ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা নতুন কিছু নয়। অনেক সময়েই দেখা গেছে, দলের চেয়েও নেতা-নেত্রীরাই বেশি পরিচিতি পেয়েছেন বা জনপ্রিয় হয়েছেন। তাঁদের ব্যক্তি ইমেজ বা প্রভাব-ক্ষমতা কখনো কখনো দলকেও ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমান সময়েও এ অঞ্চলের একাধিক দেশে এ রকম নেতা-নেত্রী রয়েছেন।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে গত ১৯ এপ্রিল লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়েছে। সাত দফার মধ্যে তিন দফার ভোট গ্রহণও হয়ে গেছে। নির্বাচনে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষ হলো ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ‘এনডিএ’ জোট এবং জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়া’ জোট।
এ নির্বাচনে বিজেপির একচ্ছত্র ‘মুখ’ হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ‘মোদি কি গ্যারান্টি’ নামে দলটির যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে দলের চেয়ে ব্যক্তি মোদিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে—এমন কথাও বলা হচ্ছে। (বিজেপি ইলেকশন ম্যানিফেস্টো ২০২৪ ফোকাসেস অন নরেন্দ্র মোদি, নট দ্য পার্টি, ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’, ১৭ এপ্রিল ২০২৪)
রাজনীতি যেহেতু দলের পাশাপাশি নেতার সঙ্গে নেতারও লড়াই, তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে—বিরোধী জোটের ‘মুখ’ কে? প্রশ্নটা বিরোধী জোট, বিশেষ করে কংগ্রেসের জন্য অনেক দিন ধরেই বেশ ‘অস্বস্তিকর’ ছিল।
গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে রাহুল গান্ধীই কংগ্রেসের প্রধান নেতা ও মুখ হিসেবে থাকবেন, অনেকে এমনটাই মনে করতেন। কিন্তু সেটা হয়নি; বরং ২০১৯ সালে নির্বাচনে পরাজয়ের পর তাঁকে নিয়ে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তিনি দলের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফাও দেন। সেই সময় অনেকেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের ‘শেষ’ দেখে ফেলেছিলেন। কিন্তু সেই দেখাই শেষ দেখা হলো না।
রাহুলের ‘ফিরে আসা’
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেই, নির্বাচনের আগে অনেকেই এমন ধারণা করেছিলেন। তাই নির্বাচনে জয়-পরাজয় নয়, বিজেপি দুই–তৃতীয়াংশ বা চার শতাধিক আসন পাবে কি না, কারও কারও কাছে সেটাই ছিল আলোচ্য বিষয়।
কিন্তু প্রথম দুই দফায় ভোটের হার কিছুটা কম থাকায় বিজেপি নেতাদের কপালে ‘চিন্তার ভাঁজ’ লক্ষ করা যায়। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর এক বক্তৃতায় এমন কিছু কথা বলেন, বিরোধীরা যেটাকে ‘মুসলিম জুজু’ এবং হিন্দু-মুসলমান বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন। (ইন্ডিয়া অপজিশন ক্রিটিকস মোদি ফর ‘হেট স্পিচ’, বিবিসি, ২২ এপ্রিল ২০২৪)
৭ মে তৃতীয় দফা ভোট গ্রহণের পর বিজেপির অস্বস্তি আরও বেড়ে যায়। বিভাজনের রাজনীতি খুব সম্ভবত আগের মতো কাজ করছে না, তাদের কাছে হয়তো এমনটা প্রতীয়মান হয়েছে।
