অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা যেভাবে বন্ধ করবেন
অন্যের সুখে, সাফল্যে আমরা ঈর্ষান্বিত হই। হতাশ হই। হীনম্মন্যতায় ভুগি। বাটখারার এক পাল্লায় তাকে রেখে আরেক পাল্লায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করি, আমি নই কেন? অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার প্রবণতা আখেরে ক্ষতির। কীভাবে এই প্রবণতা বন্ধ করা যেতে পারে, তারই উপায় খোঁজা হয়েছে এই লেখায়।
সমভাবনার মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব
সেই যে বাংলায় একটা কথা আছে না—ঝাঁকের কই! ব্যাপারটা কিছুটা তাই। এমন মানুষদের সঙ্গে মিশুন, আড্ডা দিন, যাঁরা চিন্তা ও জীবনযাপনে মোটামুটি আপনারই মতো। যাঁরা নিজেকে আপনার চেয়ে ‘বিশেষ কিছু’ মনে করেন না এবং আপনাকেও হীন ভাবেন না। তুলনা করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে স্বাস্থ্যকর বন্ধুবলয় খুব জরুরি।
সময় কাটুক অফলাইনে
ইংরেজিতে একটি কথা আছে—টাচ গ্রাস। অর্থাৎ ইন্টারনেট-প্রযুক্তির দুনিয়া থেকে বেরিয়ে বাস্তবের দুনিয়ায় আসুন। মোবাইল, ল্যাপটপ বন্ধ করে বেরিয়ে পড়ুন। প্রকৃতিতে সময় কাটান। বুকভরে শ্বাস নিন মুক্ত হাওয়ায়। এতে আপনার ভেতর প্রাকৃতিক হরমোন ‘এন্ডোরফিন’ নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যাবে। বাড়বে মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস।
রিলস নয়, রিয়েল ভাবুন
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স—এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যে দেখনদারির ঝকমারি দুনিয়া, তা নিশ্চয়ই বুঝিয়ে বলতে হবে না। প্রিয় তারকা থেকে শুরু করে আপনার আশপাশের যাঁরা অমন পরিপাটি ছবি-ভিডিও পোস্ট করছেন, তার পেছনে যে ফটোশপ, এডিটিং আর ঝাড়পোঁছের অল্প বা বিস্তর কারসাজি আছে, তা–ও তো জানেন। একটা কথা মনে পড়ছে। একজন শিক্ষক একদিন বলেছিলেন, ‘ভোটার আইডি কার্ডে মানুষকে যতটা অসুন্দর দেখায়, মানুষ আসলে ততটা অসুন্দর নয়। আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যতটা সুন্দর দেখায়, মানুষ আসলে অতটা সুন্দরও নয়।’
কল্পিত বাস্তবতা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিরেট বাস্তবতায় চোখ রাখুন। যতটা ভালো থাকা প্রদর্শন করছে তারা, কে জানে, হয়তো আপনার চেয়ে ভালো নেই তারা।
মনোদৈহিক ব্যায়াম করুন
নিজেকে হীন ভাবার প্রবণতা বন্ধ করতে নিজের বিক্ষিপ্ত মনকে কেন্দ্রীভূত করা দারুণ এক টোটকা। অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার ক্ষেত্রে সাধারণত দুটি ব্যাপার কাজ করে। তা হলো ‘আগে ও পরে’ ভাবনা। কে আগে কী ছিল, সামনে কী হতে চলেছে, এসব চিন্তা বাদ দিন। আপনি মনোযোগ দিন ‘বর্তমানে’। নিজের মনকে স্থির করুন ‘চলমান মুহূর্তে’। যোগব্যায়ামের মতো মনোদৈহিক ব্যায়াম এ ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। এর জন্য প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখুন।
নেতিবাচক সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসুন
প্রিয় মানুষের সঙ্গ ভালো থাকার মোক্ষম কারণ হতে পারে। কিন্তু মানুষটি যদি নেতিবাচক মানসিকতার হয়, তাহলে জীবন হয়ে উঠতে পারে বিষাক্ত, যন্ত্রণাময়। এমন সম্পর্ককে বিদায় জানান। পরিবার, বন্ধুবান্ধব কিংবা সহকর্মীদের মধ্যেও এমন কেউ থাকলে সন্তর্পণে তাঁর সঙ্গ এড়িয়ে চলুন।
সুস্বাস্থ্যের চর্চা গড়ে তুলুন
দৈনন্দিন শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে জোর দিন। শরীর ও মনের যত্ন নিন। নিয়মিত হাঁটুন। জিমে সময় কাটান। খেলাধুলা করুন।
বাজে আলোচনা পরিহার করুন
পরনিন্দা-পরচর্চা আনন্দদায়ক কিন্তু ক্ষতিকর। ফাস্ট ফুডের মতো। খেতে ভালো, কিন্তু অতি অস্বাস্থ্যকর। এই অভ্যাস নীরবে আপনার হীনম্মন্যতাবোধকে উসকে দিচ্ছে, টের পাচ্ছেন? অন্যকে বিচার করা বন্ধ করুন। এটি করে অবচেতনে নিজেকেই নিজে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন। পরিচিত বলয়ে, বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় কিংবা নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও কারও কাজকর্ম, চরিত্রবৈশিষ্ট্য ব্যবচ্ছেদ করবেন না।
নিজেকে ভালোবাসুন
হ্যাঁ, নিজের প্রতি নিজের ভালোবাসা অনেক কিছুর মীমাংসা করে দিতে পারে। আত্মসমালোচনা থাকুক, তবে তা অতটা নির্মম না হোক। বরং আত্মসহানুভূতিশীল হোন। একটা শর্তহীন ভালোবাসা বজায় রাখুন নিজের প্রতি। যখন আপনিই আপনাকে ভালো না বাসতে পারছেন, শ্রদ্ধা করতে না পারছেন, তখনই কিন্তু নিজের অজান্তে নিজেকে তুলনা করছেন অন্যের সঙ্গে।
কৃতজ্ঞতাবোধের চর্চা করুন
কৃতজ্ঞতাবোধ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য হ্রাস করে ইতিবাচক অনুভূতিগুলোকে অধিক কর্মক্ষম করে তোলে। কৃতজ্ঞ মানুষের মানসিক শক্তিও অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে। তাঁদের মনোবল খুব শক্ত ধরনের হয়। তাঁরা স্থির, ধৈর্যশীল ও আন্তরিক আচরণের হয়ে থাকেন। তাঁদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধও প্রবল। অল্পে তুষ্টি তাঁদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বাস, আর কী চাই! কৃতজ্ঞতাবোধের অনুশীলন নিশ্চিত করতে পারলে অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার মানসিকতা কোন ফাঁকে মিলিয়ে যাবে হাওয়ায়, বুঝতেই পারবেন না।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট