নাটকীয়তার পর ভারতের শেয়ারবাজারে নতুন রেকর্ড
রোববার নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এনডিএ জোট দিল্লিতে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পরদিন সোমবার নতুন রেকর্ড স্পর্শ করে ভারতের শেয়ারবাজার। এদিন বাজার খোলার পরেই সূচকগুলোর দ্রুত উত্থান শুরু হয়। সর্বকালের রেকর্ড গড়ে সেনসেক্স ও নিফটি।
গতকাল ৭৭ হাজার পয়েন্টে উঠে যায় ভারতের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক সেনসেক্স। নজিরবিহীন এই উচ্চতায় ওঠার পর অবশ্য সেনসেক্স কিছুটা নেমেছে। সেনসেক্সের মতো গতকাল নিফটিও সর্বকালের রেকর্ড গড়ে ২৩ হাজার ৪১১ দশমিক ৯০ পয়েন্টে উঠে যায়। এরপর এই সূচকও সেনসেক্সের মতো কিছুটা পড়ে যায়। ৭৭ হাজার ৭৯ দশমিক ০৪ পয়েন্টে ওঠার পর ২০৩ দশমিক ২৮ পয়েন্ট পড়ে সেনসেক্স ৭৬ হাজার ৪৯০ দশমিক ০৮ পয়েন্টে নেমে আসে। নিফটির পতন হয় ৩০ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট; নেমে আসে ২৩ হাজার ২৫৯ দশমিক ২০ পয়েন্টে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া না–পাওয়া নিয়ে গত ১০ দিন ভারতের শেয়ারবাজারে অনেক নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বুথফেরত সমীক্ষার এনডিএ জোটের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের খবর ছড়িয়ে পড়লে শেয়ারবাজার চাঙা হয়। এরপর ভোট গণনায় যখন দেখা গেল, এনডিএ জোট একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না, সেদিন শেয়ার সূচক সেনসেক্সের পতন হয় প্রায় ৬ হাজার পয়েন্ট।
এর পরের তিন দিনের উত্থানে সেই ক্ষতি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে ভারতের শেয়ারবাজার। সেই সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে উচ্চতার নতুন নজির। শুক্রবার প্রায় ১ হাজার ৬১৯ পয়েন্ট উঠে সেনসেক্স পৌঁছে যায় ৭৬ হাজার ৬৯৩ দশমিক ৩৬ পয়েন্টে; সোমবার তা ৭৭ হাজারের ঘর স্পর্শ করল।
ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অবশ্য অভিযোগ, নির্বাচন ঘিরে ভারতের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের জালিয়াতি হয়েছে। দেশটির অন্যান্য বিরোধী দলও তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়েছে।
কেন্দ্রে জোট সরকার গঠন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চিন্তা ছিল। শিল্পমহলের মধ্যেও ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশ আশা করছে, জোট সরকার গঠিত হলেও নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে আর্থিক সংস্কারের গতি বহাল থাকবে। রোববার সরকার গঠনের পরদিন শেয়ারবাজারের এই রেকর্ড উত্থানে ধারণা করা হচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরেছে।
সোমবার যেসব কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে, সেগুলো হলো পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন, আল্ট্রাট্রেক সিমেন্ট, হিরো মোটোকরপ, সিপলা ও এনপিটিসি। পাওয়ার গ্রিড করপোরেশনের শেয়ারের দাম বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে সিপলা, গ্রাসিম, হিরো মোটোকরপ, আল্ট্রাট্রেকের মতো স্টকের দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ।
গতকাল শেয়ারবাজারের যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে, সেগুলো হলো টেক মাহিন্দ্রা, ইনফোসিস, উইপ্রোর মতো স্টক। টেক মাহিন্দ্রার শেয়ারের দাম প্রাথমিকভাবে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়েছিল। এ ছাড়া ইনফোসিস, এমঅ্যান্ডএম ও উইপ্রোর মতো শেয়ারের দাম সেদিন প্রায় ১ থেকে ২ শতাংশ কমেছে।
২০০৪ সালের ২২ মে থেকে ২০১৪ সালের ২৬ মে পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন মনমোহন সিংহ। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে জানা যায়, তাঁর আমলে ভারতের সবচেয়ে পুরোনো শেয়ারবাজার বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক বেড়েছিল প্রায় ৪০০ শতাংশ।
এই তালিকায় মনমোহনের পরেই রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি; তাঁর ১০ বছরের শাসনে সেনসেক্স সূচক প্রায় ২০৩ শতাংশ বেড়েছে। ১৯৯১ সালের ২১ জুন থেকে ১৯৯৬ সালের ১৬ মে—নরসিংহ রাও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সেনসেক্স বেড়েছিল ১৮০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ১৯৯৬ সালের ১৬ মে থেকে ১ জুন—মাত্র ১৬ দিনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন অটল বিহারি বাজপেয়ী। বাজপেয়ীর সেই সংক্ষিপ্ত সময়ে সেনসেক্সের পতন ঘটে। ওই সময় সূচক প্রায় ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ পড়েছিল।