সহনশীলতা, সহানুভূতি চর্চার মঞ্চ

মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা ‘মশাল’ এর সঙ্গে এক হয়ে এই আয়োজন করেছিল সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাবছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শীতের সকালে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ-জেইউ) করিডরে এক হয়েছিলেন বেশ কজন শিক্ষার্থী। হাতে ব্যাগভর্তি শীতবস্ত্র, শীতের নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকরণ আর মাথায় নানা পরিকল্পনা। কেউ হিসাব কষছিলেন, কেউবা প্রকল্পের দায়িত্ব ভাগ করে নিচ্ছিলেন। তাঁদের এই প্রাণোচ্ছল ব্যস্ততার উদ্দেশ্য একটাই, সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এভাবেই ‘প্রজেক্ট ওয়ার্মথ’ (উষ্ণতা প্রকল্প) বাস্তবায়ন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষার্থীদের সংগঠন সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্লাবের সদস্যরা। শীতার্ত মানুষকে সাহায্য করার জন্য এটি ক্লাবটির একটি বার্ষিক উদ্যোগ।

শুধু শীতেই নয়, দেশের যেকোনো সংকটে নিজেদের একটা আলাদা অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করেন ক্লাবের সদস্যরা। নেন মানবিক উদ্যোগ। যদিও যাত্রা শুরুর সময়টা সহজ ছিল না। সীমিত তহবিল, অভিজ্ঞতার অভাব, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কাঠামো গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ, সবকিছু মাথায় রেখেই এগোতে হয়েছে। ক্লাবের সদস্যরা হাল ছাড়েননি। তাঁদের ‘হাল না ছাড়া’ মানসিকতার প্রমাণ মেলে প্রথমবারের শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ থেকে। তহবিল পেতে সেবার তাঁরা নিজেরাই হুডি, জ্যাকেটসহ নানা শীতের কাপড় তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করেছেন। সংগৃহীত অর্থ দিয়ে দরিদ্র মানুষের জন্য শীতবস্ত্র, লোশন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে বিতরণ করেন তাঁরা। এত সব আয়োজন দেখে অ্যালামনাইরাও এগিয়ে এসেছেন। এর পর থেকে ক্লাবটির মানবসেবার যাত্রা থেমে থাকেনি। প্রতিবছর তারা ‘প্রজেক্ট ওয়ার্মথ’–এর মাধ্যমে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান। রমজান মাসে ‘প্রজেক্ট সহায়’–এর মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিতদের মধ্যে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ করেন। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণসহায়তা, মেটানোইয়া, আনন্দমেলা সারাবেলা, বর্ষবরণ, ঈদ ফর অল নামের আয়োজনগুলো ছাড়াও ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নতামূলক কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সারা বছর ক্লাবের পক্ষ থেকে অনুদান সংগ্রহ করা হয়।

ক্লাবের যাত্রার শুরুর দিকেই রানা প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞের সময়ও ক্লাবটির সদস্যরা আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের জন্য কাজ করেছেন। করোনা মহামারি থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক বন্যা, সব জাতীয় সংকটে ক্লাবের সদস্যরা এগিয়ে আসতে চেষ্টা করেন। কার্যক্রমকে আরও টেকসই ও বিস্তৃত করতে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছেন তাঁরা। যে কেউ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনুদান দিতে পারবেন এবং সেই অনুদান কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

এখানে কাজের অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনকেও প্রভাবিত করছে বলে মনে করেন ক্লাবের সভাপতি ইশরাত খান। তিনি বলেন, ‘অলাভজনক সংস্থায় স্বেচ্ছায় কাজ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যক্রম–বহির্ভূত নানা কল্যাণমূলক কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যা পরে তাদের শিক্ষাক্ষেত্রে বৃত্তি পেতে, কর্মস্থলে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সাহায্য করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি মানুষের জীবনে কীভাবে অবদান রাখা যায়, তা আমাদের সদস্যরা হাতে-কলমে শিখছে। এর মধ্য দিয়ে একে অপরের প্রতি সহনশীল হওয়ার চর্চাও এখানেই হয়ে যায়। এখনকার পৃথিবীতে সহনশীলতা ও সহানুভূতির চর্চাটা খুব দরকার।’

ভবিষ্যতে এসব সামাজিক কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার ইচ্ছার কথাও জানান ক্লাবের সভাপতি ইশরাত খান।