মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আনতে হবে: আলোচনায় বক্তারা
দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। এ জন্য মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। আর গবেষণার ফলাফলের ওপর গুরুত্ব দিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ের নানা দিক নিয়ে গবেষণা ও তথ্য-উপাত্তভিত্তিক ‘মেন্টাল হেলথ ইন বাংলাদেশ-ফ্রম বেঞ্চ টু কমিউনিটি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। আজ বুধবার রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বইটির সম্পাদক হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী পরামর্শক এস এম ইয়াসির আরাফাত। বইটি প্রকাশ করেছে জার্মান প্রকাশনা সংস্থা স্প্রিংগার।
অনুষ্ঠানে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ সালের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৯ শতাংশ কোনো না কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন। ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ বিষণ্নতা ও প্রায় ৫ শতাংশ উদ্বেগজনিত রোগে ভুগছেন। অথচ মানসিক সমস্যায় ভোগা রোগীদের ৯২ শতাংশ বিজ্ঞানসম্মত কোনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাননি বা নেননি।
প্রতিবেদন অনুসারে, ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে মানসিক রোগে ভোগার হার প্রায় ১৩ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ কখনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসেনি।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এই বিপুল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাবঞ্চিত থাকার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতার অভাব, মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীর স্বল্পতা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র শয্যা-ওষুধ সংকট ও বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্যে নগণ্য বরাদ্দ।
বইটির সম্পাদক এস এম ইয়াসির আরাফাত বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেসব গবেষণা হয়েছে, তার ভিত্তিতে প্রাপ্ত তথ্য এবং গবেষণার কোন ক্ষেত্রগুলোতে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন, বইটিতে সেই দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মানসিক রোগবিশেষজ্ঞ ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় একীভূত করতে হবে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত মানসিক রোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোহিত কামাল, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শফিকুল বারী, কিডনি রোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মামুন মুস্তফি, চর্মরোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রোকন উদ্দিন বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এস এ খান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মুগদা মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সাবেক প্রধান মো. ফাহমিদুর রহমান, সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হাফিজুর রহমান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান মজুমদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামসুল আহসান মাকসুদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুর আহমেদ গিয়াসউদ্দিন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মুনতাসীর মারুফ, সাজেদা ফাউন্ডেশনের মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান রুবিনা জাহান প্রমুখ।