বিশ্বে প্রেসিডেন্ট পদে আছেন যে নারীরা
বিশ্বের বেশ কয়টি দেশে বর্তমানে প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। তাঁদের অনেকেই আবার নিজ নিজ দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েছেন। বিশ্বে বর্তমানে দায়িত্বরত নারী প্রেসিডেন্টদের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
দ্রৌপদী মুর্মু, ভারতের রাষ্ট্রপতি
আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হয়ে সম্প্রতি ইতিহাস গড়েন ৬৪ বছর বয়সী দ্রৌপদী মুর্মু। ওডিশার সাঁওতাল পরিবারে জন্মগ্রহণ করা এই নারীকে এ পদে আসতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। স্নাতক শেষ করার পর ওডিশার সেচ বিভাগে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন দ্রৌপদী। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে স্কুলশিক্ষক ছিলেন তিনি। ২৫ জুলাই তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।
ডেম স্যান্ড্রা মেসন, বারবাডোজের প্রেসিডেন্ট
গত বছর বারবাডোজে সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের অবসান হয় এবং দেশটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। এরপর ক্যারিবীয় দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডেম স্যান্ড্রা মেসন। এর আগে ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশটির গভর্নর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৮ সালে বার্বাডোজের আপিল আদালতের প্রথম নারী বিচারপতি নিয়োজিত হন স্যান্ড্রা। লন্ডনভিত্তিক কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট আরবিটাল ট্রাইব্যুনালের (সালিসি আদালত) সদস্য হিসেবে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যকার বিবাদ মীমাংসার জন্য স্যান্ড্রাকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়।
কাতেরিনা সাকেলারোপুলু, গ্রিসের প্রেসিডেন্ট
প্রথম গ্রিক নারী প্রেসিডেন্ট কাতেরিনা সাকেলারোপুলু একজন প্রখ্যাত বিচারক। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে গ্রিসের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত কাউন্সিল অব স্টেটের প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন পদে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। থেসালোনিকির অ্যারিস্টটল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে ডক্টরেট করেছেন কাতেরিনা। বিশিষ্ট কলাম লেখক কাতেরিনা পরিবেশ, নগর উন্নয়ন আইন ও লিঙ্গসমতা ইস্যুতে বেশ কিছু নিবন্ধ লিখেছেন।
হালিমা ইয়াকুব, সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট
হালিমা ইয়াকুব সিঙ্গাপুরের অষ্টম প্রেসিডেন্ট। দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট তিনি। তাঁর মা মালে এবং বাবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত। পেশায় আইনজীবী হালিমা ২০০১ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পরে সমাজ উন্নয়ন, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এর পর থেকে হালিমার রাজনৈতিক উত্থান অব্যাহত থাকে। ২০১৩ সালে তিনি দেশটির প্রথম নারী হিসেবে পার্লামেন্টে স্পিকার নির্বাচিত হন।
বিদ্যা দেবী ভান্ডারি, নেপালের প্রেসিডেন্ট
বিদ্যা দেবী ভান্ডারি নেপালের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং পরিবেশ ও জনসংখ্যাবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বিদ্যা। প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার আগে অল নেপাল উইমেন’স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। নারী অধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করার জন্য সমাদৃত বিদ্যা দেবী।
সাই ইং ওয়েন, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট
তাইওয়ানের রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদ সাই ইং ওয়েন স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তাইওয়ানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট। তিনিও তাইওয়ানের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। আইন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন সাই। ন্যাশনাল তাইওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, কর্নেল এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি। সাইকে নিয়মিত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারীদের একজন হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে টাইম সাময়িকী।
সালোমে জুরাবিচভিলি, জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট
জর্জিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট সালোমে জুরাবিচভিলি একজন সাবেক কূটনীতিক। ফ্রান্সের প্যারিসে জর্জিয়ার রাজনৈতিক শরণার্থী পরিবারে জন্ম নেন তিনি। সত্তরের দশকে ফ্রান্সের কূটনৈতিক মিশনে যোগ দেন জুরাবিচভিলি। ২০০৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত জর্জিয়ায় ফরাসি রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। পরে জর্জিয়ার জাতীয়তা গ্রহণ করেন জুরাবিচভিলি। সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে জুরাবিচভিলি জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। নারী অধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করার জন্য পরিচিত তিনি।
সাহলে ওয়ার্ক জিউড, ইথিওপিয়ার প্রেসিডেন্ট
ইথিওপিয়ার কূটনীতিক সাহলে ওয়ার্ক জিউড ২০১৮ সাল থেকে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োজিত আছেন। তিনি ইথিওপিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। এর আগে নাইরোবিতে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ২০১৮ সালের জুন মাসে সাহলে আফ্রিকান ইউনিয়নে জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পান। একই সঙ্গে আফ্রিকান ইউনিয়নে জাতিসংঘের প্রধান হিসেবেও নিযুক্ত হন তিনি। এ দুই পদে কাজ করা প্রথম নারী হিসেবে সাহলে তাঁর দেশের প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতীকে পরিণত হন। সূত্র: গালফ নিউজ