বয়স ৫০, মেজাজ হয়ে গেছে খিটখিটে স্বভাবের; কী করব?

৫০ বছরেরও আছে আলাদা সৌন্দর্য।মডেল হয়েছেন উল্কা হোসেন। ছবি: সুমন ইউসুফ

বয়স ৪০ হলেই যেন ধাক্কা খায় মন। সেটা মেনে নিতে না নিতেই কখন জানি বয়সটা হয়ে যায় ৫০। নারীদের জন্য এটা একটা বিশেষ সময়। মেনোপজের কারণে শরীরে দেখা দেয় নানা পরিবর্তন। বদলে যায় মেজাজ, খিটখিটে স্বভাবের সঙ্গে যোগ হয় ত্বকের নানা সমস্যা। জীবনের অর্ধশত বছরে এসে বিষণ্ন হয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে মনে রাখতে হবে, প্রতিটি বয়সের আছে আলাদা সৌন্দর্য।

সময়মতো ওষুধ খেতে হবে
ছবি: সুমন ইউসুফ

আর জীবনের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়েছে। এখন ৫০ হলো নতুন ৩০। তাই এই বয়সে এলেই যে স্বপ্নগুলোকে ভুলে যেতে হবে, বিষয়টি একদমই সে রকম নয়। এই বয়সে সুস্থ থাকা এবং রাখার ওপর জোর দিয়ে নানা ধরনের পরামর্শ দিলেন আয়ুর্বেদ রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা এবং পারসোনা হেলথের ডায়েটিশিয়ান ও ইনচার্জ শওকত আরা সাঈদা।

খাবারের বিধিনিষেধ

৫০–কে ৫০–এর মতো করেই নিতে হবে। কারণ, এই বয়সে এসে চাইলেও ত্বকের চামড়া টান টান থাকবে না। গলায় ভাঁজও কমে যাবে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যায়াম করা যাবে না। ইচ্ছা করলেই রাত ১০টার পর বার্গার খাওয়াও যাবে না। তবে চাইলে সুস্থ থাকতে পারবেন। মানতে হবে ছোটখাটো কিছু বিষয়। খাবারের বিষয়টিই ধরুন। মেনোপজের কারণে অনেকেরই হট ফ্লাশ হয়। এ কারণে এ সময় ঝাল খাবার এড়িয়ে চললেই ভালো। সকালে বেশি খেতে হবে, দুপুরে তুলনামূলক কম, রাতে একদমই অল্প। খুব বেশি আমিষ আছে, এমন কিছু না খাওয়াই ভালো। দুধও অনেকের হজম হয় না। অস্বস্তি তৈরি হয়। সবজি, ফল, পানি পানে কর্মশক্তি পাওয়া যাবে।

ফল খেলে কর্মশক্তি পাওয়া যাবে
ছবি: সুমন ইউসুফ

রাতে খেয়েই ঘুমিয়ে পড়া যাবে না। আটটার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করতে চেষ্টা করুন। এই বয়সে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। এ কারণে সময়মতো ওষুধ খেতে হবে। মনে না থাকলে মুঠোফোনে টাইমার সেট করে রাখতে পারেন। ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ফিশ অয়েল, কোলাজেন, ওমেগা–৩ ট্যাবলেট খাওয়া উচিত। চাইলেও খাবার থেকে এসব পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাবে না। পেটের জন্য প্রোবায়োটিক খাওয়া যেতে পারে। মেনোপজের বিষয়টি মেনে নিতে হবে। পরিবারের বাকিরা এ সময় সহযোগিতা করলে যাত্রাটা সহজ হবে।

ব্যায়াম করব, নাকি করব না

নিয়মিত ব্যায়াম করা দরকার। মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখার পাশাপাশি ব্যায়াম পেশি বানাবে এবং ক্ষয় রোধ করবে। ৪০–এর পর থেকেই নারীদের পেশি ক্ষয় হতে শুরু করে। ক্রনিক রোগ ও মেনোপজের সমস্যা সমাধানেও কাজ করে। মনোযোগ বাড়াবে। বাড়াবে হাড়ের শক্তি।

