মাত্র দুই থেকে তিনতলা সিঁড়ি ভেঙে উঠলেই এত উপকার

সমতলে সরলরৈখিক হাঁটার চেয়ে সিঁড়ি ভাঙা অধিক কার্যকরছবি: পেক্সেলস

শারীরিক সুস্থতা চান, হাঁটুন। হৃদ্‌যন্ত্রের জটিলতা এড়াতে চান, হাঁটুন। ওজন কমাতে চান, হাঁটুন। হাঁটা যেন মহৌষধ। প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস বলেছেন, মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট ওষুধ হচ্ছে হাঁটা। আধুনিক চিকিৎসকদেরও এমন অভিমত। তবে কতটুকু হাঁটবেন? কোথায় হাঁটবেন? দৈনন্দিন কত কদম হাঁটলে যথার্থ উপকারিতা পাওয়া যাবে? দেখে নেওয়া যাক গবেষণা কী বলছে।

প্রতিদিন কতটুকু হাঁটবেন

অ্যাথেরোস্কলেরোসিস জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণা-নিবন্ধে বলা হয়েছে, সুস্বাস্থ্য রক্ষায় দৈনিক ১০ হাজার কদম হাঁটা উচিত।

তা না হয় বোঝা গেল। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনব্যস্থতায় এই পরিমাণ হাঁটা কি সম্ভব? ঘর থেকে বেরোলেই বাহন। হাজারটা তাড়া। কর্মস্থলে, শপিংমলে যান্ত্রিক সিঁড়ি, লিফট। দুই কদম হাঁটার ফুরসত নেই যেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমতলে সরলরৈখিক হাঁটার চেয়ে সিঁড়ি ভাঙা অধিক কার্যকর। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী, স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য সিঁড়ি ভেঙে প্রতিদিন দুই থেকে তিনতলায় (প্রতি তলায় উঠতে ২০ থেকে ৩০টি সিঁড়ির ধাপ ধরা হয়) ওঠা উচিত। এতে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ২০ শতাংশ কমে যায়।

যেকোনো জায়গায় সুযোগমতো সিঁড়ি ভাঙতে পারেন
ছবি: পেক্সেলস

সিঁড়িতে ওঠানামাকে কেন অগ্রাধিকার দেবেন

এককথায় বলা যেতে পারে, সিঁড়ি ভাঙা সময় ও উপকরণসাশ্রয়ী। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী হাঁটার জন্য চাই বাড়তি সময়। জিমে বা বাসায় শরীরচর্চার জন্য দরকার আলাদা সরঞ্জাম। কিন্তু সিঁড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে এসবের ব্যাপার নেই। দরকার কেবল কয়েকটি সিঁড়ির ধাপ। বাসা, অফিস, শপিংমল, উড়ালসেতু—যেকোনো জায়গায় সুযোগমতো সিঁড়ি ভাঙতে পারেন। যান্ত্রিক সিঁড়ি বা লিফট পরিহার করে কয়েক ধাপ সিঁড়ি ওঠানামা করা বোধ হয় কঠিন কিছু নয়।

সিঁড়ি ভাঙার উপকারিতা

সংশ্লিষ্ট গবেষণা নিবন্ধের লেখক টুলেন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধ্যাপক ড. লিউ কি বলেন, হৃদ্‌যন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্রের সুস্থতা এবং লিপিড প্রোফাইলের সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সিঁড়ি ভাঙা অত্যন্ত সময় সাশ্রয়ী একটি বিকল্প। গবেষণায় বলা হচ্ছে, সিঁড়িতে ওঠানামার ক্ষেত্রে শরীরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সরাসরি যুক্ত থাকে। এতে পায়ের গোড়ালি, ঊরু, নিতম্ব প্রভৃতি অঙ্গগুলোর পেশি শক্তিশালী হয়। পেশি ভর বাড়ে, যা বিপাকক্রিয়ায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। সিঁড়ি ভাঙার ফলে হৃৎস্পন্দনের গতি বৃদ্ধি পায়। ক্যালরি ক্ষয়ের ক্ষেত্রে এটি দারুণ কার্যকর। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা রক্ত জমাট বাঁধার মতো জটিল ঝুঁকি কমাতেও সিঁড়ির ব্যবহার অত্যন্ত ফলপ্রসূ।

গবেষণায় জানা যাচ্ছে, যাঁরা প্রতিদিন সিঁড়ি ব্যবহার করেন, তাঁদের চেয়ে যাঁরা কখনো সিঁড়িতে ওঠানামা করেননি, তাঁদের কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ৩২ শতাংশ বেশি। এবার নিজেই সিদ্ধান্ত নিন, কী করবেন।

আরও পড়ুন