অজান্তেই নিজের জীবন ধ্বংস করছেন না তো
জীবন আমাদের ছোটবেলা থেকেই দৌড়াতে শেখায়, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বলে, ক্রমেই ব্যস্ত থেকে ব্যস্ততর হতে বলে। ধরুন, স্কুলজীবন থেকেই আপনি ভালো ছাত্র, লেখাপড়া নিয়ে খুবই সিরিয়াস। কলেজেও নামডাক আছে, সুযোগ পেলেন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম বর্ষ থেকে বন্ধুদের প্রেম করতে দেখে শো–অফের চাপে একরকম জোর করেই প্রেমে পড়লেন। স্নাতক, স্নাতকোত্তর শেষ করে ‘নিয়মমতো’ চাকরিতে ঢুকে পড়লেন। বিয়ে করলেন, বাবা হলেন। মোটা অঙ্কের বেতন পান। গাড়িতে করে অফিসে যান। রাতে ডিনার সেরে ঘুমিয়ে পড়েন। সবই আপাতদৃষ্টে ‘পারফেক্ট’। তারপর একদিন সকালে উঠে আপনার মনে হলো, আপনি বিষণ্ন, কিছুই আপনার ভালো লাগছে না। কিন্তু কেন এ রকম হচ্ছে কিছুতেই সেটা ধরতে পারছেন না!
থট ক্যাটালগের ‘হাউ টু রুইন ইয়োর লাইফ উইদাউট ইভেন নোটিশিং ইট’ শিরোনামে প্রকাশিত ফিচার থেকে জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে নিজেদের অজান্তেই জীবন ধ্বংস হয়ে যায় আর সেখান থেকে নিজেকে কীভাবে বাঁচাবেন।
১. প্রথাগত যা কিছু, সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ করুন
ভালো ছাত্র হওয়া মোটেও দোষের কিছু নয়। বরং ভালোই। কিন্তু ধরুন আপনার পড়াশোনা করতে ভালো লাগে না। ভালো লাগে ফুটবল। সেটা হয়তো আপনি কোনো দিন জানতেই পারলেন না। কেননা, পড়াশোনার চাপে কখনো ফুটবল খেলাই হয়নি। মোদ্দাকথা হলো, আপনার ভেতরে যদি একজন করিম বেনজেমা লুকিয়ে থাকে, আপনি কেন করপোরেট অফিসে একটা ল্যাপটপের আড়ালে পদন্নতির আশায় পার করে দেবেন জীবনের একটা লম্বা সময়?
যেটা ভালো লাগে, সেটাকে গুরুত্ব দিন। ভালো ছাত্র হওয়া ভালো; সেই সঙ্গে ভালো খেলোয়াড়, ভালো শিল্পী, ভালো নির্মাতা হওয়াও মন্দ নয়। প্রতিটা মানুষের ভেতরের কোনো না কোনো প্রতিভা আছে। আপনার ভেতরে কী প্রতিভা আছে, সেটা আবিষ্কার করুন। মনের ডাকে সাড়া দিন। তাহলে সফলতা আর বেঁচে থাকার আনন্দ, উদ্দীপনা—দুইই পাবেন। মোদ্দাকথা হলো, সবাই যেদিকে দৌড়াচ্ছে, সেদিকেই যে দৌড়াতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। চাইলে আপনি নিজেই নিজের রাস্তা তৈরি করতে পারেন।
২. ভুল মানুষকে জীবনসঙ্গী নয়
ভুল মানুষের সঙ্গে জীবন কাটানোর মতো দুঃখজনক ঘটনা খুব কমই আছে। ভুল মানুষের সঙ্গে প্রতিটা দিন মানিয়ে নেওয়ার জন্য যে পরিমাণ প্রয়াস প্রয়োজন, এর চেয়ে কম কসরতে আপনি নিজেকে অনন্য অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেন। প্রথমত, ভুল মানুষকে জীবনে কেন স্থায়ীভাবে ঠাঁই দেবেন? তাড়াহুড়া করে প্রেমে পড়বেন না। ধীরেসুস্থে নিশ্চিত হয়ে জীবনসঙ্গী বাছাই করুন। বরং প্রেমকেই আপনার ওপরে পড়তে দিন। এর মানে হলো, জোর করে কোনো সম্পর্ক হয় না। সম্পর্ক একটা মনের দাবি। সেটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে। সে পর্যন্ত আপনি অপেক্ষা করুন। সঠিক মানুষটাকে জীবনে আনা খুব জরুরি। যে আপনাকে প্রতিনিয়ত নিজের ‘বেস্ট ভার্সন’ হতে অনুপ্রাণিত করে।
একান্তই যদি ভুল মানুষ চলেই আসে, সম্পর্কটাকে সুযোগ দিন। যদি সেই সম্পর্ক থেকে কিছুতেই নিজেকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে না পারেন, তাহলে জোর করে দুটো অসুখী মানুষকে সংসার নামক জেলখানায় আটকে রাখবেন না। নিজেকে আর সেই মানুষটাকে মুক্ত করুন। দুজনই আলাদা ঘরে ভালো থাকুন। সেরে ওঠার জন্য সময় নিন। নিজেকে সময় দিন। ছোট্ট একটা জীবন, সেটা অসুখী থেকে কাটিয়ে দেওয়ার কোন মানে হয়?
৩. পারফেক্ট সময়ের ধোঁকায় পড়বেন না
পারফেক্ট সময় বলে কোনো কথা নেই। আপনাকে ২৫–এর ভেতর চাকরি করতেই হবে। ৩০–এর ভেতর বিয়ে করে বাচ্চা নিতেই হবে। ৩৫ বছরের ভেতর নিজের ব্যবসা শুরু করতেই হবে। এমন কোনো কথা নেই। জীবনের তথাকথিত ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নেওয়া না নেওয়া, আপনার ইচ্ছা। আপনি ৪২ বছর বয়সেও স্নাতক পাস করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে ‘বাজেট ট্রাভেল’ করে ভ্লগ বানিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে পারেন। আপনার হৃদয়কে খুশি রাখুন।
৪. অতীত নিয়ে আক্ষেপ নয়
সময় নষ্ট করা আর হতাশাকে জীবনে নেমন্তন্নপত্র পাঠিয়ে ডেকে আনার অন্যতম ভালো উপায় হলো নিজের বাজে অতীত নিয়ে আক্ষেপ করা। ছোট্ট জীবন আক্ষেপ করে কাটিয়ে দেওয়ার সুযোগ কোথায়? জীবনের গ্রাফ কখনোই সরলরৈখিক নয়। আপনি যতটা হতাশাজনক, কঠিন পরিস্থিতি পার করে এসেছেন, সেই যাত্রা আপনাকে ততই শক্তিশালী, ধৈর্যশীল আর স্থির করেছে। যা জীবনের জন্য খুবই দরকারি।
৫. আপনি তুলনাহীন
আজ থেকে, এই মুহূর্ত থেকে নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা বাদ দিন। প্রতিটা মানুষের ডিএনএ আলাদা, তাদের জীবনের প্রেক্ষাপট, মানচিত্র আলাদা। কারও সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। আপনি নিজেকে তুলনা করবেন কেবল নিজের সঙ্গে। গতকালকের আপনির চেয়ে আজকের আপনি কি একটু বুঝদার, ধৈর্যশীল, পরিণত? নাহলে দিনটা বৃথাই গেল।