সব বয়সেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। ৫০ হয়ে গেলে সেদিকে আরও বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে। ব্যায়ামের অভ্যাস থাকলে ভালো। না হলে করে ফেলুন। দিনের কাজগুলো এমনভাবে ভাগ করুন, যেন ব্যায়াম কোনোভাবেই বাদ না পড়ে। শরীরচর্চার জন্য লক্ষ্য থাকুক ৬ দিন, কমপক্ষে ৪ দিন। যাঁরা শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন, সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করতে পারবেন।

বাড়িতেও চেষ্টা করুন নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে
ছবি: সুমন ইউসুফ

হাড়ের ব্যথা থাকলে যোগব্যায়াম সহায়তা করবে। যোগের কিছু নির্দিষ্ট আসন অনেকটাই কমিয়ে আনবে পা, ঘাড়, পিঠের ব্যথা। শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ৩০ থেকে ৫০ মিনিট কার্ডিও করতে পারেন। তবে অভ্যাস না থাকলে খোলা জায়গায় হাঁটার মধ্য দিয়ে ব্যায়ামের যাত্রা শুরু হোক। ঘাম ঝরবে, এমনভাবে হাঁটতে হবে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। পাশাপাশি পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে ফ্রি হ্যান্ড করুন। এ বয়সের জন্য সাঁতার কাটা বেশ ভালো। হাঁটার জুতা কেনার সময় খেয়াল রাখুন, নিচে যেন

কার্ভ থাকে। পোশাকটাও যেন আরামদায়ক হয়। অন্য সময় মেডিসিন শু পরতে পারেন। পায়ের জন্য আরামদায়ক হবে। ব্যায়ামে কোনো পরিবর্তন আনতে চাইলে কিংবা প্রথমবারের মতো জিমে ভর্তি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বাড়িতে যখন থাকবেন, চেষ্টা করুন ব্যস্ত থাকতে। ঘর গোছানো, পরিষ্কার করা, রান্না করা ইত্যাদি কাজগুলো করলেও শরীর আর মন ভালো থাকবে।

ত্বকের জন্য কী করবেন

এই বয়সে ত্বকের টান টান ভাব চলে যাবে। সেটা ঠেকানোর জন্য বোটক্স নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিষয়টি মেনে নিতে হবে। এ সময় শরীরের ক্ষয় হয় বেশি, চামড়াও পাতলা হয়ে যায়।

সপ্তাহে একদিন লাগাতে পারেন ঘরোয়া প্যাক
ছবি: সুমন ইউসুফ

ত্বক পরিষ্কারের জন্য বাইরের ফেসওয়াশ ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে পারেন। চেহারায় খাওয়ার নারকেল তেল মালিশ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই ত্বক পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ ছাড়া গুঁড়া দুধ ২ টেবিল চামচ, ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে ক্রিমের মতো মিশ্রণ তৈরি করতে পারেন। মিশ্রণটি বানানোর সময় চামচ ব্যবহার আবশ্যক। এটি ব্যবহারে দুটি কাজ হবে, ত্বক আর্দ্রতা পাবে এবং ময়লা বের হয়ে আসবে। দুধ যোগ করতে না চাইলে সমপরিমাণ দই দিতে পারেন। ত্বকে স্ক্রাব ব্যবহার করা যাবে না। ত্বকে ক্রিম লাগাতে হবে নিয়মিত।

সপ্তাহে এক দিন প্যাক লাগাতে পারেন। দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকায় ডিমের কুসুম। সঙ্গে একটু গোলাপজল আর ১ চা-চামচ সয়াবিনের গুঁড়া মিশিয়ে নিন। ব্যস, আর কিছুর দরকার নেই বলে জানালেন রাহিমা সুলতানা। এটা লাগালে একটু পরই টান টান হয়ে যাবে ত্বক। লাগানোর পর কথা বলা যাবে না। প্রতি সপ্তাহে করতে পারলে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।