তালেবানের কাবুল দখল, বাইডেনের পদত্যাগ চাইলেন ট্রাম্প
আফগানিস্তানে তালেবানের হাতে রাজধানী কাবুলের পতন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে পদত্যাগ করতে বললেন তাঁরই পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিযোগ, বাইডেনের কারণে মার্কিন বাহিনীকে শূন্য হাতে আফগানিস্তান ছাড়তে হয়েছে। তিনি ক্ষমতায় থাকলে দেশটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার আরও সফলতার সঙ্গে হতো। খবর আল–জাজিরার।
এক বিবৃতিতে রোববার বাইডেনের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আফগানিস্তানে যা ঘটতে দিয়েছেন, তাতে অপমানবোধ থেকে তাঁর (বাইডেন) পদত্যাগ করা উচিত।’
ট্রাম্পের আমলে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সেনা প্রত্যাহার করতে আফগান তালেবানের সঙ্গে চুক্তি সই হয় ওই সময়। তবে বাইডেন ক্ষমতায় এসে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার পুরোপুরি শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করেন। শুরু হয় প্রত্যাহার কার্যক্রম। আর তখন থেকেই তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে।
এ ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার কাবুলে প্রবেশ করে তালেবান যোদ্ধারা। এ সময় আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ ছেড়ে তাজিকিস্তানের উদ্দেশে রওনা হন। এর পরপরই আফগানিস্তানের প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করে তালেবান বাহিনী।
এখন আফগান সরকার একটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের’ হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে বলে শোনা যাচ্ছে। সে বিষয়ে তালেবান ও সরকারের মধ্যে আলোচনাও শুরু হয়েছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দেশটির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও কূটনীতিক আলী আহমাদ জালালির নাম শোনা যাচ্ছে।
তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন রোববার বিবিসিকে বলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে বলে তাঁরা আশা করছেন। কাবুলের জনগণের জানমাল নিরাপদ রাখা এবং নারীদের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মী ও কূটনীতিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন তিনি।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ হামলার পর আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে আফগানিস্তানে অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী। এরপর দুই দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী এবং পরে তাদের সহায়তায় গড়ে ওঠা আফগান সামরিক বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের যুদ্ধ চলে আসছিল। গত ১ মে আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর থেকে তালেবানের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।
তবে এত দ্রুত কাবুলের পতন হবে—এমনটা হয়তো ভাবতে পারেননি কেউ। বিষেশত, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে মার্কিন অস্ত্রে সজ্জিত আফগান বাহিনীর মনোবল তালেবানের সামনে এভাবে ভেঙে পড়বে, এটাই চিন্তার বাইরে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। তাই তো তালেবানের কাবুল দখল ও আশরাফ গনির দেশত্যাগের খবরের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন স্বীকার করেন, তালেবানের দেশ দখল তাঁদের ধারণার চেয়ে দ্রুত হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনা রেখে আফগানিস্তানের স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করার ভাবনা ঠিক নয়। এখন আমেরিকার সব নাগরিককে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার ওপরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ উদ্ধার কার্যক্রমে তালেবান কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে আফগানিস্তানের এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নন বাইডেন। গত সপ্তাহে যখন তালেবান যোদ্ধারা দ্রুতগতিতে এগোচ্ছিল, তখনো বাইডেন বলেছিলেন, আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে তাঁর কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি বলেছিলেন, আফগানিস্তানকে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেগুলো রক্ষা করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে আফগান সেনাবাহিনীর বেতন, তাদের খাবার ও সরঞ্জাম সরবরাহ এবং বিমানসহায়তা। তবে যুদ্ধটা তাদের নিজেদের স্বার্থেই করতে হবে।