মানসিকভাবে ভালো না থাকলে সমস্যা হবে ঘুমেও

যখন আপনি মানসিকভাবে ভালো নেই, তখন ঘুমের সমস্যা হতেই পারে। মানসিক চাপের সঙ্গে ঘুম নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। সুস্বাস্থ্যের জন্য ঘুম অপরিহার্য। তবে বিপর্যস্ত সময়ে ঘুমের জন্য ‘যুদ্ধ’ করাটাও কিন্তু সমাধান নয়। বরং মনকে স্থির রাখতে চেষ্টা করুন। সব চিন্তা দূরে সরিয়ে রেখে মিনিট কুড়ি চোখ বুজে শুয়ে থাকার পরেও ঘুম না এলে বিছানা ছেড়ে উঠে যান। এমন কিছু করুন, যাতে ভাবনার গতিপথ বদলাতে পারেন।

মানসিক চাপের সঙ্গে ঘুম নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত
ছবি: প্রথম আলো

মানসিক চাপে বা আতঙ্কে থাকলে দেহের নির্দিষ্ট কিছু হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। আরাম-আয়েশ, শিথিলতা এবং ঘুমের হরমোনের মাত্রা কমে যায়। এই ভারসাম্যহীনতার প্রভাব পড়ে আমাদের ওপর। এমনিতে যিনি দিব্যি ‘সুখী’ মানুষের মতো আরামে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন, বিপর্যয়ের মুহূর্তে তিনিও এ কারণেই ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। এটাই স্বাভাবিক। তবে ভেতরে ভেতরে একটা চাপা অস্থিরতা কাজ করলেও সুস্থ থাকার, ভালো থাকার প্রয়াস চালিয়ে যেতে হয় আমাদের। এমনটাই বলছিলেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক।

তাঁর কাছ থেকেই জেনে নেওয়া যাক এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে ভালো রাখতে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়।

ঘুমের সময়

ঘুমের সমস্যা ১৫ দিনের বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
ছবি: প্রথম আলো

দুশ্চিন্তা দূরে সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করুন। বিশেষ করে যে বিষয়ে আপনার কোনো হাত নেই, সে বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত ভাববেন না। তবে চিন্তার জালে জড়িয়ে থাকা মানুষের জন্য চিন্তা না করাটাই কঠিন কাজ। তাই শিথিলতার চর্চা করতে পারেন। চোখ বন্ধ করে থাকুন। এ অবস্থায় চোখের সামনে যা দেখতে পাচ্ছেন, তার দিকে মনঃসংযোগ করুন। চোখ বন্ধ রেখে এই আঁধারি আলোটাকে একে একে মাথার বিভিন্ন অংশে নিয়ে যেতে চেষ্টা করুন; মাথার সব অংশ শেষে ধীরে ধীরে নিচে নামিয়ে আনুন। এভাবে পুরো শরীরে এই আলোটাকে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। পুরো প্রক্রিয়ার মাঝে আপনার মাথায় অন্য চিন্তা চলে আসতেই পারে। তবে আপনি ধীরে ধীরে গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণ করুন। যতটা ধীরে শ্বাস নেবেন, তার চাইতে তিন গুণ ধীরে নিশ্বাস ছাড়বেন। আর বিছানায় যাওয়ার পর কখনোই বিগত দিনের ভাবনা, আগামী দিনের ভাবনা ভাববেন না। বিছানায় যাওয়ার পর সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে ভাবতে শুরু করবেন না। মনে নানা ভাবনাচিন্তা চলে আসতে চাইলে ভাবুন, নিজের আপনজন যদি চিন্তার পাহাড় মাথায় নিয়ে ঘুমের সমস্যায় ভুগতেন, তাহলে তাঁকে কী পরামর্শ দিতেন। নিশ্চয়ই বলতেন, ‘ঘুমের সময়ের আগে বা পরে এসব ভাবনা ভেবো, এখন না।’ নিজের জন্যও সেটাই মেনে চলুন।

তবু ঘুম না এলে

ঘুম না এলে মিনিট কুড়ি চোখ বুজে শুয়ে থাকুন। তার পরও ঘুম না এলে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ুন। ঘুম কেন আসছে না, ঘুম আসা দরকার—এভাবে ভাববেন না। ঘুম নিয়ে তো আর জোরাজুরি চলে না। বরং বিছানা ছেড়ে উঠে বই পড়ুন। কঠিন বই পড়তে পারেন। তাহলে চিন্তার ধারা ভিন্নদিকে প্রবাহিত হবে। কিংবা অডিও ক্লিপ শুনুন। বৃষ্টির শব্দ, ঝরনার শব্দ—প্রকৃতির এমন দারুণ কিছু শব্দ শুনতে পারেন।

ঘুমের আরও প্রস্তুতি

ঘুম না এলে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ুন
ছবি: প্রথম আলো

রোজ খানিকটা সময় শরীরচর্চা করুন। ঘুমের সমস্যা কমে আসবে। তবে অবশ্যই ঘুমের অন্তত তিন-চার ঘণ্টা আগে শরীরচর্চা সম্পন্ন করুন। যোগব্যায়াম ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়ামের চর্চাও কাজে আসে।

শোয়া ছাড়া অন্য কাজ বিছানায় করবেন না।

ঘুমের আগে স্নান করতে পারেন। সম্ভব হলে পোশাকও বদলে নিতে পারেন।

সন্ধ্যা ছয়টার পর চা-কফি খাবেন না। ধূমপানও এড়িয়ে চলুন।

শোয়ার দুই-তিন ঘণ্টা আগেই খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে ফেলুন। রাতের খাবার হিসেবে হালকা কিছু খাবেন।

পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে কিছুদিন ঘুমের সমস্যা হলেও শরীরের নিজের প্রয়োজনেই একসময় ঘুম আসে। কোনোভাবেই ঘুমাতে না পারলে শরীরকে সেই সময়টুকু দিন। তবে ঘুমের সমস্যা ১৫ দিনের বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।