মাত্র ১ দিন একাকিত্বে ভুগলে কী হয়, জানেন?
করোনা মহামারিকালের পর ২০২২ সালের অক্টোবরে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) একাকিত্বকে বিশ্বব্যাপী জনগণের স্বাস্থের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রশ্ন হলো, একাকিত্ব মানুষের জন্য কতটা ক্ষতিকর?
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে ভয়াবহ তথ্য। মাত্র ১ দিন একাকিত্বে ভোগার ফলে মস্তিষ্কে যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, তা দিনে ১৫টি সিগারেট খাওয়ার সমান! এ ছাড়া বয়স্কদের গড় আয়ু কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ এটি। অসামাজিক জীবনযাপনের ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে ২৯ শতাংশ, স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ৩২ শতাংশ। একাকিত্ব ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায় ৫০ শতাংশ।
এই গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, যাঁরা পরিবার ও সমাজ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন রাখেন, তাঁদের উদ্বেগ, বিষণ্নতা, হ্যালুসিনেশন, প্যানিক অ্যাটাকের মতো মানসিক সমস্যায় ভোগার হার অনেক বেশি।
মূলত করোনা মহামারিকালের পর থেকেই একাকিত্ব মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে কী প্রভাব ফেলে, সে বিষয়ে গবেষণার গুরুত্ব বেড়েছে। আর এই নেতিবাচক প্রভাব পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষের জন্য একই। উত্তর আমেরিকায় একাকিত্বে ভোগার হার সর্বোচ্চ, ১৫ শতাংশ। এঁদের বেশির ভাগের বয়স ষাটের বেশি। আফ্রিকায় এই হার ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। এদিকে জরিপ অনুসারে, সবচেয়ে কম একাকিত্বে ভুগছে ইউরোপের মানুষ। তাঁদের ক্ষেত্রে এই হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
যেসব তরুণ কলেজজীবনে একাকিত্বে ভুগেছেন, তাঁদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে ঝরে পড়ার হার অনেক বেশি। চাকরিজীবনেও তাঁদের খুব কমই সফলতার দেখা পান। তরুণেরা একাকিত্বে ভোগার ফলে তা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
তবে বিশেষজ্ঞরা এ-ও বলেছেন, একা থাকা আর একাকিত্বে ভোগা দুটি আলাদা বিষয়। একা থাকা সমস্যা নয়, বরং একাকিত্বে ভোগা ঝুঁকিপূর্ণ। একা থেকে আপনি যদি সময়টা উপভোগ করেন, সৃজনশীল কাজে ব্যয় করেন, বই, প্রকৃতি, পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটান, স্বাস্থ্যকর জীবন কাটান, জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ থেকে বিরতি নিয়ে পেছনে ফিরে তাকান বা ‘রিফ্লেক্ট করেন’, জ্ঞানী ও বিজ্ঞ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় থাকেন, নিজের সত্যিকারের স্বাধীনতা উপভোগ করেন, তাহলে তা বরং আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান