যে কারণে আফ্রিকায় ট্রাম্প বেশি জনপ্রিয়
আফ্রিকায় কখনো পা পড়েনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। আফ্রিকা মহাদেশ নিয়েও খুব একটা মাথাও ঘামান না এই প্রেসিডেন্ট। এর আগে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বা শরণার্থী প্রবেশ ইস্যুতে আফ্রিকা ‘অত্যন্ত নোংরা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প। তবে এবার চমকপ্রদ তথ্য হচ্ছে অন্য যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে আফ্রিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশি জনপ্রিয়। ওয়াশিংটনভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপে আফ্রিকায় ট্রাম্পের বেশি জনপ্রিয়তার বিষয়টি উঠে আসে।
প্রতিষ্ঠানটির জরিপের বরাত দিয়ে দ্য ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, ৫৯ শতাংশ নাইজেরীয় ও ৫৬ শতাংশ কেনীয় নাগরিক বিশ্বাস করেন, বিশ্ব ইস্যুতে ট্রাম্প ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করেন। নাইজেরিয়া ও কেনিয়ার তুলনায় ট্রাম্প নিয়ে আগ্রহ কম দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের। তবে সেখানেও ৩৯ শতাংশ মানুষ ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডে আত্মবিশ্বাস রাখেন। বিশ্বব্যাপী ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার চেয়ে এখনো ১২ শতাংশ জনপ্রিয়তা বেশি আফ্রিকায়। অবশ্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে কেনিয়ায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। কারণ, ওবামার বাবা ছিলেন কেনীয় নাগরিক।
বারাক ওবামা কেনীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন বলেই কেনিয়ায় তাঁর জনপ্রিয়তা বেশি ছিল বলে মনে করা হয়। এদিকে ফ্রান্সের প্যারিসভিত্তিক বাজার গবেষণা কোম্পানি ইপসসের এক জরিপে বলা হয়, ৩৮ শতাংশ কেনীয় নাগরিক আমেরিকান প্রেসিডেন্টের নাম জানেন না। এ জন্য সম্ভবত অনেকে বিষয়টি এড়িয়ে যান। মার্কিন প্রেসিডেন্টের নাম না জানার বিষয়টি কারও কারও জন্য কষ্টেরও বটে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষক রিচার্ড উইকের ভাষ্য মতে, সম্ভবত আফ্রিকানরা ট্রাম্পকে পছন্দ করেন, কারণ তাঁরা আমেরিকাকে ভালোবাসেন। নাইজেরিয়ান, কিনীয় ও দক্ষিণ আফ্রিকানরা সম্ভবত দ্বিগুণ আমেরিকান মতাদর্শ ধারণ করেন। আমেরিকান সংস্কৃতি নিঃসন্দেহ ফ্যাশনেবল। ‘ব্লাক প্যান্থার’ ছবি আফ্রিকাতে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। হিপ-হপ সংগীত ও আমেরিকান ফাস্ট ফুড সংস্কৃতি আফ্রিকায় তুমুল জনপ্রিয়।
আফ্রিকার অনেক মানুষের স্বপ্নের জায়গা যুক্তরাষ্ট্র। এই দেশে অভিবাসী হওয়ার যথেষ্ট আগ্রহ অনেকেরই আছে। এতে দেশটির সংস্কৃতি ও প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুরাগের জন্ম হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকান কমেডিয়ান ট্রেভর নোয়া ট্রাম্প সম্পর্কে তাঁর মত, উগান্ডার প্রয়াত একনায়ক আইডি আমিনের মতো ট্রাম্পের দম্ভ তাঁর স্বাস্থ্যে, ক্ষমতায় ও মস্তিষ্কে। কেউ কেউ মনে করেন, ট্রাম্পের স্টাইলই হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশকে কম জ্বালাতন করা।
মোগাদিসুর যুক্তিবিদ সাদ্দাম হোসেন আদানি বলেন, ‘সোমালিয়ার বাবা-মায়েরা ক্ষমতাধর মানুষের নামে তাঁদের ছেলেদের নাম রাখতে চান। ট্রাম্প যদি একজন মুসলিম হতেন, আমি নিশ্চিত আজ কিছু ছেলের নাম ডোনাল্ড থাকত।’
চীনের বিপক্ষে ট্রাম্পের শক্ত অবস্থান নেওয়ায় কেনিয়ার রিফট ভ্যালিতে দিনের বেলা পানীয় সেবনকারীরা ট্রাম্পের যথেষ্ট প্রশংসা করেন। কেনীয়রা একজন আমেরিকানের নেতৃত্বে বিশ্ব শাসন করাকে অগ্রাধিকার দেন।
আফ্রিকানরা ট্রাম্পকে পছন্দ করার আরও একটি কারণ হতে পারে আফ্রিকা সম্পর্কে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ইতিবাচক মনোভাব। দেরিতে হলেও আফ্রিকা সম্পর্কে ভালো কথা বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের সাম্প্রতিক আফ্রিকা সফর নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষ্য, ‘আফ্রিকা অত্যন্ত সুন্দর।’