পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা যেন পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ না পায়: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে পেশাজীবীদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।ছবি: বিএনপির সৌজন্যে

গৌণ ইস্যুকে মুখ্য ইস্যু বানাতে গিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের মধ্যে সংশয়-সন্দেহের জন্ম দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে না, যাতে রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে পলাতক স্বৈরাচারের দোসররা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়।

আজ শুক্রবার রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে পেশাজীবীদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তারেক রহমান।

অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের হাতে এখনো রাষ্ট্র থেকে লুণ্ঠন করা, জনগণের পকেট থেকে লুণ্ঠন করা হাজার হাজার কোটি টাকা রয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ার অর্থ সারা দেশে ঘাপটি মেরে থাকা পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।

দীর্ঘ দেড় দশকের মাফিয়া শাসনকালে তরুণ প্রজন্মের প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটারসহ কেউ ভোট দিতে পারেনি বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, এসব ভোটারের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য সবার আগে প্রয়োজন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। নাগরিকেরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী না হলে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না।

সংস্কার ও নির্বাচনকে যেভাবে মুখোমুখি করা হচ্ছে, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক বলেও মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সংস্কার এবং নির্বাচনকে দৃশ্যত যেভাবে মুখোমুখি করে ফেলা হয়েছে, এটি নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। যাঁরা সংস্কার শেষ করার পর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছেন, তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, যেটি শেষ হয়ে যায়, সেটি সংস্কার নয়। কারণ, সংস্কার কখনো শেষ হয় না। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।’

তারেক রহমান বলেন, দেশের বর্তমান সংবিধান যেটিকে ইচ্ছেমতো কাটাছেঁড়া করে পতিত পলাতক স্বৈরাচার প্রায় তাদের দলীয় সংবিধানে পরিণত করে ফেলেছিল, সেই সংবিধানেও বলা আছে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জনপ্রতিনিধিদের জাতীয় সংসদ গঠিত হবে। সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকার পরও পলাতক ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে, সারা বিশ্ব দেখেছে, বারবার জনগণের ভোট ছাড়াই জাতীয় সংসদ গঠন করা হয়েছিল। পলাতক স্বৈরাচার সংবিধান মানেনি। তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে কেতাবি কিংবা পুঁথিগত সংস্কার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার এবং আচরণের ব্যবহারিক প্রয়োগ। জনগণের গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্য দিয়ে কেবল সংস্কার টেকসই, সফল এবং কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।

রাষ্ট্র এবং রাজনীতির ভালো-মন্দের অনেক কিছুই রাজনীতিবিদদের দেশপ্রেম ও রাষ্ট্র পরিচালনার নীতির ওপর নির্ভর করে বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন,এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সমাজে বিশিষ্ট নাগরিক ও পেশাজীবীদের ভূমিকা যত বেশি কার্যকর থাকে, রাজনৈতিক সরকারও তত বেশি দায়িত্বশীল এবং শক্তিশালী হয়। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিকে যদি একটি সুসংগঠিত সুসংঘবদ্ধ ঘরের ছাদের সঙ্গে আমরা তুলনা করি, তাহলে খুব সম্ভবত সিভিল সোসাইটি এবং পেশাজীবীরা হচ্ছেন সেই ঘরের খুঁটি বা পিলার। সুতরাং একটি রাষ্ট্রে রাজনীতিবিদ, সিভিল সোসাইটি এবং পেশাজীবীরা একে অপরের পরিপূরক।’

অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম ফায়েজ, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, সাংবাদিক এম এ আজিজ ও সৈয়দ আবদাল আহমেদ বক্তব্য দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের শিক্ষক, উলামা-মাশায়েখ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, কৃষিবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা বিএনপির ইফতারে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকতউল্লা, আবদুস সালাম, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, এ এম আবদুল হালিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।