সংগীত শিশুদের সৃজনশীল করে তোলে

জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য সুস্থতার কোনো বিকল্প নেই। আর এর জন্য প্রয়োজন পরিপূর্ণ বিকাশ। অনেকে মনে করে থাকেন, কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যই প্রকৃত স্বাস্থ্য। কিন্তু সে ধারণা সঠিক নয়। কারণ, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সমন্বয়েই সার্বিক সুস্থতা রক্ষা করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়া শুরু হয় শিশুর জন্মের পর থেকেই।

সংগীত এমন একটি মাধ্যম, যা কোমলমতি শিশুদের মন, শরীর ও আত্মায় শান্তির জোগান দেয়। শিশুর সামগ্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নিবিড়ভাবে জড়িত। এটি শিশুর মানসিক, শারীরিক তথা সার্বিক বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ জন্য শিশুকে একেবারে ছোটবেলা থেকেই সংগীতের সঙ্গে পরিচয় করানো জরুরি। গবেষণায় দেখা গেছে, শিল্পচর্চার মাধ্যমে শিশুদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে শিশুর অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এর জন্য প্রয়োজন শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সৃজনশীলতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা। এই লক্ষ্যে Xinc নিবেদিত ‘সুর ও সুরক্ষা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী খৈয়াম সানু সন্ধি।

এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংগীতশিল্পী খৈয়াম সানু সন্ধি অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিশুদের সংগীতবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেন এবং তাদের সৃজনশীল কাজে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, সংগীত মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। কারণ, একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন চারদিকের পরিবেশ তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে, যার প্রতিফলন ঘটে তার ব্যক্তিত্বে।

দেখা গেছে, শৈশবে শিশুরা যদি সৃজনশীল কাজের সুযোগ পায়, তাহলে তারা মেধাবী ও বুদ্ধিমান হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভালো সংগীত শুনলে মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নামের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়, যা কোনো কিছু শেখার ক্ষেত্রে শিশুকে আগ্রহী করে তোলে। অর্থাৎ শিশুর দক্ষতা বৃদ্ধিতে সংস্কৃতিচর্চা যেমন সংগীত, নাচ, খেলাধুলা, নাটক, বিতর্ক ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্ব রাখে। কারণ, এগুলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়েও দক্ষতা বৃদ্ধিতে বেশি ভূমিকা রাখে। তাই এসব বিষয় অনুষ্ঠানে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়।

এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খেলার ছলে শিশুদের সংগীত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এখানে শরীরচর্চা ও খেলাধুলার বিষয়টিও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। নিয়মিত শরীরচর্চা এবং খেলাধুলা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কারণ, খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুর সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। এর ফলে শিশু নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জন করে। একই সঙ্গে শিশু সুবিবেচক এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।

শিক্ষাকে চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী রাখলে শিশু পূর্ণাঙ্গভাবে বিকশিত হতে পারে না। শিশুর চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটানোর জন্য প্রয়োজন সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা। এ অনুষ্ঠানের কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানের সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও অংশগ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহী হবেন বলে আশা করা যায়। এ আয়োজনে শিশুদের অংশগ্রহণ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার কারণে শিশুরা গান শেখাকে আরও উপভোগ করে। এখানে শিশুর কল্যাণচিন্তায় নিয়োজিত সম্মানিত অভিভাবকদের অংশগ্রহণের বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

সংগীতশিল্পী খৈয়াম সানু সন্ধি খুব সাবলীলভাবে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে শিশুদের দিকনির্দেশনা দেন। তাঁর চমৎকার বাচনভঙ্গি ও গান শেখানোর সুনিপুণ কৌশলের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিশুদের উৎসাহিত করেন।
‘সুর ও সুরক্ষা’ অনুষ্ঠানের ১২টি পর্বে খেলার ছলে শিশুদের গান শেখানোর পাশাপাশি তাদের সার্বিক বিকাশে সহায়ক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। সমাপনী পর্বটিতেও যথারীতি শিশুদের সঙ্গে মজার কথোপকথনের পাশাপাশি এক এক করে সবার পরিবেশনা দেখা হয়। অংশগ্রহণকারী শিশুদের সুন্দর পরিবেশনার জন্য প্রশংসার মাধ্যমে তাদের সামনের দিকে এগিয়ে চলার উৎসাহ প্রদান করা হয়।