অতিরিক্ত চিন্তা পুরুষদের যে ক্ষতি ডেকে আনে
একাধিক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, পুরুষেরা নারীদের তুলনায় অতিরিক্ত চিন্তা করেন। সাংসারিক, পারিবারিক ও সামাজিক নানা চাপ, সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তা, কর্মস্থলের চাপ—এসব নিয়ে পুরুষেরাও অতিরিক্ত চিন্তা করেন। এ ছাড়া অর্থসংকটে ভুগলে দুশ্চিন্তার মাত্রা যায় বেড়ে।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী পুরুষেরা একই বিষয়ে নেতিবাচক চিন্তা বারবার করেন। পুরুষদের এই অতিরিক্ত চিন্তার জন্য ভবিষ্যতে ভয়ংকর মূল্য দিতে হয়। অনেক সময় পুরুষেরা আত্মহত্যাও করতে পারেন।
অতিচিন্তা মূলত নির্দিষ্ট বিষয় বা পরিস্থিতি সম্পর্কে অতিরিক্ত চিন্তা করা এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য বিশ্লেষণ করা। ধরুন, আপনি রিকশার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে হাতে ব্যথা পেলেন। দুই বা তিন দিনের জন্য সয্যাশায়ী হতে হলো। এ সময় শুনলেন, আপনার পরিচিত কেউ এ রকম ব্যথা পেয়ে পরবর্তীকালে প্যারালাইজড বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গেছেন। তখন থেকে আপনারও ভাবনায় এল, আমারও কি এমন হবে? আমি কি আর কখনো ভালো হব না? আমার কি ডাক্তার দেখানো উচিত? এমন সব চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল। সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট করলেন। কিন্তু আদতে আপনার কিছুই হয়নি। এটাই অতিচিন্তা।
আপনি যখন অতিরিক্ত চিন্তা করবেন, তখন অন্য কিছুতে গভীর মনোনিবেশ করতে পারবেন না। যে বিষয় নিয়ে চিন্তা করছেন, সেটা আপনাকে একটা ব্ল্যাকহোলে নিয়ে যাবে। মানে এক চিন্তা থেকে অন্য চিন্তায় চলে যাবেন এবং আপনি ব্ল্যাকহোলের মতো তল খুঁজে পাবেন না।
অতিচিন্তার কারণে যে সমস্যা হতে পারে
মনোযোগে অসুবিধা
অতিরিক্ত চিন্তার কারণে দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ ধরে রাখা যায় না। ক্রমাগত দুশ্চিন্তা এবং ভবিষ্যতে কী হবে, এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলে অন্য কিছুতে মনোযোগ দেওয়া অসম্ভব। ফলে আপনার কাজের গতি কমে যাবে।
বিষণ্নতায় ভোগা
অতিচিন্তা অধিকাংশ সময়ই নেতিবাচক চিন্তাসংশ্লিষ্ট হয় এবং এ ধরনের নেতিবাচকতা দীর্ঘায়িত হয়ে ক্লান্তি বা বিষণ্নতা তৈরি করতে পারে। বিষণ্নতা থেকে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
ক্লান্তি
অতিচিন্তার কারণে সৃষ্ট মানসিক চাপ শক্তি ক্ষয় করে, যা দীর্ঘমেয়াদী ক্লান্তি ও অবসাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ক্রমাগত ক্লান্তি প্রতিদিনের কার্যকারিতা ও ঘুম ব্যাহত করতে পারে এবং বিষণ্নতা ও উদ্বেগের মতো অন্যান্য মনোরোগ বাড়িয়ে তুলতে পারে।
দুশ্চিন্তা
ভবিষ্যৎ বা সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে অতিচিন্তার ফলে প্যানিক অ্যাটাক বা অন্যান্য উদ্বেগ-সম্পর্কিত রোগও হতে পারে। এটি আপনাকে ভয়ের চক্রে আটকে ফেলে জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করবে।
সমাধান কী
অতিরিক্ত চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।
গান শুনুন
গান অপ্রীতিকর চিন্তাভাবনাকে দূরে রাখে। মেজাজ ভালো রাখে। প্রশান্তিদায়ক বা প্রাণবন্ত গান আপনাকে শান্ত করতে এবং আপনার মনোযোগ পরিবর্তন করতে সহায়তা করে।
কারও সঙ্গে কথা বলুন
যে বিষয়ে আপনার চিন্তা হচ্ছে, সে বিষয়ে পরিবারের বিশ্বস্ত সদস্য বা বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন। এতে মন কিছুটা হালকা হবে।
প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটান
প্রকৃতি আপনার মনকে শান্ত ও শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে। উদ্যানে হাঁটতে যেতে পারেন, নৌভ্রমণ করতে পারেন—এসব অতিচিন্তা কমাতে সাহায্য করে।
গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম
গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম শরীরকে শিথিল করে, স্নায়ু শান্ত হয়। প্রতিদিন গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। এই ব্যায়াম চাপে থাকাকালেও আপনার অতিচিন্তা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
সমাধানে মনোযোগ দিন
সমস্যায় মনোনিবেশ না করে সমাধানের দিকে মনোযোগ দিন। অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা তখনই কমতে পারে, যখন কেউ সমস্যা সমাধানে তার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে।
সূত্র: সাইকোলজি টুডে, হেলথ শটস, আমাহা, ভেরিওয়েলমাইন্ড