এরপর ৮ মে তেলেঙ্গনায় এক সভায় রাহুলের উদ্দেশে মোদি বলেন, ‘কংগ্রেস শাহজাদা, গত পাঁচ বছর একটাই নাম জপে যাচ্ছেন। প্রথমে তিনি পাঁচজন শিল্পপতির কথা বলেছেন এবং তার পর থেকে আম্বানি-আদানি। কিন্তু নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে রাহুলের মুখে দুই শিল্পপতির নাম উধাও। আমি জনসাধারণকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, শাহজাদার প্রকাশ্যে বলা উচিত—কংগ্রেস আম্বানি-আদানির কাছ থেকে কত টাকা নিয়েছে? কত পরিমাণ কালোটাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে? নগদ ভরা টেম্পো কি কংগ্রেসের কাছে পৌঁছেছে? কী চুক্তি হয়েছে তাদের মধ্যে? রাতারাতি আম্বানি-আদানিকে গালি দেওয়া বন্ধ করলেন কেন?’ (প্রকাশ্যে মোদির মুখে আদানি-আম্বানি, সত্যিই কি ভোট আবহে রাহুলের আক্রমণের ঝাঁজ কমেছে?, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা, ৯ মে ২০২৪)
মোদির এমন বক্তব্যের জবাব দিতে দেরি করেননি রাহুল। তিনি বলেন, ‘নমস্কার মোদিজি। কিছুটা ঘাবড়ে গেছেন নাকি? সাধারণত আপনি বন্ধ ঘরে আদানিজি-আম্বানিজির কথা বলেন। এই প্রথম প্রকাশ্যে আদানি, আম্বানি বললেন। আর তাঁরা যে টেম্পো বোঝাই করে টাকা দেন, সেটাও আপনি জানেন? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা রয়েছে নাকি? এক কাজ করুন। সিবিআই-ইডিকে তাঁদের কাছে পাঠান। ঘাবড়ে না গিয়ে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করান।’ (আদানি-আম্বানিদের কাছে আপনার সিবিআই, ইডিকে পাঠান না! মোদির খোঁচার জবাব দিলেন রাহুল, আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন, ৮ মে ২০২৪)
মোদি ও রাহুলের এসব কথাবার্তাকে নিছকই ‘বাগ্যুদ্ধ’ মনে করলে এ ঘটনার তাৎপর্য পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হবে না। ভারতের দুই বড় ব্যবসায়ী আদানি ও আম্বানির সঙ্গে মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং তাঁদের বিরুদ্ধে রাহুলের লাগাতর অভিযোগ, এটা বেশ আলোচিত বিষয়। কিন্তু এর আগে মোদি কখনো আদানি-আম্বানি সম্পর্কে কিছুই বলেননি। তেলেঙ্গনার সভায় মোদি যা বলেছেন, তা যেন অনেকটা ‘নিজের দিকেই অস্ত্র তাক করা’।
কংগ্রেসের দাবি, রাহুলের চাপেই মোদিকে তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই শিল্পপতিকে নিশানা করতে হচ্ছে। আদানিদের চার্টার্ড বিমানে মোদির ছবি নিয়েও কংগ্রেস প্রচারে নেমেছে। দলীয় মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, ‘আগে কখনো প্রধানমন্ত্রীর এত দুর্বল ও মরিয়া ভাব দেখা যায়নি। তিনি নিজেই এখন বন্ধু শিল্পপতিদের কালোটাকার কথা বলছেন।’ (এত দিন আম্বানি-আদানির বিরুদ্ধে বলার পরে ভোট আসতেই কেন চুপ রাহুল? মোদির তোপে সায় নেই দলের, আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন, ১০ মে ২০২৪)
ভারতের একাধিক সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, আদানি-আম্বানি ইস্যুতে মোদি আসলে রাহুলের রাজনৈতিক কৌশলে বেকায়দায় পড়ে গেছেন। পরিহাস হলো, মোদিসহ বিজেপির একাধিক নেতা রাহুলকে বিভিন্ন সময় ‘পাপ্পু’ (অপরিণত) বলে তাচ্ছিল্য করেছেন। সেই রাহুলই ‘অজেয়-অদম্য’ ভাবমূর্তির মোদিকে বেকায়দায় ফেললেন!
বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতে লক্ষণীয়ভাবে ‘হেট স্পিচ’ বা ঘৃণাভাষণ বেড়ে গেছে। রাহুল এই ঘৃণার বিরুদ্ধে লাগাতার বলে যাচ্ছেন। তাঁর দাবি, তিনি ‘ঘৃণার বদলে ভালোবাসার দোকান’ খুলতে চান। কয়েক বছর ধরে তিনি তাঁর বক্তৃতায় ‘ঘৃণা’, ‘ভালোবাসা’ শব্দগুলো বেশি বেশি ব্যবহার করছেন। সহজেই বোঝা যায়, এর মাধ্যমে তিনি বিজেপির ‘বিভাজনের রাজনীতি’কে টার্গেট করেছেন।
বিতর্কের জন্য প্রস্তুত রাহুল, মোদি কেন নিশ্চুপ
সম্প্রতি ভারতের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি মোদি ও রাহুলকে প্রকাশ্য বিতর্ক সভায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। চিঠির উত্তরে রাহুল বলেছেন, তিনি প্রস্তুত। যেকোনো দিন যেকোনো স্থানে তিনি উপস্থিত থাকবেন। রাহুল আরও বলেন, ‘...কিন্তু জানি, মোদিজি প্রস্তুত নন। উনি কোনো দিনই আমার সঙ্গে বিতর্কে অংশ নেবেন না।’ (কেজরিওয়ালের মুক্তি সত্যিই কি ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে সুবিধা দেবে, প্রথম আলো, ১১ মে ২০২৪)
রাহুলের কথা সম্ভবত সত্যি হতে যাচ্ছে। মোদি সেই চিঠির জবাবই দেননি। তিনি এই বিতর্কে অংশ নেবেন, এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
এর আগে মোদি কংগ্রেসের ইশতেহার নিয়ে সরব হয়ে অভিযোগ করেছিলেন, হাত চিহ্নের পার্টি ক্ষমতায় এলে দেশের সম্পদ মুসলিমদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে। মোদির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে তাঁকে চিঠি দিয়ে মুখোমুখি আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। মোদি সেই চিঠিরও জবাব দেননি। (মোদিকে মুখোমুখি বিতর্কে আহ্বান রাহুলের, বললেন, আমি তৈরি, মোদিজি রাজি হবেন না, দ্য ওয়াল, ১১ মে ২০২৪)
বিতর্কে অংশ নেওয়া কিংবা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে মোদির অনীহার বিষয়টি বহুল আলোচিত। গত ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তিনি এমন কোনো সংবাদ সম্মেলন করেননি, যেখানে সাংবাদিকেরা তাঁকে প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েছেন। কিছু কিছু সংবাদমাধ্যমে তিনি সাক্ষাৎকার দেন বটে, সেটাও বাছাই করা। এবারও নির্বাচনের আগে তিনি এ রকম কিছু সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সমালোচকরা বলছেন, এসব অনুষ্ঠানে প্রশ্নের বদলে প্রশস্তিই ছিল বেশি।
অপর দিকে রাহুল গান্ধী নেতা হওয়ার মতো যথেষ্ট যোগ্য কি না, তাঁর সমালোচকেরা বহুবার এ রকম প্রশ্ন তুলেছেন। শুধু তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, ‘গোদি মিডিয়া’র (মোদির সমর্থক সংবাদমাধ্যম) পক্ষ থেকে বিভিন্ন উপলক্ষে এ রকম প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাস্তবতা বা নির্মোহ আলোচনার চেয়ে তাদের মধ্যে রাজনৈতিক পক্ষপাতের বিষয়টি লক্ষ করা গেছে।
রাহুল যেখানে অন্যদের চেয়ে আলাদা
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, গান্ধী পরিবারের উত্তরাধিকার হওয়া সত্ত্বেও উপমহাদেশের ‘ট্র্যাডিশনাল’ রাজনীতিকদের চেয়ে রাহুল খানিকটা আলাদা। এ অঞ্চলে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের সম্পর্কে জনমনে যে ধারণা তৈরি হয়েছে, তা হলো তাঁরা হবেন অন্যদের চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান বা শক্তিশালী, এককভাবে নেতৃত্ব দিতে অভ্যস্ত, ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে এবং সর্বোপরি ‘জনতুষ্টিবাদী’।
কিন্তু রাহুলের ক্ষেত্রে এসব বৈশিষ্ট্যের চেয়ে সংবেদনশীলতা, যৌথ নেতৃত্ব এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের কথাকে গুরুত্ব দিতে দেখা গেছে। নির্বাচন উপলক্ষে রাহুল তাঁর বক্তৃতায় নিয়মিতভাবে সংখ্যালঘু মুসলিম, দলিত ও আদিবাসীদের পক্ষে কথা বলেছেন।
রাজনীতিকদের মধ্যে আত্মসমালোচনা বা ভুল স্বীকার করার বিষয়টি প্রায় দেখাই যায় না। এ রকম বিষয়গুলোকে তাঁরা নিজেদের বা দলের দুর্বলতার প্রকাশ এবং ইমেজের জন্য ক্ষতিকর মনে করেন। এ ক্ষেত্রে রাহুল গান্ধী একজন ব্যতিক্রমী রাজনীতিক। তিনি একাধিকবার ভুল স্বীকার করেছেন। সম্প্রতি লক্ষ্ণৌতে তিনি বলেছেন, ‘...আমি এটাও বলতে চাই যে কংগ্রেস পার্টিও ভুল করেছে এবং কংগ্রেস পার্টিতে থেকেই আমি এ কথাটি বলছি।’ (কংগ্রেস পার্টি হ্যাজ অলসো মেড মিসটেকস: রাহুল গান্ধী ইন লক্ষ্ণৌ, টাইমস অব ইন্ডিয়া, ১০ মে ২০২৪)
