নওগাঁ-৬ (রানীনগর ও আত্রাই) আসনের উপনির্বাচনে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আনোয়ার হোসেন (নৌকা)। ভোট গ্রহণ শেষের আগেই বর্জনের ঘোষণা দেওয়া বিএনপির প্রার্থী শেখ রেজাউল ইসলাম (ধানের শীষ) পেয়েছেন ৪ হাজার ৫১৭ ভোট।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান এই ফলাফল ঘোষণা করেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। রানীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬ হাজার ৭২৫ জন। নির্বাচনে অংশ নেওয়া আরেক প্রার্থী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) খন্দকার ইন্তেখাব আলম (আম) পেয়েছেন ১ হাজার ৮০৫ ভোট।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নওগাঁ শহরের কেডির মোড়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে ভোট কারচুপির অভিযোগে বিক্ষোভ সমাবেশ করে নওগাঁ জেলা বিএনপি। ওই সমাবেশ থেকে আজ রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রানীনগর ও আত্রাই উপজেলায় হরতালের ঘোষণা দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। দিনভর বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে ছয়-সাতজন করে ভোটারের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে সরব উপস্থিতি থাকলেও বিএনপির নেতা–কর্মীদের কোনো উপস্থিতি চোখে পড়েনি। ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বিএনপির ভোট বর্জন
নির্বাচনী এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, সাধারণ ভোটারদের ভোটদানে বাধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে শনিবার বেলা সাড়ে তিনটায় সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির প্রার্থী শেখ রেজাউল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ রেজাউল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের আগে দুই–তিন দিন ধরে বিএনপির নেতা–কর্মীদের মারধর করে ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন আওয়ামী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা। ভোটের দিন সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে বিএনপির সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেন আওয়ামী প্রার্থীর লোকজন।
তিনি আরও বলেন, ১০৪টি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি বুথে ধানের শীষের এজেন্ট দেওয়া হয়েছিল। ৯টার সময় ভোট শুরুর পরপরই আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা বিএনপির এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেন। অনেক কেন্দ্রে বিএনপির সমর্থক হিসেবে পরিচিত এবং কোনো দল করে না, এমন অনেক সাধারণ ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্র সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে বুথে প্রবেশ করলেও তাঁর ভোটার পরিচিতি চিহ্নিত করার পর প্রতীক নির্বাচনের আগেই তাঁদের বের করে দিয়ে আওয়ামী লীগের এজেন্টরা সুইচ টিপে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে দেন।
ভোটার উপস্থিতি কম
শনিবার সকাল থেকে রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রগুলোয় ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। বেশির ভাগ বুথে কোনো ভোটার নেই। মাঝেমধ্যে দু-একজন ভোটার আসছেন ও ভোট দিচ্ছেন।
দুপুর ১২টায় আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রটিতে ভোটারদের কোনো সারি নেই। কিছুক্ষণ পরপর একজন-দুজন করে ভোটার ভোট দিয়ে যাচ্ছেন। ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৩৭৮ জন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২৮০টি, যা মোট ভোটারের ১২ শতাংশের কিছু কম। ওই কেন্দ্রে ছয়টি বুথের কোনোটিতে বিএনপির এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
ওই কেন্দ্রের বাইরে আবদুর কাদের নামে এক ব্যক্তি নিজেকে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট দাবি করে বলেন, সকাল ৯টায় তিনিসহ আরও পাঁচজন ওই কেন্দ্রের বুথে (ভোটকক্ষে) গিয়ে বসেন। বুথে ঢোকার ১০-১২ মিনিট পর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁদের বুথ থেকে বের করে দেন।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জানান, সকালে বিএনপির এজেন্টরা তালিকা দিয়ে ভোটকক্ষে বসেছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর তাঁরা নিজেরাই চলে যান। তাঁদের জোর করে বের করে দেওয়ার কোনো অভিযোগ পাননি। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিয়েছেন।
বেলা তিনটায় আত্রাই উপজেলার আহসনগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের ৮টি বুথে বেলা ৩টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬৫৮টি। ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৪৫৬ জন। এই হিসাবে বেলা তিনটা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে ভোট পড়েছে ১৯ শতাংশ।