টেক্সাসে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি পরিবারের ছয় সদস্যের দাফন
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালেন শহরে বাংলাদেশি পরিবারের ছয় সদস্যের লাশ স্থানীয় সময় আগামীকাল বৃহস্পতিবার দাফন করা হতে পারে। এই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন মহল থেকে যুব-তরুণদের প্রতি পরিবারের অধিক নজর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় গত রোববার রাতে অ্যালেন শহরে বসবাসরত বাংলাদেশি একটি পরিবারের ছয় সদস্যের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন যমজ ভাই-বোন ফারহান তৌহিদ ও ফারবিন তৌহিদ (১৯), বড় ভাই তানভীর তৌহিদ (২২), মা আইরিন ইসলাম (৫৬), বাবা তৌহিদুল ইসলাম (৫৪), তানভীর তৌহিদের নানি আলতাফুন্নেসা (৭৭)। মা, বাবা, বোন ও নানিকে হত্যার পর দুই ভাই আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। এ নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ছয়জনের মধ্যে দুজনের মরদেহ স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে অ্যালেন নগরীর পুলিশ। বাকি চারজনের মরদেহ সব প্রক্রিয়া শেষ করে আজ বুধবার হস্তান্তর করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস ছয়জনের লাশ দাফনের ব্যবস্থা করছে। অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হাশমত মোবীন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, নিহত তৌহিদুল ইসলামের ভাই ও আইরিন ইসলামের ভাই টেক্সাসে এসেছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় জানাজা ও দাফনের সময়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তিত সময়সূচি অনুযায়ী, অ্যালেন শহরের যে মসজিদে পরিবারটির সদস্যরা যেতেন, সেখানেই তাঁদের জানাজা হবে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজের পর ছয়জনের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে পার্শ্ববর্তী ডেন্টন শহরের মুসলিম কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হবে।
বাংলাদেশি পরিবারের ছয় সদস্যের এমন মৃত্যুর ঘটনা দুদিন ধরে মার্কিন সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। যুব-তরুণদের মধ্যে হতাশার কারণ, পরিবারের সঙ্গে সংযোগহীনতা, সাংস্কৃতিক সংঘাতসহ আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র আইনের মতো বিষয়গুলো এসব সংবাদে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসের প্রেসিডেন্ট হাশমত মোবীন বলেছেন, স্বপ্ন ও সম্ভাবনার দেশে এসে প্রবাসীরা নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে সন্তানদের বড় করছেন। সন্তানদের গড়ে তুলছেন। অধিকাংশ পরিবারের সন্তানেরা ভালো করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, সন্তানদের উল্লেখযোগ্য অংশকে হতাশা নীরবে গ্রাস করছে। এ অবস্থায় আশু করণীয় নির্ধারণের জন্য সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আলোচনা-পরামর্শের জন্য অচিরেই আমেরিকার প্রতিনিধিত্বশীল প্রবাসীদের নিয়ে সভা আয়োজন করা হবে।
পেনসিলভানিয়ার ড্রেক্সেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের খ্যাতনামা অধ্যাপক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কিছু বাংলাদেশি যুব-তরুণদের অকালে হারিয়েছি। প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য ঘটনাগুলো মর্মান্তিক। সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। এ জন্য যুব-তরুণদের কথা আমাদের মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানে আমাদের কাজে নেমে পড়তে হবে।’
অ্যালেন পুলিশ জানিয়েছে, ‘সুইসাইড নোট’ থেকে মনে করা হচ্ছে, ফারহান ও তানভীর হতাশা-মানসিক বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। পরিবারকে লজ্জা ও কষ্ট থকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দুই ভাই সবাইকে হত্যা করে নিজেরা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে সুইসাইড নোটে উল্লেখ রয়েছে। সুইসাইড নোটে হত্যার পরিকল্পনার কথাও লেখা আছে।
তানভীর কিছুদিন আগে আইন সম্মতভাবে আগ্নেয়াস্ত্র কিনেছিলেন বলে জানিয়েছে অ্যালেন পুলিশ। তারা ছয়জনের লাশ উদ্ধারের সময় বাড়িটিতে আগ্নেয়াস্ত্রও পায়। ছয়জনই গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রায় ২২ বছর আগে ডিভি ভিসায় তৌহিদুল আমেরিকায় আসেন। তৌহিদুলের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকায়। পরিবার নিয়ে প্রথম দুই বছর নিউইয়র্কে ছিলেন তিনি। ২০ বছর আগে টেক্সাসে স্থানান্তরিত হন। প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তিতে কাজ করতেন তিনি। সম্প্রতি সিটি ব্যাংকের ভালো পদে কাজ করছিলেন তৌহিদুল।