এবারই প্রথম নয়, এর আগেও তিনি এ রকম দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। সত্তরের দশকে ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ভারতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। এ সিদ্ধান্তকে কংগ্রেসের একটি ভুল হিসেবে স্বীকার করে এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন রাহুল। এটা খুব মামুলি ঘটনা নয়। কারণ, ইন্দিরা শুধু রাহুলের পিতামহী নন, ‘আয়রন লেডি’ হিসেবে খ্যাত ভারতের অন্যতম সফল প্রধানমন্ত্রীও বটে। কিন্তু এ রকম একজন মানুষও যে ভুল করতে পারেন, তাঁর পারিবারিক ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হওয়া সত্ত্বেও রাহুল সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন।
রাহুলের এ ধরনের কথা–কাজ উপমহাদেশের মূলধারার রাজনীতিতে বিরল। লক্ষণীয় হলো, এসব কথার জন্য তিনি প্রশংসিত হওয়ার চেয়ে সমালোচনার শিকার হয়েছেন বেশি। বিরোধীরা বলেছেন, তাঁর আত্মবিশ্বাস কম। অন্যদিকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলেছেন, তিনি যথেষ্ট ‘আক্রমণাত্মক’ নন।
তবে গত তিন-চার বছরে রাহুল নিজেকে অনেকটাই বদলে ফেলেছেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি বেশ ‘চাঁছাছোলা’ ভাষায় কথা বলছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আদানি-আম্বানি ইস্যুতে তিনি যেভাবে মোদিকে বেকায়দায় ফেললেন এবং পাল্টা জবাব দিলেন, তাতে রাহুলকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে।
সম্প্রতি এক বক্তৃতায় রাহুল বলেছেন, তাঁর এই বদলে যাওয়ার পেছনে কাজ করেছে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’। তাঁর মতে, এ কর্মসূচিতে তিনি ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলেন এবং খুব কাছ থেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছিলেন। এ ঘটনা রাজনীতি নিয়ে তাঁর ধারণা অনেকটাই বদলে দিয়েছে।
‘ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসার রাজনীতি’ কি জয়ী হবে
বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতে লক্ষণীয়ভাবে ‘হেট স্পিচ’ বা ঘৃণাভাষণ বেড়ে গেছে। রাহুল এই ঘৃণার বিরুদ্ধে লাগাতার বলে যাচ্ছেন। তাঁর দাবি, তিনি ‘ঘৃণার বদলে ভালোবাসার দোকান’ খুলতে চান। কয়েক বছর ধরে তিনি তাঁর বক্তৃতায় ‘ঘৃণা’, ‘ভালোবাসা’ শব্দগুলো বেশি বেশি ব্যবহার করছেন। সহজেই বোঝা যায়, এর মাধ্যমে তিনি বিজেপির ‘বিভাজনের রাজনীতি’কে টার্গেট করেছেন। গত বছর কর্ণাটকের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর রাহুল বলেছিলেন, ‘ঘৃণার বাজার বন্ধ হয়ে গেল, খুলে গেছে ভালোবাসার দোকান।’ এবার লোকসভা নির্বাচনের পরও তিনি সম্ভবত একই কথা বলতে চাইবেন।
বদলে যাওয়া রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, সেটা এখনই বলা যাচ্ছেনা। কিন্তু রাহুল রাজনীতিতে যে পরিবর্তনের কথাগুলো বলছেন, সেটা বর্তমান ভারত এবং বৃহত্তর অর্থে দক্ষিণ এশিয়ায় খুবই প্রাসঙ্গিক। ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতি এ অঞ্চলের সমাজ ও মানুষকে নানাভাবে ক্ষতবিক্ষত করে চলছে।
আকার-আয়তন, জনসংখ্যার দিক থেকে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী দেশ। সেখানে ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতির দাপট থাকলে পুরো অঞ্চলেই তার প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে ভারতে এর অবসান হলে বা কমলে সেটার ইতিবাচক প্রভাব অন্য দেশগুলোতেও পড়বে। এ রকম অবস্থায় রাহুল গান্ধী ‘ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসার রাজনীতি’র যে বার্তা দিচ্ছেন, সেটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
এবারের নির্বাচনে রাহুল তাঁর দলকে জয়ী করতে পারবেন কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু তিনি যে কথা বলে রাজনৈতিক লড়াই করছেন, সেটা অনেকের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে। কারণ, ঘৃণার বিরুদ্ধে ঘৃণা নয়, ভালোবাসাই সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র।
মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক