রশিদ খান ১৯৯৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের নঙ্গরহারে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই আইপিএলের নিলামে ৪ কোটি রুপি দিয়ে তাঁকে দলে নেয় সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। সহযোগী দেশের খেলোয়াড় হিসেবে রেকর্ড গড়া রশিদকে পরের বছর আবার ৯ কোটি রুপি দিয়ে দলে টেনেছে হায়দরাবাদ। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বকনিষ্ঠ বোলার হিসেবে আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছেন রশিদ। সে মাসেই টি-টোয়েন্টিতেও শীর্ষ বোলার হয়েছেন আফগানিস্তানের এই লেগ স্পিনার। লাইন লেংথ ধরে রেখে দ্রুত গতির লেগ স্পিনের সঙ্গে গুগলির বুদ্ধিদীপ্ত মিশ্রণে বিশ্বসেরা বোলার হয়ে উঠেছেন রশিদ। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রশিদকে ২০১৭ সালের বর্ষসেরা সহযোগী ক্রিকেটার হিসেবে নির্বাচিত করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)।
২০১৫ সালে অভিষিক্ত রশিদ ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিয়মিত রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলায় নেমেছেন। ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের অধিনায়কত্ব করেন এই লেগ স্পিনার। মাত্র ১৯ বছর ১৬৫ দিন বয়সে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে সবচেয়ে কম বয়সে আন্তর্জাতিক অধিনায়ক হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। একই বাছাইপর্বে শাই হোপকে আউট করে ওয়ানডেতে সর্বকনিষ্ঠ ও দ্রুততম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। মাত্র ৪৪ ম্যাচেই এ মাইলফলক ছুঁয়েছেন রশিদ। তার আগে এ রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের। অস্ট্রেলীয় পেসারের এ জন্য দরকার হয়েছিল ৫২ ম্যাচ।
বোলিংয়ে এতসব অর্জনেও রশিদের অন্য সত্ত্ব ঢাকা পড়ে না। এই আফগান শুধু বল হাতেই নন, ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়েও দলের অন্যতম ভরসা। সাধারণত কভারের মতো মহা গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেই দাঁড়ান রশিদ। দারুণ অ্যাথলেটিক বলে প্রায়শ দুর্দান্ত সব ক্যাচও ধরেন। ব্যাটিংয়েও ইনিংসের শেষ দিকে এসে ঝড় তোলার ক্ষমতা রাখেন। স্বভাবগত হার্ড হিটিং ব্যাটিংয়ে প্রায়ই দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন রশিদ।
শৈশবেই জীবনের কঠিনতম পরীক্ষা দিয়েছেন রশিদ। আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চল নঙ্গরহারের এই লেগ স্পিনার পরিবারের ১১ সন্তানের একজন। খুব অল্প বয়সে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পালাতে হয়েছিল রশিদের পরিবারকে। বেশ কয়েক বছর পাকিস্তানে কাটিয়ে আবার দেশে ফেরেন রশিদ ও তাঁর পরিবার। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে ক্রিকেট খেলাতে মনোযোগ দেন রশিদ। পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদিকে আদর্শ মেনে বড় হওয়া রশিদ ভাইদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেই প্রথমে হাত পাকিয়েছেন লেগ স্পিনে।
কাবুল ইগলসের হয়ে আফগানিস্তানের স্থানীয় ক্রিকেটে দাপট দেখানো রশিদ বিশ্বের নানা ফ্র্যাঞ্চাইজি দলেরই অটোমেটিক চয়েজ। ২০১৭ সালে প্রথম আইপিএল খেলতে এসে ১৪ ম্যাচে ১৭ উইকেট পেয়েছেন রশিদ। এর পথ ধরে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও অংশ নিয়েছেন আফগান লেগ স্পিনার। প্রথমবারের মতো খেলতে গিয়ে গায়ানা অ্যামাজন ওয়ারিয়র্সের হয়ে হ্যাটট্রিকও করেছেন, এটা সিপিএলের ইতিহাসেরই প্রথম হ্যাটট্রিক। অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের হয়ে বিগব্যাশ খেলতে গিয়ে প্রথমবারেই দলকে শিরোপা এনে দিয়েছেন। এমন সাফল্যই হায়দরাবাদকে বাধ্য করেছে ২০১৮ সালের আইপিএলে তাঁর জন্য ৯ কোটি রুপি খরচ করতে। ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টেও রশিদের লেগ স্পিন আর গুগলি দেখা যাবে। টি-টোয়েন্টির জন্য তাঁকে দলে টেনেছে সাসেক্স।
২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় রশিদের। ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিপক্ষে আবুধাবির সে ম্যাচেই বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে নিজের সক্ষমতা দেখিয়েছেন। দুই ইনিংসে ১২ উইকেটের সঙ্গে ব্যাট হাতে ৭৭ রান করেছেন রশিদ। ২০১৭ সালে টেস্ট স্ট্যাটাসের প্রস্তুতি হিসেবে একটি তিন দিনের ম্যাচ খেলেছিল আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ড। ইনিংস ও ১৭২ রানের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন ৮ উইকেট পাওয়া রশিদ।
২০১৯ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে ফেলেছে আফগানিস্তান। আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার সুসংবাদ অবশ্য এর আগেই পেয়েছে দেশটি। আগামী জুনে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট ঘিরে আফগানিস্তানের সব স্বপ্ন-আশা এই রশিদকে ঘিরেই।