এক মাসে কি সত্যিই এক ইঞ্চি লম্বা হওয়া যায়

উচ্চতা বাড়ানোর জন্য কেউ কেউ কিছু কৌশল অবলম্বন করেন
ছবি: পেক্সেলস

একজন মানুষের উচ্চতা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। জিনগতভাবে যদি কারও উচ্চতা কম না হয় এবং হরমোনের দিক থেকেও যদি তাঁর কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের পদ্ধতি তাঁর উচ্চতা বাড়াতে নিঃসন্দেহেই ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তবে অবশ্যই তাঁর উচ্চতা বাড়ার বয়স থাকতে হবে।

নির্দিষ্ট বয়স পেরিয়ে গেলে জীবনধারায় পরিবর্তন এনেও আর উচ্চতা বাড়ে না। বয়সসহ অন্য সব দিক উচ্চতা বাড়ার অনুকূলে থাকলে জীবনধারার পরিবর্তন কাজে দেবে।

কোন বয়সে উচ্চতা বাড়ে সেটা জানা থাকা চাই
ছবি: সংগৃহীত

হাড়ের একটি নির্দিষ্ট অংশকে বলা হয় ‘গ্রোথ প্লেট’। যত দিন এই প্লেট জোড়া লেগে না যায়, তত দিন পর্যন্ত একজন মানুষ লম্বা হতে পারে। কার ক্ষেত্রে কত বছর বয়সে গ্রোথ প্লেট জোড়া লাগবে, তা অবশ্য বলা মুশকিল। সাধারণভাবে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যেই গ্রোথ প্লেট জোড়া লেগে যায় বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে কুড়ি পেরোনোর পর গ্রোথ প্লেট জোড়া লাগে।

লম্বা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকলে শৈশব ও কৈশোরেই স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। সবার উচ্চতা বাড়ার হার অবশ্য এক নয়। তবে বাড়ন্ত বয়সে অনেকেরই এক মাসে এক ইঞ্চি উচ্চতা বাড়তে পারে বলছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান।

আরও পড়ুন
উচ্চতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিনের খাবারে সব রকম পুষ্টির সুসম বন্টন থাকা চাই। মডেল: হৃদি
ছবি: সুমন ইউসুফ

খেয়াল রাখুন খাদ্যাভ্যাস

শৈশব থেকেই সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শিশু–কিশোরদের দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস দিতে হবে। কাঁটাসহ ছোট মাছ খেতে পারলে খুবই ভালো। অনেক রকম বীজ ও ডাল খাওয়া যেতে পারে। টাটকা ফলমূল আর শাকসবজিও চাই।

নানা রকম শরীরচর্চা

শিশু–কিশোরদের খেলাধুলায় উৎসাহ দিন। এতেই হবে ওদের শরীরচর্চা। রিংয়ে ঝোলা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ও বিভিন্ন ধরনের স্ট্রেচিংয়ের চর্চা করাতে পারেন। যোগব্যায়ামও কাজে আসবে। ছোটাছুটি, দৌড়ঝাঁপ তো চলবেই। কেবল এক ধরনের শরীরচর্চার ওপর নির্ভর করে না থাকাই ভালো।

ঘুম ও রোদ

পর্যাপ্ত ঘুম চাই। আজকাল কৈশোরেই রাত জেগে মুঠোফোন চালানোর প্রবণতা দেখা যায়। দিনের বেলা আবার থাকে পড়াশোনাসহ বিভিন্ন ব্যস্ততা। কিন্তু মনে রাখতে হবে, লম্বা হওয়ার জন্য ঘুম আবশ্যক। ঘুমের সময়ই উচ্চতা বৃদ্ধির হরমোন নিঃসৃত হয় সবচেয়ে বেশি। তাই পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। দিনের বেলা বেশ খানিকটা সময় রোদে থাকাও জরুরি। রোদ থেকে মিলবে ভিটামিন ডি। এই ভিটামিন ছাড়া কিন্তু খাবার থেকে পাওয়া ক্যালসিয়াম দেহের কাজে লাগে না। ফলে হাড়ের বৃদ্ধিতে বাধা ও গড়নে অস্বাভাবিকতার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।

উচ্চতা বাড়াতে সাইকেল চালাতে পারেন
ছবি: সংগৃহীত

দেহভঙ্গি

শিশু–কিশোরদের জন্যই কেবল নয়, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও দেহভঙ্গি খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেহভঙ্গি হতে হবে ঋজু ও স্বাভাবিক। নুয়ে পড়ে বা মেরুদণ্ড ঝুঁকিয়ে একনাগাড়ে কোনো কাজ করা যাবে না। ভারী স্কুলব্যাগ কাঁধে যে শিশু বা কিশোরকে হাঁটতে হয়, তার উচ্চতা ঠিকভাবে না–ও বাড়তে পারে। শোয়া, বসা, দাঁড়ানো এ হাঁটা সবই হতে হবে ঋজু ভঙ্গিতে।

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কিছু কথা

প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্যও দেহভঙ্গি, খাদ্যাভ্যাস, রোদে থাকা ও শারীরিকভাবে কর্মঠ থাকা জরুরি। এসব মেনে চললে তার উচ্চতা বাড়বে, ব্যাপারটা অবশ্য তেমন নয়। তবে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি–এর অভাব হলে ও শারীরিকভাবে কর্মঠ না থাকলে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। ফলে একসময় উচ্চতাও কমে যেতে পারে। আর দেহভঙ্গি ঠিক না রাখলে কম বয়সেই দেহ নুয়ে পড়তে দেখা যায়। ফলে উচ্চতা কম দেখায়। আত্মবিশ্বাসও কমে যায়।

শেষ কথা

বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য শৈশব ও বয়ঃসন্ধিকাল সেরা। এই সময় স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখলেই যে প্রতি মাসে এক ইঞ্চি করে লম্বা হওয়া যাবে, তা কিন্তু নয়। কোনো কোনো মাসে এক ইঞ্চি বৃদ্ধি হতেই পারে। তবে এটিকে আদর্শ ধরে নেওয়া যাবে না। বয়স অনুযায়ী উচ্চতা কত বাড়লে ঠিক, তা আপনি শিশু বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। জীবনধারা ইতিবাচক রাখা সত্ত্বেও যদি উচ্চতা সেই অনুযায়ী না বাড়ে, সে ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কোনো হেলথ ড্রিংক কিন্তু আপনার সন্তানের উচ্চতা বাড়িয়ে দেবে না; বরং তার হরমোনের কোনো সমস্যা থাকলে সেটির চিকিৎসা করান। বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পর হরমোনের সমস্যার চিকিৎসা করলেও উচ্চতা কিন্তু আর বাড়বে না। অবশ্য এ–ও মনে রাখতে হবে, জিনগত কারণে উচ্চতা না বাড়লে, তা আর কোনো পদ্ধতিতেই খুব বেশি বাড়ানো যাবে না।

আরও পড়ুন