করোনার পর নতুন চ্যালেঞ্জ মাঙ্কিপক্স: ডব্লিউএইচও
বিশ্বে করোনা মহামারির পর নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে মাঙ্কিপক্স ও যুদ্ধ। এ পরিস্থিতিতে বিশ্ব ‘ভয়াবহ’ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত রোববার ডব্লিউএইচও প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস জেনেভায় মাঙ্কিপক্স ছড়ানো নিয়ে এসব কথা বলেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, তেদরোস জেনেভায় জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আফ্রিকার বাইরে ১৫টি দেশে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
আফ্রিকার বাইরে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলে ৮০ জনের বেশি মানুষের শরীরে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। যদিও ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি কম। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এটা বেশি দেখা যায়। এই রোগে খুব সহজে মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় না। আক্রান্ত হলেও অসুস্থতা তেমন গুরুতর হয় না।
ইউকে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস জানায়, মাঙ্কিপক্সে সংক্রমিত বেশিরভাগ রোগীই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেরে ওঠেন। তবে মাঙ্কিপক্স তেমন গুরুতর না হলেও হঠাৎ রোগটির প্রাদুর্ভাব বিজ্ঞানীদের উদ্বিগ্ন করেছে। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই রোগে আক্রান্তদের জন্য নতুন নির্দেশাবলি দিয়েছেন। উচ্চঝুঁকিতে থাকা সংক্রমিত ব্যক্তিদের তিন সপ্তাহ স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
ডব্লিওএইচও সম্মেলনের শুরুতে তেদরোস বলেন, ‘অবশ্যই এই (করোনা) মহামারি বিশ্বের একমাত্র সংকট নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা আমাদের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। যাঁরা গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে ইবোলা প্রাদুর্ভাব, মাঙ্কিপক্স ও অজানা কারণে সংক্রমিত হেপাটাইটিস এবং আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, ইউক্রেন ও ইয়েমেনের জটিল মানবিক সংকটে কাজ করেছে। আমরা রোগের ভয়াবহ বিস্তৃতির মুখোমুখি হয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈষম্য এবং ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে সৃষ্ট রোগ, খরা, দুর্ভিক্ষ ও যুদ্ধের এক ভয়ংকর প্রভাবেরও মুখোমুখি হয়েছি আমরা।’
ডব্লিউএইচও এর আগে বলেছিল, অনেকগুলো সন্দেহভাজন মাঙ্কিপক্সের ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কোন দেশগুলোতে এসব সন্দেহভাজন মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ ঘটনার তদন্ত চলছে, সেটি জানায়নি। তবে সংস্থাটি সতর্ক করে বলে, নিশ্চিতভাবেই আরও নতুন রোগী শনাক্ত হতে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর ইউরোপজুড়েই এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্তের কথা নিশ্চিত করে স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেন। রোববার অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ডও মাঙ্কিপক্স শনাক্তের কথা জানায়। ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সি এখন পর্যন্ত ২০ জন নিশ্চিত রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছে।
রোববার বিবিসি টিভিকে সংস্থাটির প্রধান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সুসান হপকিন্স বলেন, ‘প্রতিদিনই নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ভাইরাসটি এখন সামাজিকভাবে সংক্রমিত হচ্ছে। এমন ব্যক্তিও মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছেন, যিনি কখনো আফ্রিকা যাননি। মাঙ্কিপক্সকে ওই অঞ্চলের স্থানীয় রোগ মনে করা হয়। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের ঝুঁকি ‘অত্যন্ত কম’ বলেও উল্লেখ করেন হপকিন্স।