউ ভরসা রাখে না। আরেকটু খোলামেলা করে বললে, ফুটবল থেকে ‘নম্বর নাইন’দের জাত প্রায় উঠে যাওয়ার পথে। ব্রাজিল কোচ তিতে এই বিপন্ন ‘প্রজাতি’দের ভূমিকাটা নিতে বলেছেন রবার্তো ফিরমিনোকে। লিভারপুলে ফিরমিনোর খেলা দেখলে একটু খটকা লাগতে পারে। ইয়ুর্গেন ক্লপের অধীনে ফিরমিনোকে অনেকটাই—এক টিকিটে তিন ছবি! গোল করছেন, বানাচ্ছেন আবার গোলও ঠেকাচ্ছেন। তাহলে?
তাহলে আর কী! ফিরমিনো খুশি। ব্রাজিলিয়ান ‘নম্বর নাইন’-এর ঐতিহ্য গায়ে মাখতে কে না ভালোবাসে! তোস্তাও, ক্যারেকা, রোমারিও, আদ্রিয়ানোরা এ ভূমিকায় কিংবদন্তি। মুনশিয়ানা সবচেয়ে বেশি দেখিয়েছেন রোনালদো। সে সময়ে ব্রাজিলের স্কোরকার্ডে রোনালদোর নাম দেখাটা ছিল খুব পরিচিত দৃশ্য। পায়ের চোটের আগে মাঝমাঠেও নেমে খেলতেন রোনালদো। পরে বক্সে থেকেছেন বেশি। ত্রাসের সঙ্গে ছড়িয়েছেন গোলের সৌরভ। ২০১১ সালে রোনালদো অবসর নেওয়ার পর থেকে এ পজিশনে ভুগছে ব্রাজিল। স্ট্রাইকার তো কম আসে-যায়নি! লুইস ফাবিয়ানো, ফ্রেড, দিয়েগো তারদেল্লি, ভাগনার লাভ, আলেক্সান্দার পাতোরা থাকতে পারেননি। এখন আছেন রিচার্লিসন। কিন্তু কেউ-ই প্রতিপক্ষের বক্সে ধারাবাহিক মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি।
ফিরমিনো এখন এই ভূমিকাটাই নিতে চান। ৬ বছর আগে জাতীয় দলে অভিষিক্ত এ ফরোয়ার্ডের গোলসংখ্যা অবশ্য প্রথাগত ‘নম্বর নাইন’দের ছাড়পত্র দেয় না। ৪৫ ম্যাচে ১৫ গোল। এর কারণ বোধ হয় শুধু বক্সে না দাঁড়িয়ে থেকে মাঝমাঠ কিংবা উইং ধরে খেলা। এতে গোল বানানোর কাজটা করতে হয় বেশি সময়। ফিরমিনোকে এখান থেকে আরেকটু সামনে খেলার ছাড়পত্র দিয়েছেন তিতে। ফিরমিনোর ভাষায়, ‘(কোচ) তিনি আমাকে (সতীর্থদের) সাহায্য করতে বলেননি। সব সময় বক্সে থাকতে বলেছেন। বলের পেছনে কম ছুটে বক্সে থাকতে বলেছেন।’
আমার খেলার মধ্যে থাকতে ভালো লাগে, গোল বানাতে ভালো লাগে, তবে বক্সে থেকে গোল করতেও ভালোবাসি।
লিভারপুল তারকা কোচের কথায় সানন্দে রাজি। যদিও ক্লাব ফুটবলে তাঁর ভূমিকা একটু অন্যরকম। জাতীয় দলে নতুন ভূমিকায় মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হওয়াই স্বাভাবিক। ফিরমিনো কিন্তু মোটেও এসব নিয়ে ভাবছেন না, ‘স্বাভাবিকভাবেই (কোচকে) বলেছিলাম, একটু নিচে নামি, সাহায্য করি—লিভারপুলে যে কাজটা করি—কিন্তু এসব একপাশে রেখে তিতের কথামতোই খেলব। আমার খেলার মধ্যে থাকতে ভালো লাগে, গোল বানাতে ভালো লাগে, তবে বক্সে থেকে গোল করতেও ভালোবাসি।’
ফিরমিনোর এই ভালোবাসার কারণটা বোধ হয় এই পজিশনে তাঁর পূর্বসূরিদের নাম-ডাক। আক্রমণভাগের ফলায় ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তিদের একজন হওয়ার ইচ্ছাকে ফিফা ডট কমকে বলেছেন তিনি, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই। এই পজিশনে খেলতে ভালোবাসি। এ জায়গায় ব্রাজিল আস্থা রাখতে পারে এমন খেলোয়াড় হতে চাই।’
২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কাল বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় পেরুর মুখোমুখি হবে তিতের ব্রাজিল। ফিরমিনোর লক্ষ্য পরিষ্কার—বিশ্বকাপের মূলপর্বে ব্রাজিলকে নিরাপদে পৌঁছে দিতে চান ২৯ বছর বয়সী এ তারকা, ‘(আগের ম্যাচে) জোড়া গোল করে ভালো লাগছে। আরও সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার বয়স এখন ২৯ বছর। ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে আছি বলে মনে হচ্ছে। আরও কঠোর পরিশ্রম করে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপে পৌঁছে দিতে চাই।’
ফিরমিনোর কথা শুনলে রোমারিও-রোনালদোরা খুশিই হবেন।