রশিদে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ

আফগান লেগ স্পিনার রশিদ। ছবি: আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড
আফগান লেগ স্পিনার রশিদ। ছবি: আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড
>

প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচসেরা হয়েছেন রশিদ খান। পরের দুই ম্যাচে এই লেগ স্পিনারকে কীভাবে সামলাবে বাংলাদেশ—এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন

এই রশিদ খানই কি সেই রশিদ খান! গত বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসে খেলেছেন। দূর থেকে দেখার অভিজ্ঞতা এবং একান্ত সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়ও আফগান লেগ স্পিনারকে বেশ বিনয়ীই মনে হয়েছিল। এখনো নিশ্চয়ই বিনয়ী। কিন্তু এই কয় মাসে একটু গর্বও কি যোগ হলো রশিদের মধ্যে! মানুষের প্রশংসাটা কি হাওয়া-বাতাস থেকেও শুঁকে নিতে চান এখন!

৩ ওভারে ১৩ রানে ৩ উইকেট-ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েই পরশু রাতে সংবাদ সম্মেলনে এলেন। কথাবার্তায় পরিণত। সাংবাদিকদের প্রশ্নগুলোর মধ্যে তাঁর জন্য লুকিয়ে থাকা ভালো ভালো বিশেষণকে আরেকটু রঙিন করে উত্তর দিচ্ছিলেন। একজন জানতে চাইলেন, যেখানেই যান মানুষের তালি পান, সমর্থন পান, এটা কেমন লাগে। উত্তর এল, ‘আমি যেখানেই যাই, মানুষের অনেক ভালোবাসা পাই। এখানেও তাই পাচ্ছি। এ রকম সমর্থন পেলে কার না ভালো লাগে!’

আরেকটা প্রশ্ন, আজ ইংল্যান্ড, কাল ভারত এ রকম হিল্লি-দিল্লি ঘুরে খেলতে কোনো সমস্যা হয় কি না? রশিদ সেটাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন, ‘পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে এর সঙ্গে মানিয়ে নিতেই হবে। আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি।’ এখনো প্রথম টেস্ট খেলার অপেক্ষায় থাকলেও টেস্টের প্রস্তুতি নিয়েও দেখা গেল, তিনি বেশ ভালো ধারণা রাখেন।

পরশুর সংবাদ সম্মেলনের প্রসঙ্গ টেনে রশিদকে নিয়ে এত কিছু বলার উদ্দেশ্য তাঁর নতুন চেহারা তুলে ধরা নয়। কিন্তু জানতে তো হবে, এই যে আত্মবিশ্বাসের ডানায় ভর করে উড়ে চলেছেন ১৯ বছরের তরুণ, সিরিজের পরের দুই ম্যাচে তাঁকে কীভাবে সামলাবে বাংলাদেশ?

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই মুখে মুখে এই প্রশ্ন। পরশুর প্রথম টি-টোয়েন্টির পর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও নিশ্চয়ই এখন বুঝতে পারছেন রশিদ খান আসলেই অত ভয়ংকর কি না, হলেও সেটা কেন। ব্যাটসম্যানদের বিশ্লেষণ বলছে, রশিদ খানের অ্যাকশনের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর বোলিংয়ের রহস্য। দ্রুত হাত ঘোরানোর কারণে বোঝা যায় না কখন কী করবেন। একই রকম অ্যাকশনেই দেখা গেল একটা হচ্ছে গুগলি, আরেকটা লেগ স্পিন। ব্যাটসম্যানরা তাতেই বিভ্রান্ত।

রশিদের শক্তির জায়গাটা ধরতে পারলেও সেটাকে সামলানোর জন্য পাল্টা অস্ত্র এখনো বাংলাদেশ খুঁজে পায়নি। শুধু রশিদ কেন, বিশ্বের ৬-৭টি দলের বোলিং আক্রমণেই এখন আছেন কোনো না কোনো লেগ স্পিনার। আগামী বিশ্বকাপে তাঁদের সামলানোটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের জন্য। চ্যালেঞ্জ উতরানোর ভাবনাও এখনই চলে এসেছে দলের মধ্যে। বাংলাদেশ আছে এক-দুজন ‘এক্স ফ্যাক্টরের’ সন্ধানে, যাঁরা কিনা রশিদ-মুজিবের মতো ভয় ধরাবে প্রতিপক্ষের মনে। ব্যাটিং, বোলিং যেকোনোটিতেই হোক, ওই ‘এক্স ফ্যাক্টর’রাই বদলে দেবেন দলের চেহারা।

তো এই ‘এক্স ফ্যাক্টর’ আসবে কোত্থেকে? এখন যাঁরা আছেন তাঁদের মধ্য থেকেই নাকি সে রকম কাউকে খুঁজে নেবে দল? প্রশ্নটার উত্তর আপাতত কারও কাছে না থাকলেও বিশ্বকাপ মাথায় রেখে বাংলাদেশ দলেও একজন লেগ স্পিনারের প্রয়োজনটা দিনে দিনে স্পষ্ট হচ্ছে। যখনই এই আলোচনা ওঠে, চলে আসে জুবায়ের হোসেনের নাম। নিজেকে নতুন করে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছেন তরুণ লেগ স্পিনার। তবে জুবায়েরের ভবিষ্যৎ শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে বা বাংলাদেশ দলে আসলেই একজন লেগ স্পিনার দেখা যাবে কি না, তা নির্ভর করছে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টের মতের কতটা মিল হয়, সেটির ওপর।

এর আগ পর্যন্ত লেগ স্পিনার দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা নয়, প্রতিপক্ষের লেগ স্পিনারের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার দিকেই মনোযোগ বাংলাদেশের। আজ যেমন দলের লক্ষ্য রশিদ খানকে উইকেট না দেওয়া। ম্যাচটা ২০ ওভারের হলেও বাংলাদেশ তাই তাদের সব রান করে ফেলতে চাইবে ১৬ ওভারে। বাকি চার ওভার যে করবেন রশিদ খান!