‘পারে না ঘট গড়তে, নিয়ে বসে কুলার (মাটির বড় পাত্র) বায়না’—কথাটা বোধ হয় এই নাপিতের বেলাতেই খাটে। চুল ছাঁটানোর সাধারণ দক্ষতাও নেই তাঁর। সেখানে তিনি ভিনদেশি এক স্টাইলে চুল ছাঁটানোর মুনশিয়ানা দেখাতে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত চুল ছাঁটাতে আসা ব্যক্তির কপালটাই পুড়িয়ে ছেড়েছেন। নাপিতের কপালটাও ফাঁকা যায়নি। ঝুলেছে মামলার খড়্গ। খবর এএফপির।
ফ্রান্সের এই ঘটনাটা সপ্তাহখানেক আগের। তবে দেশটির পুলিশ বিষয়টি প্রকাশ করেছে গত শুক্রবার। অবশ্য ঘটনার দুই পক্ষের কারও নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি তারা।
পুলিশ বলছে, ফ্রান্সের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা লানিয়ন। সেখানকার ছোট্ট শহর ব্রিটানিতে ওই সেলুনের দোকানের অবস্থান। দোকানমালিক পেশায় এক মেকানিক। তাঁর দোকানে আছেন তিনজন কর্মী। মালিকের নেই পেশাসংশ্লিষ্ট শিক্ষা; নেই তাঁর কর্মীদেরও।
সেলুনের তিন কর্মীর একজন লিবিয়ার নাগরিক। তিনিই ঘটিয়েছেন ওই কাণ্ড। সপ্তাহখানেক আগে তাঁর কাছে একজন চুল ছাঁটাতে আসেন। ওই নাপিত মিসরীয় এক পদ্ধতিতে চুল ছাঁটানোর চেষ্টা করেন। বিশেষ এই পদ্ধতিতে আগুন দিয়ে হালকা করে চুল পুড়িয়ে নেওয়া হয়। এতে করে চুলে নিত্যনতুন স্টাইল করা যায়। তবে লিবীয় ওই নাপিত এর কিছুই বোঝেন না। তবু তিনি তা প্রয়োগ করতে শুরু করেন।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা ডেনিয়েল কারড্রাওন বলেন, ওই ব্যক্তির মাথার চুলে জেল লাগিয়ে নেন। এরপর হঠাৎ গ্যাস লাইটার জ্বেলে চুলে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যান ওই ব্যক্তি। ভয়ে দ্রুত আসন ছেড়ে উঠে পড়েন। ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গেছে। আগুনে তাঁর কপালটা পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে ঘটনাটা শুনে আশ্চর্যই হয়েছিলাম। একজন নাপিত কেন এভাবে তাঁর গ্রাহকের কপালে আগুন ধরিয়ে দেবেন, বুঝতেই পারছিলাম না। তদন্তের পরই বুঝতে পারি আসল ঘটনা।’
ওই ব্যক্তির কপালের ক্ষতটা নিশ্চয় কম যায়নি। ঘটনার পরে সপ্তাহখানেক কাজকর্ম ছেড়ে তিনি বাড়িতে বসে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরই তিনি পুলিশের কাছে গিয়ে মামলা ঠুকে দিয়েছেন। এরপর পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে দোকানমালিক ও কর্মীদের সংশ্লিষ্ট শিক্ষা না থাকাসহ অন্যান্য তথ্য। চুল ছাঁটানোর মিসরীয় ওই স্টাইল ফ্রান্সে এসেছেই অল্প কিছুদিন আগে। বিষয়টি ঠিকমতো রপ্ত না করেই ত্রিশের কোটায় থাকা ওই লিবীয় নাপিত তা প্রয়োগ করতে গিয়ে অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছেন। তিনিসহ সেলুনের তিন কর্মীকেই দোকানমালিক যেমন অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন, তেমনি তাঁর বিরুদ্ধে আছে কর জালিয়াতির অভিযোগও। এ অবস্থায় সেলুনের দোকানটি বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।
ঘটনাটা নিয়ে বেশ আলোচনা জমেছে। কেউ কেউ টিপ্পনী কেটে বলছেন, এখন থেকে চুল ছাঁটাতে সেলুনে যাওয়ার আগে তাঁরা দ্বিতীয়বার ভাববেন। কারণ, মাথার এলোচুলগুলো একটা সমস্যা বটে। তবে সেগুলো ঠিকঠাক করতে সেলুনে গিয়ে নিশ্চয় কেউ নিজের কপালটা পোড়াতে চাইবেন না!