হরতাল ও অবস্থান কর্মসূচি সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করলেন কাদের মির্জা
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানাফটকের অবস্থান কর্মসূচি ও হরতাল সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করেছেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। আজ বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি আকস্মিকভাবে এ ঘোষণা দেন।
এ সময় আবদুল কাদের মির্জা বলেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি ও পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল হকের থানা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুবিধার্থে ফটকের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হলো। একই সঙ্গে আজ সকাল থেকে চলা কোম্পানীগঞ্জের হরতালও প্রত্যাহার করা হলো।
কাদের মির্জা কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার সময় আরও বলেন, ‘আমার দাবি অনুযায়ী ফেনীর সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী, নোয়াখালীর সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর অপরাজনীতি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলমগীর হোসেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি, পরিদর্শক (তদন্ত) রবিউল হককে প্রত্যাহার এবং চরকাঁকড়ার আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম ওরফে সবুজকে গ্রেপ্তার করতে হবে।’
কাদের মির্জা তাঁর ওপর ফেনীর দাগনভূঞা ও চট্টগ্রামে হামলার ঘটনার বিচার দাবি করেন। তিনি বলেন, এসব দাবিতে আজ বিকেলে প্রতিটি ইউনিয়নে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। একই দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পুরো কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় হরতাল পালন করা হবে। এরপর আগামী শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত থানার সামনে প্রতিদিন (যত দিন দাবি না মানা হয়) অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। এর ভেতর যদি অন্য কোনো ষড়যন্ত্র করা হয়, তাহলে লাগাতার হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হবে।
কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার পর মুঠোফোনে আবদুল কাদের মির্জা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটা পিঁপড়ের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জেল, জুলুম, অত্যাচার যত কিছু নেমে আসুক, আমি কর্মসূচি থেকে সরব না। নিজাম হাজারী ও একরাম চৌধুরীর অপরাজনীতি বন্ধ এবং ডিসি, এসপি ও ওসির প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি পৌরসভায় অবস্থান করব। তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে আমি সেখান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
এদিকে সেতুমন্ত্রীর ভাই আবদুল কাদের মির্জার এসব কর্মসূচিকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছে। আজ সকালে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা তাঁদের অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, তিনি দলের কোনো পদে না থেকেও যেভাবে তাঁর ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভকে মাঠে নিয়ে এসে একের পর এক কর্মসূচি দিচ্ছেন, তাতে তাঁরা খুবই বিরক্ত। কিন্তু মন্ত্রীর ভাই হওয়ায় প্রকাশ্যে তাঁরা এসব বিষয় নিয়ে কিছু বলতেও পারছেন না, করতেও পারছেন না। তবে কাদের মির্জা সংযত না হলে শিগগিরই দলের ভেতর চাপা থাকা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ্যে রূপ নিতে পারে বলে ওই নেতারা আভাস দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহারের পর সকাল ১০টা নাগাদ কাদের মির্জার সঙ্গে থাকা দলীয় নেতা-কর্মীরা থানার ফটকের সামনে থেকে সরে যান। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটের প্রবেশমুখের সড়কে যেসব ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোও স্থানীয় লোকজন আস্তে আস্তে সরিয়ে নেন।
সর্বশেষ পরিস্থিতি জানার জন্য বেলা ১১টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসিকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। তবে কোম্পানীগঞ্জের ঘটনা পর্যবেক্ষণে গতকাল মঙ্গলবার রাতে পার্শ্ববর্তী কবিরহাট থানায় গিয়ে অবস্থান নেন জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা। তিনি আজ সকালে কর্মসূচি প্রত্যাহার পর্যন্ত কবিরহাটে অবস্থান করেন।
কাদের মির্জার দাবি অনুযায়ী কোম্পানীগঞ্জের ওসি ও পরিদর্শককে (তদন্ত) প্রত্যাহারের কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে দীপক জ্যোতি খীসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এখন সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’
নোয়াখালীর ডিসি, এসপি, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি ও পরিদর্শককে (তদন্ত) প্রত্যাহার এবং সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী ও একরামুল করিম চৌধুরীর অপরাজনীতি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে গতকাল রাত সাড়ে আটটা থেকে কোম্পানীগঞ্জ থানা ঘেরাও করে ফটকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন আবদুল কাদের মির্জা। রাতভর তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সেখানে অবস্থান করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রাতে একপর্যায়ে আজ সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কোম্পানীগঞ্জে হরতালের ডাক দেওয়া হয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কাদের মির্জার অবস্থানকারী দলীয় নেতা-কর্মীদের সংখ্যা কিছুটা কমে এলেও সকাল থেকে তা আবার বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ ৫০০ থেকে ৬০০ নেতা-কর্মী জড়ো হন থানার ফটকে। এতে থানার পাশ দিয়ে যাওয়া বসুরহাট-চাপরাশিরহাট সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। লোকজন তাঁদের প্রয়োজনে থানায় ঢুকতে পারছিলেন না।