স্মার্টফোনবিহীন মাত্র তিনটি দিন যেভাবে আসক্ত মস্তিষ্ককে রিসেট করে

আমাদের মস্তিষ্ক স্মার্টফোনের মতো ডিজিটাল ডিভাইস দ্বারা প্রবলভাবে আক্রান্ত। মাত্র ৭২ ঘণ্টা বা ৩ দিন স্মার্টফোন ছাড়া থাকলে আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। নতুন গবেষণায় এমনটাই বলছে।

মাত্র ৭২ ঘণ্টা বা ৩ দিন স্মার্টফোন ছাড়া থাকলে আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন আসেছবি: প্রথম আলো

‘স্মার্টফোন ডায়েট’–এর আগে ও পরে

গবেষণাটি পরিচালনা করেছে জার্মানির দুটি বিশ্ববিদ্যালয়—হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব কোন। গবেষণাটি চালানো হয়েছে ২৫ জন তরুণের ওপর, যাঁদের বয়স ১৮–৩০–এর মধ্যে। আর গবেষণাটি শুরু করার আগে এই ২৫ তরুণের মস্তিষ্কের এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) করা হয়েছিল। এ ছাড়া নেওয়া হয়েছিল একটা মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা।

তারপর ৩ দিন এই তরুণদের ‘স্মার্টফোন ডায়েট’–এ রাখা হয়। অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টা তাঁরা স্মার্টফোন ব্যবহার করেননি। স্বাভাবিকভাবে অন্যদের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করেছেন সরাসরি। এভাবেই চালিয়েছেন নিজেদের দৈনন্দিন ও পেশাগত কাজকর্ম। ৭২ ঘণ্টা পর আবার তাঁদের এমআরআই ও একই মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় এই তরুণদের চালু স্মার্টফোন, বন্ধ স্মার্টফোন, ফুল, প্রকৃতি প্রভৃতির ছবি দেখানো হয়। আর মস্তিষ্ক সেসব ছবি দেখে কীভাবে সাড়া দেয়, তা লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর এই দুই পরীক্ষার পার্থক্য থেকে গবেষকেরা নিয়েছেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

আরও পড়ুন

গবেষণায় যে আশ্চর্য ফলাফল পাওয়া গেছে

পরীক্ষায় দেখা যায়, অন্য যেকোনো ধরনের আসক্তি মস্তিষ্কে যেভাবে নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলে, দিনে ব্যক্তি ভেদে ৩–৪ ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোনের ব্যবহারও একইভাবে ব্যক্তির মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে।

মাত্র ৩ দিন স্মার্টফোন ব্যবহার বন্ধ করার ফলে এমআরআই পরীক্ষায় মস্তিষ্কের স্মৃতি সংরক্ষণ, চিন্তা ও সৃজনশীলতার অংশ ভালোভাবে সাড়া দেয়। এর কারণ হলো মানুষ সামাজিক জীবনযাপন করবে, চিন্তা করবে, সমস্যা সমাধান করবে—মানব মস্তিষ্ক এভাবেই কাজ করার জন্যই উপযোগী। তাই মস্তিষ্ককে যখন কোনো অস্বাস্থ্যকর, চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ থেকে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দেওয়া হয়, মস্তিষ্ক তখন সেটির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেয় ও ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয়।

আরও পড়ুন

স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় মানুষ সৃজনশীল চিন্তা করার অবকাশ পায় না। ফলে উদ্ভাবনী ক্ষমতা, যুক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়। মস্তিষ্ক দ্রুত বৃদ্ধ হতে থাকে। ফলে কম বয়সেই স্ট্রোক, আলঝেইমারস ডিজিজ, পারকিনসনের মতো সেরিব্রোভাস্কুলার ও নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি বাড়ে আশঙ্কাজনক হারে।

এই গবেষণার ভিত্তিতে গবেষকেরা বলছেন, স্মার্টফোনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে আপনি সৃজনশীল কাজে আরও ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে পারেন। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য স্মার্টফোনের ব্যবহারে লাগাম টানার কোনো বিকল্প নেই।

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

আরও পড়ুন