ট্রাম্প ভাঙা রেকর্ড বাজাচ্ছেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের এক মাস পরও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে চলেছেন।

আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে বহু খারাপ ব্যাপার ঘটে গেছে।

ভোট জালিয়াতি নিয়ে নিজের দাবি সঠিক হলে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেন।

৪৬ মিনিটের রেকর্ড করা ট্রাম্পের বক্তৃতা কোনো সংবাদমাধ্যম সরাসরি সম্প্রচার করেনি। ফেসবুক ও টুইটারে তিনি তাঁর বক্তৃতার ভিডিও প্রকাশ করেন। এই মাধ্যম দুটি ট্রাম্পের বক্তৃতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে মন্তব্যসহ তা প্রকাশ করেছে।

নির্বাচনের পর থেকে টুইটার ও ফেসবুকে ভোট জালিয়াতির প্রমাণহীন অভিযোগের কথা ট্রাম্প বারবার বলছেন। তাঁকে ষড়যন্ত্র করে পরাজিত করা হয়েছে বলে দাবি ট্রাম্পের। তাঁর ভাষ্য, নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার মতো প্রমাণ তাঁর প্রচার শিবিরের হাতে রয়েছে।

নির্বাচনের দিন শেষ রাতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের সুইচ টিপে তাঁর ভোট বদল করে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেনকে দেওয়া হয়েছে বলে ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতায় অভিযোগ করেন।

যদিও এক দিন আগে ট্রাম্প প্রশাসনের অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার মতো কারচুপির কোনো তথ্য তাঁদের কাছে নেই।

ভয়ংকর সব জালিয়াতির মূল উৎপাটন না করলে আমেরিকা আর কোনো দেশ থাকবে না বলে ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন।

নির্বাচনের পর ট্রাম্প শিবির থেকে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে আনা একের পর এক মামলা আদালতে খারিজ হয়েছে। কোথাও কার্যকর কোনো তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি ট্রাম্পের আইনজীবীরা।

এখন পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া ও মিশিগানের মতো সুইং স্টেটের অঙ্গরাজ্য পর্যায়ের আইনপ্রণেতাদের দিয়ে ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টায় আছেন ট্রাম্প। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা। ট্রাম্প বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে নিজের সমর্থক কিছু লোক দিয়ে ভোট কারচুপি প্রত্যক্ষ করার অ্যাফিডেভিট করিয়েছেন। ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, তিনি আশা করেন, সুপ্রিম কোর্ট তাঁর অভিযোগ শুনবেন।

ডেমোক্রেটিক পার্টি করোনা মহামারিকে একটা অজুহাত হিসেবে নিয়ে ডাক–ভোটের ফাঁদে তাঁকে নির্বাচনে হারানোর চেষ্টা করেছে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প। মৃত লোকজন, অবৈধ অভিবাসী—এমন লোকজন ডাকযোগে লাখ লাখ ভোট দিয়েছেন বলে ট্রাম্পের দাবি। ডেমোক্রেটিক পার্টি পদ্ধতিগত ভোট জালিয়াতি করেছে বলে অভিযোগ ট্রাম্পের।

যেকোনো হিসাবে তাঁর মতো একজন প্রার্থীর ভোটে হেরে যাওয়া পরিসংখ্যানগতভাবে অসম্ভব বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন।

একাধিক অঙ্গরাজ্যে পুনর্গণনা করেও ভোটের ফলাফলে কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা যায়নি। তারপরও ট্রাম্প নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করছেন না। আমেরিকার ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি।

নির্বাচনে বিজয়ী বাইডেন নিজের শহর ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটন থেকে তাঁর প্রশাসনের কার্যক্রমের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।

সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করবেন। তার আগে ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে আদৌ কোনো ফল পাবেন বলে কেউ মনে করেন না।

নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে ঐতিহ্য অনুযায়ী আগের প্রেসিডেন্টের উপস্থিত থাকার ঘটনাও এবারে ঘটবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্পের অমূলক অভিযোগের বিপক্ষে রিপাবলিকান পার্টির মূল লোকজন প্রকাশ্যে কোনো অবস্থান নিচ্ছেন না।

ট্রাম্প তাঁর ভিত্তিহীন দাবি দিয়ে ইতিমধ্যে সমর্থকদের উল্লেখযোগ্য অংশকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। যেসব অঙ্গরাজ্যে ভোট কারচুপির কথা বলে ট্রাম্প ফলাফল উল্টে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন, সেসব অঙ্গরাজ্যে নির্বাচন পরিচালনায় রিপাবলিকান পার্টির কর্মকর্তারাই ছিলেন। নিজের পক্ষে না থাকলে যেকোনো রিপাবলিকানকেও নাম ধরে কড়া কথা বলছেন ট্রাম্প।

জর্জিয়াসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্প–সমর্থকেরা এখনো সভা-সমাবেশ করছেন। যদিও এমন সভা-সমাবেশের বিবরণ মার্কিন সংবাদমাধ্যম এড়িয়ে যাচ্ছে।

৩ নভেম্বরের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ক্রমাগত প্রয়াসের ফলে ট্রাম্প-সমর্থকদের সভা-সমাবেশ একপর্যায়ে সহিংস হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঠিক কবে ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছাড়বেন, এ নিয়ে কেউ নিশ্চিত নন। মার্কিন একাধিক সংবাদমাধ্যম বলেছে, বড়দিনের অবকাশে ফ্লোরিডায় নিজের আস্তানায় যাবেন ট্রাম্প। কড়দিন উৎসব সেখানেই পালন করে তিনি আর হোয়াইট হাউসে না-ও ফিরতে পারেন।

যদিও ট্রাম্প ২০ জানুয়ারির আগে, এমনকি তার পরেও নির্বাচন নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ করে যাবেন বলে সবাই মনে করছে। ৩ নভেম্বরের ভোট নিয়ে নিজের সমর্থকদের মধ্যে সন্দেহ জোরদার করার জন্যই তিনি এসব করছেন।

আরেক দফা হোয়াইট হাউসে থেকে যাওয়ার স্বপ্ন থেকে সরে দাঁড়াতে পারছেন না ট্রাম্প। ট্রাম্প ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে হলেও আবার হোয়াইট হাউসে ফিরতে চান তিনি।