মেডিটেশন বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি এবং এর সুফল সম্পর্কে জানাতে ২১ মে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস হিসেবে পালিত হয়। এ উপলক্ষে প্রথম আলো আয়োজন করে এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘নিয়মিত মেডিটেশন সুস্থ সফল সুখী জীবন। বিশ্ব মেডিটেশন দিবস ২০২১’।
অনুষ্ঠানটিতে মেডিটেশনের নানা দিক তুলে ধরেন আলোচকেরা। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মোমেন্টিয়ার এম রেজাউল হাসান এই অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রিভ গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এই অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন ডা. আহমেদ মর্তুজা চৌধুরী, শিশুবিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক, শিশু বিভাগ, এম আর খান শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ; ডা. আয়শা হান্না, বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক, প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল; ডা. হাসনাইন নান্না, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক, কার্ডিওলজি বিভাগ, খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ, সিরাজগঞ্জ ও কাউন্সিলর, কোয়ান্টাম হার্ট ক্লাব; ডা. জহিরউদ্দিন আহমেদ, কনসালট্যান্ট, সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্ট, ইউনাইটেড হাসপাতাল এবং ডা. হাবীব জালালউদ্দিন আহমেদ, আর্ডেন্টিয়ার, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন।
অনুষ্ঠানটি ২১ মে প্রথম আলো ও এসকেএফের ফেসবুক পেজ থেকেও সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের আর্ডেন্টিয়ার ডা. হাবীব জালালউদ্দিন আহমেদ মেডিটেশন কী এবং কেন এটি প্রয়োজন, এ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ সুস্থতার জন্য মানসিকভাবেও সুস্থ থাকতে হবে। সাধারণত শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেই আমরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই।
কিন্তু মানসিকভাবে কেন সুস্থ থাকতে হবে এ নিয়েও তিনি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত নানা গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন। যেখান থেকে সহজেই বুঝতে পারা যায়, কেউ যদি নিয়মিত মেডিটেশন করে, তাহলে সে সুস্থ সফল সুখী জীবনের অধিকারী হবেই এবং সে অনেকগুলো সমস্যা থেকেও দূরে সরে আসবে। যেমন ঘুম, দুশ্চিন্তা, মাইগ্রেইন, উদ্যোগ ইত্যাদি থেকে মুক্তি পেতে পারে। এ ছাড়া নানা ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থেকেও রেহাই পাবে। এ জন্য আমি বলতে পারি নিয়মিত একবার বা দুবার মেডিটেশন করলে সুস্থ সফল সুখী জীবন পেতে পারে।’
এরপর অধ্যাপক ডা. আহমেদ মর্তুজা চৌধুরী বলেন, ‘করোনার সময় আমরা দেখছি মানুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভয়, উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা, একাকিত্বে মানুষ বেশি ভুগছে। অনেকে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। বলা যায়, এখন পর্যন্ত এমন কোনো ওষুধ তৈরি হয়নি, যা দিয়ে মানসিক শক্তি বাড়ানো যায়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে মেডিটেশনের বিকল্প নেই।
এমনকি মেডিটেশনের মাধ্যমে আমাদের জিনও পরিবর্তিত হয়, যার ফলে সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধ করা সম্ভব। যেকোনো ধরনের জীবাণু ধ্বংসের ক্ষমতা বাড়ানো যায়। সুতরাং বলা যায়, মেডিটেশনের মাধ্যমে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আর যাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে, তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অনেক বেশি থাকে, যা এই করোনার সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসনাইন নান্না আলোচনা করেন হৃদরোগে মেডিটেশনের ভূমিকা নিয়ে। শুরুতেই তিনি বলেন, মেডিটেশন হচ্ছে মনের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় মেডিটেশনের তিনটি প্রধান সুফল উল্লেখ করেছে, এক. হার্টরেট স্বাভাবিক থাকা, দুই. মেন্টাল স্ট্রেস কমে যায় এবং তিন. উচ্চ রক্তচাপ কমে ও হার্ট নিয়ন্ত্রিত থাকে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা এর দুই বা তিন মাস আগে কোনো না কোনো সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পারিবারিক বিষয়ে মানসিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। সুতরাং বলা যায়, মানসিকভাবে ভালো থাকলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
কনসালট্যান্ট ডা. জহিরউদ্দিন আহমেদ আলোচনা করেন সাইকোসোম্যাটিক ডিসঅর্ডার নিয়ে। সাইকোসোম্যাটিক হচ্ছে মনের ও দেহের সন্নিবেশে কোনো রোগ। যেমন মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, হাত–পা ঘেমে যাওয়া, নার্ভাস হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
এগুলোতে শরীরে যেমন প্রভাব পড়ে, মনেও এর প্রভাব পড়ে। এগুলোতে ওষুধের পাশাপাশি তাদের কাউন্সিলিং করাতে হয়। এরপর তাদের মেডিটেশন করানো হয়। মূলত আত্মবিশ্বাসের অভাবে এই ধরনের রোগে ভোগেন রোগীরা। তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারলেই আর কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না।
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে সহযোগী অধ্যাপক ডা. আয়শা হান্না আলোচনা করেন ক্যানসার প্রতিরোধে মেডিটেশনের ভূমিকা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘গবেষণায় আমরা দেখেছি, মেন্টাল স্ট্রেস ও জিনগত পরিবর্তনের জন্যই মূলত ক্যানসার হয়।
আবার এখন এটিও প্রমাণিত যে মেডিটেশনের মাধ্যমে মানুষের জিনে নানা ধরনের পরিবর্তন করা বা রোধ করা সম্ভব। আর মেন্টাল স্ট্রেস থেকে মুক্তি পেতে মেডিটেশনের কোনো বিকল্প নেই। মেডিটেশনের ফলে আমাদের হরমোনেও অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়, যা ক্যানসার প্রতিরোধে নানাভাবে কাজে আসে।’