অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকার কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে টিকাটির বিষয়ে সুখবর এল। যুক্তরাষ্ট্রে মানবদেহে টিকার পরীক্ষার পর অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, তাদের টিকাটি বয়স্ক মানুষের শরীরে কোভিড–১৯ প্রতিরোধে ৮০ শতাংশ কার্যকর। আর গুরুতর অসুস্থতা বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি ঠেকাতে শতভাগ কার্যকর। একই সঙ্গে টিকাটি প্রয়োগে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে মানবদেহে টিকার তৃতীয় পর্যায়ে (চূড়ান্ত পর্যায়ে) পরীক্ষা শেষে আজ সোমবার এ তথ্য জানানো হলো।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে টিকাটি উদ্ভাবন করে যুক্তরাজ্য-সুইডেনভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা। টিকাটির কার্যকারিতা প্রমাণে এর আগে মানবদেহে বেশি পরীক্ষা চালানো হয়। তবে এসব পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বয়স্ক ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্যের ঘাটতি থাকায় বেশ কিছু দেশ বয়স্ক ব্যক্তিদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়ার বিরোধিতা করে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে বড় বিতর্ক শুরু হয় চলতি মাসের প্রথম দিকে। এই টিকা গ্রহণের পর রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির ভয়ে বেশ কিছু দেশ ওই টিকাদান স্থগিত রাখে। তবে টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে গত সপ্তাহে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। টিকাটি নিরাপদ বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা দ্য ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা মানবদেহে পরীক্ষা শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্রে এখনো এ টিকার অনুমোদন মেলেনি। দেশটিতে এ টিকার মানবদেহে পরীক্ষার ইতিবাচক ফল টিকাটি অনুমোদনের পথ সুগম করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে তাদের টিকার তৃতীয় পর্যায়ের মানবদেহে পরীক্ষায় ৩২ হাজার ৪৪৯ জন অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে দুই–তৃতীয়াংশের টিকা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশের বয়স ৬৫ বা তার বেশি এবং প্রায় ৬০ শতাংশের স্বাস্থ্যগত অবস্থা কোভিড–১৯–এর জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। তাঁরা ডায়াবেটিস, অত্যধিক স্থূলতা, হৃদ্জনিত রোগে আক্রান্ত। টিকাটি সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের উপসর্গ মোকাবিলায় ৭৯ শতাংশ কার্যকর। আর গুরুতর অসুস্থতা ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ঠেকাতে এই টিকা ১০০ শতাংশ কার্যকর।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টারের সঙ্গে যৌথভাবে ওই পরীক্ষা চালায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টারের মেডিসিনের অধ্যাপক ও টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষার উপপ্রধান অ্যান ফ্যালসি বলেছেন, আগের পরীক্ষাগুলো পাওয়া ফলাফলকেই সমর্থন করছে এ পরীক্ষা। ৬৫ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কার্যকারিতা দারুণ ফল পাওয়া গেছে, যা খুবই উৎসাহব্যাঞ্জক। ফলে অতি প্রয়োজনীয় টিকা হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এই পরীক্ষা। একই সঙ্গে বয়স্ক লোকদের আশ্বস্ত করছে যে ভাইরাস থেকে সব প্রাপ্তবয়স্ককে সুরক্ষা দিতে পারে টিকাটি।
বিবৃতিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা আরও বলেছে, মানবদেহে টিকার পরীক্ষার তথ্য পর্যবেক্ষণের নিরপেক্ষ বোর্ড এক ডোজ করে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের (২১ হাজার ৫৮৩ জন) শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি।