বিষণ্নতাসংক্রান্ত এই ভ্রান্ত ধারণাগুলো আপনার মধ্যেও আছে?
মন খারাপ যে কারোরই হতে পারে, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে মন খারাপ কখন বিষণ্নতার দিকে যাচ্ছে, তা বোঝাটা জরুরি। আর বিষণ্নতা কোনো লজ্জার বিষয় নয়। কারও ‘দোষ’ও নয়। এটি একটি মানসিক রোগ, যার আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে।
তবে আক্রান্ত অনেকে মনে করেন, বিষণ্নতা জিন–পরি বা কালোজাদুর মাধ্যমে হয়। এ ছাড়া অনেকে মনে করেন, প্রতিহিংসাবশত তাবিজ-কবজ করে কাউকে বিষণ্নতায় আক্রান্ত করা যায়। যদিও এসবের কোনো বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
বিষণ্নতা প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় যেসব ওষুধ ব্যবহৃত হয়, অনেকে বলে থাকেন, সেগুলো মূলত ঘুমের ওষুধ, যা দীর্ঘদিন খেলে রোগী এই ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়তে পারেন। এ ছাড়া কারও কারও কাছে শোনা যায়, বিষণ্নতার ওষুধে রোগীর লিভার, কিডনি ও হার্টের গুরুতর ক্ষতিসাধন করতে পারে—এগুলোও সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বিষণ্নতার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলো মূলত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গ্রুপের ওষুধ (টিসিএ, এসএসআরআই), বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই নির্দিষ্ট মাত্রায় দীর্ঘদিন যা সেবন করা যায়।
চিকিৎসা
বিষণ্নতায় ভুগলেই যে ওষুধ সেবনের প্রয়োজন পড়ে, তা–ও কিন্তু নয়। চিকিৎসক রোগের প্রকৃত অবস্থা নির্ণয় করে কেবল সাইকোথেরাপির নির্দেশনাও দিতে পারেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্যম ও গুরুতর বিষণ্নতায় অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ ও সাইকোথেরাপির সমন্বয়ে চিকিৎসা নিলে খুব দ্রুত ফল পাওয়া যায়। এখানে একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, ওষুধ শুরু করার প্রথম সপ্তাহেই রোগীর মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায় না, সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে কার্যকারিতা শুরু হয়।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, চিকিৎসকের পরামর্শমতো কিছুদিন ওষুধ সেবনের পর অথবা সাইকোথেরাপিস্টের সঙ্গে কাউন্সেলিং অথবা টক থেরাপি সেশনে অংশগ্রহণের পর রোগী যখন ভালো বোধ করেন বা রোগের উপসর্গ কমে যায়, তখন রোগী বা তাঁর আত্মীয়স্বজন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ বন্ধ করে দেন কিংবা সাইকোথেরাপি সেশনে আর অংশ নেন না। ফলে রোগীর চিকিৎসা ঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। কিছুদিন পর রোগীর উপসর্গ ফিরে আসে।
বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। যেমন যা মনকে বিষণ্ন করে বা মানসিক চাপ বাড়িয়ে তোলে, এমন কথা বা কাজ এড়িয়ে চলতে হবে।
বিষণ্নতার সময় বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করা ভালো।
সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে, তবে বেশি ঘুম ভালো নয়।
সুস্থ-স্বাভাবিক সম্পর্কগুলোর চর্চা করতে হবে।
মাদকাসক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে।
রুটিনমাফিক শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপন করতে হবে।
গ্যাজেটনির্ভরতা কমিয়ে বাস্তব জীবনে একে অন্যের সত্যিকারের কাছের মানুষ হয়ে উঠতে হবে।
পরিবার–পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে খেলাধুলা ও নির্মল আড্ডা দিয়ে বর্তমান সময়কে উপভোগ করুন।
সব সময় কাজের মধ্যে না থেকে কিছুটা সময় কাজ থেকে ছুটি নিন। অবসর উপভোগ করুন।
অধ্যাপক ডা. অভ্র দাশ ভৌমিক, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