যে ১৪ অভ্যাস অজান্তেই আপনার এনার্জি শুষে নিচ্ছে

প্রতিনিয়ত আপনি আপনার নিজের সেরা ভার্সন হয়ে উঠতে চান। প্রতিদিন কামনা করেন জীবন থেকে নেতিবাচকতা কমিয়ে সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশ করতে। ঘুম থেকে উঠে দিনটাকে কর্মমুখী, আনন্দ ও স্মৃতিময় করার ইচ্ছাও আপনার থাকে। চেষ্টা থাকে অযাচিত, অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটলে, সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোতে। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার পাশাপাশি আরেকটু ভালোভাবে বাঁচতে চাওয়াও আপনার একান্ত কাম্য। আর এই যাত্রায় সবচেয়ে বড় বাধা আপনার এমন কিছু অভ্যাস, যেসব প্রতিনিয়ত আপনাকে পেছনে টেনে ধরে, এনার্জি শুষে নেয়। আপনাকে নেতিবাচকতা আর হতাশার দুষ্টচক্রে ছুড়ে ফেলে। কী সেসব? সমাধানের উপায়ই–বা কী?

এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা প্রতিনিয়ত আপনাকে পেছনে টেনে ধরে, এনার্জি শুষে নেয়মডেল: সুলতানা। ছবি: কবির হোসেন

১. যেকোনো বিষয় ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া

আপনিও কি সেই দলে, যাঁরা প্রতিনিয়ত অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের সময় শব্দ, বাক্যগুলোকে ব্যক্তিগতভাবে নেয়? উল্টো দিকের ব্যক্তিটি আপনার সম্পর্কে কী ভাবল, কী বলল, আপনি যদি প্রতিনিয়ত তা বিশ্লেষণ করতে থাকেন, তাহলে আপনি অযথাই আপনার জীবনে স্ট্রেসকে দাওয়াত দিয়ে আনছেন!

প্রথমত, আপনি নিজে ছাড়া আপনাকে নিয়ে কেউ এত ভাবছে না। কারও বিশেষ কিছু আসে–যায় না। আপনাকে যে সবচেয়ে বেশি ‘জাজ’ করছে, সেই মানুষটা আপনি নিজে হবেন না। দ্বিতীয়ত, কে আপনাকে নিয়ে কী মনে করল, তাতে সত্যিই কিছু আসে–যায়? বরং নিজের ভালো থাকাই আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া জরুরি।

২. অতীত নিয়ে পড়ে থাকা

কে কবে আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে, সেসব আপনি মনের ভেতর পুষে রেখেছেন? মনে রাখবেন, এতে পৃথিবীর কারও কিছু আসছে-যাচ্ছে না। একমাত্র যাঁর ক্ষতি হচ্ছে, সে আর কেউ নয়, আপনি নিজে। আপনি বর্তমানে, ইতিবাচকতায় ফোকাস করতে পারছেন না। আপনি নিজের আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন। যা ঘটে গেছে, সেসব চলে যেতে দিন। ক্ষমা করুন। সামনে এগোন।

৩. প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চেক করতে থাকা

এসব কাজের জন্য দিনের নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখুন। ই–মেইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বার্তা অথবা নোটিফিকেশনকে আপনার সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে দিন।

৪. প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তা করা

ছোটখাটো বিষয়, মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবার ফলে আপনি বিচ্যুত হচ্ছেন জীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে। আর সেই মূল লক্ষ্য হলো ভালো থাকা। একটা ভালো জীবন যাপন করা।

আরও পড়ুন

৫. চারপাশে কেবল সমস্যা আর সমস্যা?

জীবনের সমস্যার ওপর থেকে আপনার মনোযোগ বা নজর সরছেই না। আপনি সমস্যার সাগরে ভাসছেন? চোখের সামনে সমস্যা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না? তাহলে প্রকৃত সমস্যা আপনি নিজেই। এর ফলে আপনি নিজের ও আশপাশের সব মানুষের ইতিবাচক এনার্জি শুষে নিচ্ছেন। সমাধানের ওপর নজর দিন। ইতিবাচকতার শক্তিকে উদ্‌যাপন করুন।

৭. অতিরিক্ত ঘুম

বেশি ঘুমালেই আপনি বেশি এনার্জি পাবেন, বিষয়টি ঠিক নয়। বরং অতিরিক্ত ঘুম আপনার এনার্জি শুষে নেয়। আপনাকে অলস বানিয়ে ফেলে। ৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম যথেষ্ট।

৮. খাদ্যাভ্যাসের দফারফা

দিন শেষে সেই আপ্তবাক্যটাই সত্য, ‘আপনি তা–ই, যা আপনি খান’। আপনি টাটকা, স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে সুস্থ থাকবেন, বার্ধক্যের গতিকে ধীর করে দিতে পারবেন। আর যদি অতিরিক্ত চিনি, ভাজাপোড়া, অস্বাস্থ্যকর ও অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার খান, তাহলে আপনার ভালো না থাকার দায়ভার আপনাকেই নিতে হবে।

৯. অভিযোগ

কোনো মানুষ পরিণত হয়েছে কি না, তা বোঝার একটা উপায় আছে। কেউ যদি প্রতিনিয়ত জীবনসঙ্গী, বন্ধু, সহকর্মী, সন্তান, মা–বাবা, কর্মক্ষেত্র—সবকিছু নিয়ে অভিযোগ করেন, অভিযোগ করতেই থাকে, তাহলে মূল সমস্যা ওই ব্যক্তি নিজেই। তাকে ‘ইমম্যাচিউর’ ট্যাগ দেওয়াই যায়। বরং যা কিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে আছে, সেসবে মন দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

১০. আপনি কি নিজের জীবনের যাত্রী

আপনি নিজের জীবনের ‘ড্রাইভার’ বা চালক হোন। মানে আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো আপনিই নিন। তাহলে নিজের অবস্থার জন্য অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর কোনো সুযোগই থাকবে না। বরং আপনি যেমন, যে অবস্থায় আছেন, তেমনভাবেই নিজেকে মেনে নিতে, গ্রহণ করতে পারবেন। এর ফলে আপনি নিজেকে ‘ভিকটিম’ বা পরিস্থিতির শিকার বানানো থেকেও বেঁচে যাবেন।

আরও পড়ুন

১১. পরচর্চা

অন্যদের নিয়ে আলাপ, সমালোচনা করার মাধ্যমে আপনি আসলে নিজেকেই অসম্মানিত করলেন। পরোক্ষভাবে নিজের চেয়ে অন্যকে গুরুত্ব দিলেন। নিজের গুরুত্বপূর্ণ সময়, মনোযোগ, এনার্জি অযথাই খরচ করলেন।

১২. ড্রামা

যেকোনো পরিস্থিতিতে ‘ড্রামা’ বা ‘সিনপাট’ এড়িয়ে কীভাবে সেটি কাটিয়ে উঠে সামনে এগোনো যায়, সেদিকে মন দিন। ‘ড্রামা কিং’ বা ‘ড্রামা কুইন’ হয়ে আপনি আদতে নিজের এনার্জির অপচয় করছেন। আপনি যে নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী নন, সেটিই ফুটে উঠছে। কেননা ড্রামার ভেতর দিয়ে নিজের অজান্তেই আপনি আসলে অন্যের মনোযোগ চাইছেন।

১৩. অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক

এমন মানুষদের আপনার আশপাশে রাখুন, যাঁরা আপনাকে ইতিবাচক এনার্জি দেয়। আপনাকে উদ্‌যাপন করে আর তুলে ধরে। টক্সিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার দায় আপনার না থাকলেও আপনি ওই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখলে দায়ভার আপনার ওপরেই বর্তায়।

১৪. অন্যকে খুশি করে বাঁচা

আপনি কি নিজেকে নিয়ে খুশি? গর্বিত? আপনি নিজেকে নিজে খুশি করে বেঁচে থাকুন। নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন।

সূত্র: ফোর্বস

আরও পড়ুন