নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়ানোর তৎপরতা বন্ধের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা অর্ধদিবস হরতালের সমর্থনে আজ সোমবার রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছিল বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। তবে ছাত্র ইউনিয়নের দুই অংশ একই জায়গায় আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করেছে।
টায়ার জ্বালিয়ে ও রাস্তার পাশের ব্যানার-পোস্টারে অগ্নিসংযোগ করে ব্যারিকেড তৈরির মাধ্যমে আজ সকাল পৌনে ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করেন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় শাহবাগ এলাকায় তৈরি হয় যানজট। কর্মজীবী মানুষদের অনেককেই হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
শাহবাগ মোড়ের রাস্তা আটকে হরতালের সমর্থনে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো সমাবেশ করে। দুটি ব্যানারে চলে এ সমাবেশ। একটি ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশন (গণসংহতি আন্দোলন), গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন।
আর একই দাবিতে পাশেই পৃথক ব্যানারে ছাত্র ইউনিয়নের ফয়েজ উল্লাহ-দীপক শীল নেতৃত্বাধীন অংশের সমাবেশ চলে। কয়েক ফুট দূরত্বের মধ্যে চলা দুই সমাবেশে আলাদা মাইকে বক্তব্য দেওয়া হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশসহ অন্য ছাত্রসংগঠনগুলো শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে কাঁটাবন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে পল্টনে যায়। ছাত্র ইউনিয়নের ফয়েজ-দীপক অংশ তখনো শাহবাগ মোড়ে সমাবেশ করতে থাকে। তারা শাহবাগ ছাড়ে কিছুক্ষণ পর।
জানতে চাইলে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি ও প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ফয়েজ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের এক নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করেছি। আমাদের কিছু নেতা-কর্মীসহ কিছু প্রগতিশীল সংগঠন তাদের ভিকটিম ব্লেমিংকে একধরনের সমর্থন বা বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তাই আমরা আলাদাভাবে পিকেটিংয়ে অংশ নিয়েছি।’
২০ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আকিফ আহমেদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন এক শিক্ষার্থী। পরে আকিফ এ বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক পদত্যাগপত্র দিলে পরের দিন তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে অভিযোগকারী ভবিষ্যতে আইনি পদক্ষেপ নিতে চাইলে সর্বোচ্চ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয় ছাত্র ইউনিয়ন।
তবে এ ক্ষেত্রে সংগঠনের প্যাডে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি ‘বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামের একটি ফেসবুক পেজে পোস্টের মাধ্যমে জানানো হয়। প্রথমে দেওয়া পোস্টের একটি অংশ নিয়ে অনেকে আপত্তি জানালে পোস্টটি মুছে সংশোধিত পোস্ট দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সংগঠনের অবস্থান জানিয়ে আরও একটি পোস্ট করা হয়।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ‘ব্যর্থতা, অপরিণামদর্শিতা ও ভুক্তভোগীর প্রতি অপরাধের’ অভিযোগ তুলে ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের নতুন কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশ। অভিযুক্ত নেতাকে ধর্ষক আখ্যা দিয়ে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবিও জানায় তারা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি এ স্থগিতাদেশ মানছে না।