মেয়েদের যেসব অভ্যাস ছেলেরাও রপ্ত করতে পারেন
৪৫ পার হওয়া অধিকাংশ পুরুষের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, বছরের পর বছর ধরে ত্বকের যত্ন নেওয়া হয়েছে কম। ত্বকে আর্দ্রতা নেই, রোমকূপগুলো বড়, চেহারাজুড়ে কালো ছাপ। যত্ন না নেওয়ায় চুলের অবস্থাও নাজুক। এদিক থেকে জেন–জিদের অবস্থা কিছুটা ভালো। আলফারা এখনো যেহেতু মায়ের শাসনেই চলে, তাদের ত্বকও কিছুটা ভালো অবস্থানে আছে। বয়স কম হওয়ায় তাদের ত্বক তুলনামূলকভাবে ভালো। তবে যত্ন নেওয়ার প্রবণতা না থাকলে ত্বক খারাপ হতে বেশি সময়ও লাগে না। ত্বকচর্চা সম্পর্কে ছেলেদের আগ্রহ এমনিতেই কম। আমার ১০ বছরের আলফাকে মুখ ধুয়ে ক্রিম লাগানো আর গোসল শেষে লোশন লাগানোর অভ্যাস এখনো করাতে পারিনি। সানস্ক্রিন তো দূরের কথা। ত্বকচর্চা, ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস—তিনটি বিষয়ের গুরুত্ব সব ছেলেরই থাকা ভালো। অভ্যাস না থাকলে গড়ে তোলা যায়, যেকোনো সময়, যেকোনো বয়সে। হোক না সেটা ১৩ বছর বা ৪৫।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকালে দেখা যায় ধীরে ধীরে ছেলেরা ত্বকের বিষয়ে যত্নবান হচ্ছে। সংখ্যাটা হয়তো কম, কিন্তু হচ্ছে তো। রিলগুলো মুঠোফোনে বারবার এলে ৩ জন থেকে ৫ জনে আগ্রহ বাড়বে। বিষয়টি সম্পর্কে যত বেশি জানা হবে, তত বেশি লজ্জাও কেটে যাবে। রূপচর্চাকে মেয়েদের বিষয় ভেবে নিজেরা করতে লজ্জাই পান আমাদের দেশের তরুণেরা। তাই রূপচর্চা বা ত্বকচর্চা যেভাবেই বলতে চান, বিষয়টিতে অভ্যস্ত হওয়াটা খারাপ না। এই যত্ন নেওয়ার জন্য বড় অঙ্কের টাকাও খরচ করতে হবে না। দিনে দুবার যখন দাঁত ব্রাশ করা হয়, তখন ফেসওয়াশ বা মানানসই সাবান দিয়ে চেহারাটা ধুয়ে নিলেই হবে। এরপর ক্রিম লাগানোর মধ্য দিয়ে ত্বকচর্চার প্রথম পর্বটা শুরু করে দিতে পারেন।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ত্বক ধীরে ধীরে কোলাজেন ও ইলাস্টিন হারাতে থাকে, দেখা দেয় সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা। বেশির ভাগ পুরুষ নিয়মিত লোশন লাগান না, কিন্তু পুরুষদের ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার লাগানো গুরুত্বপূর্ণ। ত্বককে ক্রিম, তেল বা লোশনের মাধ্যমে আর্দ্র রাখলে বার্ধক্যের লক্ষণগুলো দেরিতে আসবে। যাঁরা নিয়মিত শেভ করেন, ত্বকে আফটার শেভ লাগানোর পরামর্শ দিলেন শোভন মেকওভারের কসমোটোলজিস্ট শোভন সাহা। ট্রিম করার পরও ক্রিম লাগানো আবশ্যক। দিনের বেলা সানস্ক্রিন লাগানো বাধ্যতামূলক। একটু ভালো অনুপাতে নিয়েই চেহারায়, গলায়, হাতে লাগান।
রাতের বেলা চেহারা পরিষ্কার করার পর রিপেয়ার ক্রিম বা একটু ভারী ক্রিম লাগালে ভালো। এই কয়েকটা অনুশীলন প্রয়োজন। এটা দিয়েই ত্বকচর্চার অভ্যাস করা শুরু করা যেতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে বাড়তি জিনিসগুলো নাহয় যোগ-বিয়োগ করা যাবে। সে তালিকায় থাকতে পারে সপ্তাহে দুই দিন বাড়িতে ত্বক অনুযায়ী স্ক্রাব ব্যবহার, ক্রিম লাগিয়ে ত্বক ওপরের দিকে নিয়ে মালিশ (ত্বকের শুষ্কতা চলে যাবে), চোখের নিচে আই ক্রিম লাগানো, ত্বকের সমস্যা অনুযায়ী সেরাম বেছে নেওয়া এবং লাগানো, শিট মাস্ক ব্যবহার। কারণ, ঘরোয়া প্যাক লাগানোতে ছেলেদের একটা অনীহা দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে শিট মাস্ক সহায়তা করবে অনেকখানি।
প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে শ্যাম্পু করা উচিত। আমাদের এখানে যে পরিমাণ দূষণ, মাথার ত্বক প্রতিদিন পরিষ্কার না করলে ময়লা থেকে খুশকি, চুল পড়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। চুল শুষ্ক থাকলে আর্দ্রতা আছে এমন শ্যাম্পু, খুশকি থাকলে অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু, এরপর কন্ডিশনার লাগানো উচিত। আলাদা পণ্য ব্যবহার করতে মন না চাইলে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার আছে এমন পণ্য ব্যবহার করুন। সেরাম ব্যবহার করতে পারেন। চুলকে নরম রাখবে। কন্ডিশনার ব্যবহার না করে এটাও ব্যবহার করতে পারেন। কিশোর বয়স থেকে ত্বকে ব্রণ, শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। এ কারণে ত্বক পরিষ্কার করা, ক্রিম লাগানো গুরুত্বপূর্ণ সেই বয়স থেকেই। ২৬ বছর বয়সের পর থেকে অ্যান্টি–এজিং ক্রিম লাগানো শুরু করা যেতে পারে বলে জানান শোভন সাহা। কোলাজেন সাপ্লিমেন্ট খাবার অভ্যাসও করতে হবে।
ব্যায়াম
ব্যায়ামের বিষয়টিও বেশির ভাগ মানুষ এড়িয়ে যেতে চান। সময় সবচেয়ে বড় বাধা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অফিস বা ক্লাস করে আবার টিউশনিতে যাওয়ার মাঝে জিম করার সময় কোথায়। জিম করুন আর না–ই করুন, প্রতিদিন একজন মানুষের ১০ হাজার স্টেপস হাঁটা প্রয়োজন, জানালেন রুসলান’স স্টুডিওর ফিটনেস কোচ ও স্বত্বাধিকারী রুসলান মো. হোসেইন। জিম করলে সর্বোচ্চ ৬ দিন, সর্বনিম্ন ৫ দিন। ১৮ বছরে ভর্তি হোন আর ৪০, জিম শুরু করা যাবে একই নিয়মে। তবে শারীরিক কোনো জটিলতা থাকলে সেটা অবশ্যই জানাতে হবে জিমে।
১৮ বছর বয়স থেকে জিম শুরু করা ভালো বলে মনে করেন প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের সুপারভাইজার ও ইনস্ট্রাক্টর আনোয়ার করিম। কারও কারও বৃদ্ধি ভালো থাকে, তারাও শুরু করতে পারে। যাঁরা খেলোয়াড়, তাঁদের তো ব্যায়াম করতেই হয়। ফ্রি হ্যান্ড, সাঁতার কাটা, দৌড়ানো ভালো। কিন্তু পেশি বানাতে চাইলে ১৮ বছরের পর করা উচিত। কারণ, বাড়ন্ত সময়ে পেশি বানাতে গেলে অনেক সময় লম্বা হওয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ১৮ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত যাঁরা আছেন, তিন দিনের রুটিন বানাতে পারেন। ৩০ মিনিট কার্ডিও, ১৫ মিনিট স্ট্রেচিং, এরপর ট্রেনিং। একদিন চেস্ট, ট্রাইসেপ করতে পারেন। পরদিন ব্যাক, বাইসেপ। ৩ নম্বর দিনে লেগ আর শোল্ডার করতে পারেন—এমন পরামর্শ আনোয়ার করিমের।
একই সঙ্গে জীবনযাপনেও পরিবর্তন আনতে হবে। রাত ১১টার আগে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। সম্ভব হলে সকালে ওঠা। রাত জেগে খাবার না খাওয়া। মূল খাওয়া সেরে ফেলতে হবে রাত আটটার ভেতরেই। ভাজাপোড়া বাদ দিয়ে ফল, সবজি খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিন।
শুধু ৩০–এর পর নয়, ছোটবেলা থেকেই জীবনযাপনে সু-অভ্যাস সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে।