- কমলা কি পারবেন
- যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা কি সরাসরি ভোট দেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে
- ট্রাম্প কি ক্লেভল্যান্ডকে ধরতে পারবেন
- গর্ভপাত বিষয়ে ট্রাম্প যা বললেন
- টেলর সুইফটের সমর্থন পেয়েছেন কমলা হ্যারিস
কমলা–ট্রাম্পের বিতর্ক করমর্দনে শুরু
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি বিতর্ক শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত নয়টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৭টায়) মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এবিসি নিউজ এ বিতর্কের আয়োজন করে। ফিলাডেলফিয়ার ন্যাশনাল কনস্টিটিউশন সেন্টারে হচ্ছে এ বিতর্ক।
এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় বিতর্ক। আর কমলার প্রথম। তবে দুজনের একসঙ্গে প্রথম। কারণ এর আগে জুনে জো বাইডেনের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রথম বিতর্ক হয়।
৯০ মিনিটের এই বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজক মার্কিন গণমাধ্যম এবিসি নিউজ। বিতর্কের সঞ্চালক ডেভিড মুইর ও লিনসে ডেভিস।
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে লড়তে চেয়েছিলেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ৮১ বছর বয়সী বাইডেন গত ২৭ জুন রাতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টায় সিএনএনের স্টুডিওতে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নির্বাচনী বিতর্কে অংশ নেন।
বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে ধরাশায়ী হন বাইডেন। তাঁর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য তাঁর ওপর চাপ বাড়ে। চাপের মুখে তিনি গত ২১ জুলাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে দলের নতুন প্রার্থী হিসেবে তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানান তিনি।
গত ১৮ জুলাই মিলওয়াউকিতে রিপাবলিকান পার্টির সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন গ্রহণ করেন ট্রাম্প।
আর গত ২২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় ডেমোক্রেটিক পার্টির চার দিনের জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে কমলা আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়ন গ্রহণ করেন।
বিতর্কের শুরুতে করমর্দন করেন ট্রাম্প ও হ্যারিস। এ বিতর্কের অন্যতম বিষয় অর্থনীতি দিয়েই বক্তব্য শুরু করেন কমলা। এরপরেই ট্রাম্পই একই পথে হাঁটেন।
যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সব পেয়েছির দেশ’ বলে থাকেন অনেকে। সেই দেশে এখনো কোনো নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। এবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতলে ইতিহাস গড়বেন কমলা হ্যারিস। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবার কোনো নারী প্রেসিডেন্টের পদে বসবেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্টও তিনিই। এবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইতিহাস গড়তে পারেন কি না , অপেক্ষা ৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
ট্রাম্প্রের প্রজেক্ট ২০২৫–কে ‘বিপজ্জনক পরিকল্পনা’ বললেন হ্যারিস
কমলা হ্যারিস বলেন, ট্রাম্প আমাদের কর্মসংস্থানের সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্য রেখে গেছেন। আমরা (ডেমোক্র্যাটরা) যা করেছি, তা হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের খারাপ অবস্থা পরিষ্কার করেছি। ‘প্রজেক্ট ২০২৫’–এর কথাও উল্লেখ করেছেন। কমলা একে ‘বিপজ্জনক পরিকল্পনা’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিতর্কের শুরুতে ট্রাম্পকে আক্রমণ করে কমলা বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার সময়ে আমাদের কর্মসংস্থানকে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলেন। বেকারত্বের হার ছিল মন্দার পর সবচেয়ে বাজে অবস্থায়।
কমলা ভোটারদের বলেন, ‘আপনাদের জন্য ট্রাম্পের কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ, তিনি আপনার খোঁজ করার চেয়ে নিজেকে রক্ষা করতে বেশি আগ্রহী।’
কর কমানোর বিষয়ে ট্রাম্পকে আক্রমণ কমলা হ্যারিসের
প্রথম প্রশ্ন ছিল অর্থনীতি নিয়ে। প্রথম প্রশ্নটি হলো অর্থনীতির ক্ষেত্রে ‘আপনি কি বিশ্বাস করেন যে আমেরিকানরা চার বছর আগের চেয়ে ভালো আছে?’
প্রথমে উত্তর দেন হ্যারিস। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতিতে তিনি সবার জন্য সুযোগ তৈরি করতে চান। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি। তিনি নতুন পরিবারের জন্য (যারা নতুন পারিবারিক জীবন শুরু করেছেন) তাদের জন্য আবাসনের খরচ কমিয়ে আনতে চান।
কর কমানোর বিষয়ে ট্রাম্পকে আক্রমণ করেন কমলা হ্যারিস। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প ‘আগে যা করেছেন তা করার’ এবং ‘ধনকুবের এবং করপোরেশনগুলোর জন্য ট্যাক্স কাটছাঁট’ করার পরিকল্পনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যে করের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের নীতিতে আমেরিকানরা ‘নিত্যদিনের পণ্যের’ ওপর কর দিতে বাধ্য হবে।
কমলা কি পারবেন
জর্জ ওয়াশিংটন থেকে জো বাইডেন। ১৭৮৯ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত ৪৫ জন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। হোয়াইট হাউসের মসনদে এখনো কোনো নারী বসেননি। এবার কি ইতিহাস গড়বেন কমলা হ্যারিস নাকি চার বছরেরে ব্যবধানে ট্রাম্প আবার—বিশ্বজুড়ে অন্যতম আলোচনা এটি। চলতি বছরের ৫ নভেম্বর আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
অন্য দেশের ওপর শুল্ক বসানোর পরিকল্পনার কথা জানালেন ট্রাম্প
কমলা হারিসের তীব্র সমালোচনার জবাব দেন ট্রাম্প। তিনি অন্য দেশের ওপর শুল্ক বসানোর পরিকল্পনার কথা জানান। চীনের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তাঁর প্রশাসন দেশটির (চীনের) কাছ থেকে ‘বিলিয়ন’ ডলার শুল্ক এনেছিল। এমনকি ক্ষমতা ছাড়ার পরও শুল্ক এসেছে।
এরপর ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নিয়ে কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা কি সরাসরি ভোট দেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সরাসরি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে ভোট দেন না ভোটাররা। তাঁরা ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যদের ভোট দেন। ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন। তাঁদের ভোটকে বলা হয় ইলেকটোরাল ভোট। ইলেকটোরাল ভোট আছে মোট ৫৩৮টি। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট হতে ২৭০টি ভোট পেতে হয়।
তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থী একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে দেশটির প্রতিনিধি পরিষদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়।
ট্রাম্প কি ক্লেভল্যান্ডকে ধরতে পারবেন
১৭৮৯ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় যুক্তরাষ্ট্র। সেই নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজের পূর্ণ সমর্থন পেয়ে প্রেসিডেন্ট হন জর্জ ওয়াশিংটন। ১৭৯৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন তিনি।
আমেরিকার ইতিহাসে গ্রোভার ক্লেভল্যান্ড একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি প্রথম চার বছর হোয়াইট হাউসে থাকার পর হেরে গিয়ে আবার চার বছর পর ভোটে জিতে প্রেসিডেন্ট হন। এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্পের সামনে ক্লেভল্যান্ডকে ছোঁয়ার সুযোগ রয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন ট্রাম্প। এরপর বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে হেরে যান তিনি। এবার আবার রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হয়েছেন তিনি। জিতলেই ছোবেন ক্লেভল্যান্ডকে।
গর্ভপাত বিষয়ে ট্রাম্প যা বললেন
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি বিতর্কে নারীদের গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়টি উঠে এসেছে। দুই প্রার্থী একে অপরের দলের নীতিকে দোষারোপ করেছেন।
উপস্থাপক গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান সুস্পষ্ট করার আহ্বান জানান। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা ৯ মাসের গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের অধিকার দিতে চায়।’
ট্রাম্প বলেন, গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে ডেমোক্র্যাটদের অবস্থান বেশ জোরালো। এমনকি কমলা হ্যারিসের রানিং মেট টিম ওয়ালজ ৯ মাসের গর্ভাবস্থায়ও গর্ভপাতের অধিকার দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন।
নারীদের গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার অধিকার অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, ‘কিছু কিছু অঙ্গরাজ্য জন্মের পর নবজাতককে হত্যার অনুমতি দেয়।’ ট্রাম্পের এমন কথার পর উপস্থাপক বলেন, ‘আমাদের দেশে এমন কোনো অঙ্গরাজ্য নেই, যেখানে জন্মের পর কোনো শিশুকে হত্যা করা বৈধ।’
নারীরা গর্ভপাত চান না: হ্যারিস
কমলা হ্যারিস বলেন, ‘এ দেশে এমন কোনো রাজ্য নেই যেখানে একটি শিশুর জন্মের পরে হত্যা করা বৈধ।’ ট্রাম্পের অভিযোগের পরে মডারেটর প্রশ্ন ছোড়েন কিছু রাজ্য শিশুদের জন্মের পরে ‘মৃত্যুদণ্ড’ দেওয়ার অনুমতি দেয়। এরপরই কমলা হ্যারিস এ কথা বলেন।
হ্যারিস উল্লেখ করেন, ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টে যে তিন বিচারপতিকে নিয়োগ করেছিলেন দুই বছর আগে, তাঁরা নারীদের গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল।
ট্রাম্পের উদ্দেশে কমলা বলেন, ‘আপনি বলেন, মানুষ এটাই চেয়েছিল? কিন্তু এমনও ঘটনা ঘটেছে যে পার্কিং লটে গাড়িতে সন্তানসম্ভবা নারীদের রক্তপাত হয়েছে। কারণ, তাঁরা গর্ভপাত করার অনুমতি পাননি।’
নারীদের কথা উল্লেখ করে আবেগপ্রবণ হয়ে কমলা বলেন, ‘তাঁরা এটা চান না।’
ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে, তবে কীভাবে তা গুরুত্বপূর্ণ: কমলা
উপস্থাপক কমলা হ্যারিসের কাছে জানতে চান, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিচালনা এবং কীভাবে তিনি এ অচলাবস্থা নিরসনে কাজ করবেন। কমলা হামাস–ইসরায়েল ইস্যুতে তাঁর আগের কিছু মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, তবে এটি কীভাবে করছে তা গুরুত্বপূর্ণ। এই যুদ্ধের অবসান হওয়া উচিত। এটা অবিলম্বে শেষ হওয়া উচিত।’
যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে কমলা বলেন, গাজা পুনর্গঠনের জন্য দুই রাষ্ট্রই সমাধান। তথ্যসূত্র: বিবিসি
কমলা জিতলে ২ বছরের মধ্যে ইসরায়েলের অস্তিত্ব থাকবে না : ট্রাম্প
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘কমলা হ্যারিস ইসরায়েলকে ঘৃণা করেন। একই সময়ে তিনি নিজের মতো করে আরব জনগণকেও ঘৃণা করেন।’
এ সময় ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কীভাবে তিনি গাজায় চলমান যুদ্ধ শেষ করবেন এবং হামাসের হাতে জিম্মি থাকা বেসামরিক মানুষদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হবেন?
জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকলে এ যুদ্ধই হতোই না। তিনি আরও বলেন, ‘কমলা ইসরায়েলকে ঘৃণা করেন। যদি তিনি (কমলা) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, আমার বিশ্বাস, এখন থেকে দুই বছরের মধ্যে ইসরায়েলের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।’
জবাবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা। তিনি বলেন, ট্রাম্প ‘বিভাজন এবং বাস্তবতা থেকে সরিয়ে আনার’ চেষ্টা করছেন। তথ্যসূত্র: বিবিসি
কমলা আরও বলেন, ‘সামরিক নেতারা ট্রাম্পকে অসম্মানজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।’
ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ চান ট্রাম্প
যুদ্ধে ইউক্রেনের জয় চান কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি চাই এই যুদ্ধ বন্ধ হোক।’
ট্রাম্প বলেন, তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন—উভয়কেই খুব ভালো করে চেনেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যয় নিয়েও কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ইউরোপ অনেক কম অর্থ প্রদান করছে। তথ্যসূত্র: বিবিসি
টেলর সুইফটের সমর্থন পেয়েছেন কমলা হ্যারিস
পপ তারকা টেলর সুইফটের সমর্থন পেয়েছেন কমলা হ্যারিস। ইনস্ট্রাগ্রামে এক পোস্টে টেলর লিখেছেন, ‘আমি ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিস ও টিম ওয়ালজকে ভোট দেব।’
২৮ কোটি ৩০ লাখ অনুসারীর উদ্দেশে টেলর বলেন, ‘আমি কমলা হ্যারিসকে ভোট দেব। কারণ, তিনি অধিকারের জন্য লড়াই করেন এবং আমি বিশ্বাস করি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য একজন যোদ্ধার প্রয়োজন। আমি মনে করি তিনি একজন প্রতিভাধর নেত্রী এবং আমি বিশ্বাস করি যে আমরা এই দেশে আরও অনেক কিছু অর্জন করতে পারব যদি আমরা বিশৃঙ্খলা না করে শান্ত হয়ে পরিচালিত হই।’
গায়িকা টেলর সুইফট ‘নিঃসন্তান ক্যাট লেডি’ হিসাবে পোস্টে স্বাক্ষর করেছেন।
ট্রাম্পের বিপক্ষে দ্বিতীয় বিতর্ক চায় কমলা হ্যারিসের প্রচার শিবির
অবিলম্বে ট্রাম্পের বিপক্ষ দ্বিতীয় বিতর্ক চায় কমলা হ্যারিসের প্রচার শিবির।
হ্যারিসের প্রচার শিবিরের প্রধান জেন ও'ম্যালি ডিলন একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমেরিকান জনগণ ব্যালট বাক্সে জবাব দেবে, তাঁরা কমলা হ্যারিসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে চায় না ট্রাম্পের সঙ্গে পিছিয়ে যেতে চায়। ভোটারেরা আজ রাতে এটাই দেখেছে এবং অক্টোবরে দ্বিতীয় বিতর্কে তাদের কী দেখা উচিত। ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস দ্বিতীয় বিতর্কের জন্য তৈরি। ডোনাল্ড ট্রাম্প কি বিতর্কে রাজি?’ তথ্যসূত্র: আল জাজিরা
নির্বাচনে আপনি বাইডেনের বিরুদ্ধে নয়, লড়ছেন আমার বিরুদ্ধে: ট্রাম্পকে কমলা
ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একজন ‘অস্তিত্বহীন’ প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। প্রথম মুখোমুখি টেলিভিশন বিতর্কে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের এ বক্তব্য পাল্টা আক্রমণে উড়িয়ে দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস।
বিতর্কে বাইডেনের উদ্দেশে ট্রাম্পের করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা বলেন, ‘নির্বাচনে আপনি বাইডেনের বিরুদ্ধে লড়ছেন না, আপনি লড়ছেন আমার বিরুদ্ধে।’
বিতর্কের একপর্যায়ে রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাত প্রসঙ্গে করা প্রশ্নের জবাবে কমলা হ্যারিস বলেন, তাঁর সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। ট্রাম্পের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি এখন আর প্রেসিডেন্ট নেই—এতে আমাদের ন্যাটো (পশ্চিমা সামরিক জোট) মিত্ররা খুবই কৃতজ্ঞ।’
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা বলেন, ‘অন্যথায় পুতিন (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট) কিয়েভে (ইউক্রেনের রাজধানী) বসে ইউরোপের বাকি অংশের ওপর নজর দিতেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুতিন একজন স্বৈরশাসক। তিনি সহজেই আপনাকে (ট্রাম্প) কবজা করে ফেলবেন।’
বিতর্কিত নানা ইস্যুতে কী কী বললেন কমলা ও ট্রাম্প
কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম টিভি বিতর্কে একে অপরকে একচুল ছাড় দেননি কেউ। এই টিভি বিতর্ককে বলা হচ্ছে ‘ফায়ারি ডিবেট’। ফিলাডেলফিয়ায় কমলা ও ট্রাম্প এবিসি টিভি চ্যানেল আয়োজিত বিতর্কের মুখোমুখি হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন। যুক্তি-পাল্টাযুক্তি, পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্য উঠে এল অর্থনীতি, গর্ভপাত, অভিবাসন, হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধ, ক্যাপিটল হিলে হামলা ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ, করব্যবস্থার মতো বিষয়গুলো। দুজনই দুজনকে ‘মিথ্যাবাদী’ বললেন। ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো নিচে–
অর্থনীতি, ধনী-গরিব নিয়ে বিতর্ক
কমলা হ্যারিস ভোটারদের বলেন, ‘আপনাদের জন্য ট্রাম্পের কোনো পরিকল্পনা নেই। ট্রাম্প শুধু ধনীদের জন্য কর ছাড় দেওয়া নিয়ে চিন্তিত। তিনি সুবিধাবাদী অর্থনীতির পক্ষে।’
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যারিস হলেন খালি কলসি, যার ঢঙ্কানিনাদ বেশি। হ্যারিসের কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি বাইডেনের পরিকল্পনা পরিবেশন করে চলেছেন।’
হ্যারিসের অভিযোগ, ‘ট্রাম্প চীন ও অন্য দেশ থেকে আসা জিনিসের ওপর কর বাড়াতে চান। এটা আসলে আমেরিকানদের ওপর বিক্রয়কর বসানো। এর ফলে জিনিসের দাম বেড়ে যাবে।’ প্রতি মাসে সাধারণ মানুষের ওপর কতটা বোঝা চাপবে, সেটাও জানিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প বলেছেন, ওই করের অর্থ দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কর কমাবেন। তাঁর দাবি, ‘করের ফলে জিনিসের দাম বাড়বে না। বরং এই কর না থাকলে বেশি দামে জিনিস কিনতে হবে।’
এ সময় কমলার হ্যারিসের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জন্য তিনি একটা আর্থিক নীতি নিয়ে চলছেন।’
ট্রাম্প পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘হ্যারিস পুলিশের জন্য অর্থ কমাতে চান, সবার কাছ থেকে বন্দুক কেড়ে নিতে চান।’
কমলা বলেন, তাঁর কাছে ও তাঁর রানিংমেট টিম ওয়ালজের কাছে অনুমোদিত বন্দুক আছে। নিজের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য তিনি বন্দুক রেখেছেন।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন নিয়ে
কমলা ও ট্রাম্প দুজনের কাছ থেকেই বিতর্কে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা কীভাবে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ থামাবেন?
আগের অবস্থানের কথা আবার জানিয়ে কমলা হ্যারিস বলেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। গত বছর ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে ঢুকে হামাস ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা করেছিল। তিনি বলেন, এখন যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। গাজায় সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। সেই সঙ্গে যাদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে, তাদের মুক্তি দিতে হবে। কমলা হ্যারিস বলেছেন, ‘আমাদের দুই রাষ্ট্র (টু স্টেট) সমাধানের পথেই যেতে হবে। এর ফলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে এ যুদ্ধ হতোই না। তাঁর অভিযোগ, কমলা ইসরায়েলকে ঘৃণা করেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে দুই বছরের মধ্যে ইসরায়েল বলে কোনো দেশ থাকবে না।
ট্রাম্পের অভিযোগ, ‘কমলা আরবদেরও ঘৃণা করেন। আমি প্রেসিডেন্ট হলে দ্রুত এর সমাধান করে ফেলব।’
কমলা বারবার বলেন, তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তিনি ইসরায়েলের নিরাপত্তার অধিকার সমর্থন করেন। তার পাল্টা দাবি, বিশ্বনেতারা ট্রাম্পের কথায় হাসছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
ট্রাম্প দাবি করেন, ‘আমি এ যুদ্ধ বন্ধ করতে চাই। আমি মানুষের জীবন বাঁচাতে চাই। বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন হতে দিয়েছে।
আপনি কি চান, ইউক্রেন যুদ্ধে জিতুক? ট্রাম্প এ প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে যান।
কমলার অভিযোগ, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তিনি পুতিনকে ইউক্রেন দখল করে নিতে দেবেন। কমলা বলেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পুতিন এতক্ষণে কিয়েভে বসে থাকতেন। তার নজর থাকত বাকি ইউরোপের দিকে। কমলা বলেন, ‘ইউরোপীয় নেতারাও চান না, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হোন।’
ক্যাপিটল হিল নিয়ে যা হলো বিতর্ক
ট্রাম্প বলেন, ‘ক্যাপিটলের ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমাকে ওরা একটা ভাষণ দিতে বলেছিল, এটুকুই।’
তাঁর সমর্থকেরা ক্যাপিটলে ঢোকার আগে ট্রাম্প ভাষণ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘ফাইট লাইক হেল।' তিনি সে সময় তাঁর সমর্থকদের শান্তিপূর্ণভাবে ক্যাপিটলে যেতে বলেছিলেন।
ট্রাম্প এ কথা বলতে অস্বীকার করেন যে তিনি অনুতপ্ত। হ্যারিস বলেন, ‘মনে করে পাতা উল্টে দেখুন। ওই দিন কী হয়েছিল।’
গর্ভপাত নিয়ে
ট্রাম্পকে গর্ভপাত নিয়ে তাঁর মতামত জানতে চাওয়া হয়। ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাটরা চায় গর্ভধারণের ৯ মাস পরেও গর্ভপাত করার অধিকার দিতে। তিনি চান, গর্ভপাতের বিষয়টি রাজ্যগুলো ঠিক করুক। তারা আইন করুক। ধর্ষণ বা কিছু ক্ষেত্রে তিনি গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে। ট্রাম্পের অভিযোগ, কিছু রাজ্যে শিশু জন্মানোর পরেও তাদের মারার ব্যবস্থা আছে।
সঞ্চালকেরা বলেন, কোনো রাজ্যেই এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
কমলা বলেছেন, ট্রাম্পের আমলে যে তিনজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ করা হয়, তাঁরাই দুই বছর আগে গর্ভপাত নিয়ে কেন্দ্রীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার বাতিল করেছেন।
শেষ মন্তব্য
কমলা বিতর্ক শেষ করেন এভাবে, ‘আমরা আর পেছনে ফিরে যেতে চাই না। আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই। আমরা নতুন পথে হাঁটতে চাই।’
ট্রাম্প বলেন, হ্যারিস ছিলেন বাইডেন প্রশাসনের অঙ্গ। তিনি মানুষকে চাকরি দিতে পারেননি, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারেননি। তাঁর উচিত, এখনই সরে দাঁড়ানো। তথ্যসূত্র: এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্স
তুমিই জিতেছ, তোমাকে সন্তান উপহার দেব: টেলর সুইফটকে ইলন মাস্ক
পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করে ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন টেলর সুইফট। এরপর মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং টেসলার সিইও ইলন মাস্ক এক্স-এ (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট শেয়ার করেন। পোস্টে মাস্ক টেলর সুইফটকে ‘চাইল্ডলেস ক্যাট লেডি’ বলে উল্লেখ করেছেন। ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স অনেক আগে সন্তানহীন নারীদের উপহাস করতে এ ‘চাইল্ডলেস ক্যাট লেডি’ ব্যবহার করেছিলেন।
পোস্টে ইলন মাস্ক বলেন, ‘ভালোই টেলর … তুমি জিতেছ … আমি তোমাকে একটি সন্তান উপহার দেব এবং তোমার বিড়ালদের জীবন দিয়ে পাহারা দেব।’
কমলা–ট্রাম্পের প্রথম বিতর্ক শেষে ৩৪ বছর বয়সী গায়িকা বলেছিলেন, তিনি কমলাকে ভোট দেবেন। কারণ তিনি ‘অধিকারের জন্য লড়াই করেন এবং আমি বিশ্বাস করি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য একজন যোদ্ধার প্রয়োজন। আমি মনে করি তিনি একজন প্রতিভাধর নেত্রী এবং আমি বিশ্বাস করি যে আমরা এই দেশে আরও অনেক কিছু অর্জন করতে পারব যদি আমরা বিশৃঙ্খলা না করে শান্ত হয়ে পরিচালিত হই। ’
গায়িকা টেলর সুইফট ‘নিঃসন্তান ক্যাট লেডি’ হিসাবে পোস্টে স্বাক্ষর করেছেন।
কমলা নাকি ট্রাম্প, ফক্স নিউজের চোখে কে বিজয়ী
দেড় ঘণ্টার বিতর্কে কমলা ও ট্রাম্প দুজনই কথার লড়াই চালিয়ে গেছেন। যুক্তি উপস্থাপন, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে একে অপরকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টাও ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো জিতলেন আসলে কে?
কয়েকজন বিশ্লেষকের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ বলছে, ‘আজ (স্থানীয় সময় মঙ্গলবার) রাতে, কমলা জিতেছেন।’
ফক্স নিউজের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিট হিউম বলেন, ‘বিতর্ক শুনে মনে হয়েছে, কমলা খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন। সেভাবেই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি কি বলছেন, এটা নিয়ে সচেতন ছিলেন।’
গত মাসে সিএনএনকে একটি সাক্ষাতকার দেন কমলা হ্যারিস ও তাঁর রানিং মেট টিম ওয়ালজ। সেই সাক্ষাতকারের প্রসঙ্গ টেনে ব্রিট হিউম বলেন, ‘আজকের বিতর্কে কমলা একেবারে ভিন্ন ব্যক্তি ছিলেন।’
করমর্দন থেকে কথার লড়াই—কমলা ও ট্রাম্পের বিতর্কের খুঁটিনাটি
ডোনাল্ড ট্রাম্প আর কমলা হ্যারিসের বিতর্কটা কয়েকটি বিষয়ে ‘প্রথম’ হয়ে রইল। এর একটি, আসছে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর এটাই প্রথম সরাসরি টেলিভিশন বিতর্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ফিলাডেলফিয়ায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত নয়টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৭টায়) সম্প্রচারমাধ্যম এবিসি নিউজের আয়োজনে এই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।
বিতর্ক মঞ্চে উঠেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা। দুজন করমর্দন করেন। বিবিসি বলছে, এবারই প্রথম ট্রাম্প ও কমলা করমর্দন করলেন।
বেশ সাবলীলভাবে বিতর্ক এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে কমলার একটি খোঁচায় পরিবেশ খানিকটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ট্রাম্পের নির্বঅচনী সমাবেশ নিয়ে কমলা বলেন, সেখানে লোকেরা একঘেয়েমি ও ক্লান্তি থেকে তাড়াতাড়ি চলে যায়। এর পরও ট্রাম্প কমলার বিরুদ্ধে কণ্ঠ চড়ান।
সীমান্ত ও অভিভাসন নিয়ে কমলার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন ট্রাম্প। অর্থনীতি ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়েও সরব হয়ে ওঠেন তিনি। বাইডেন প্রশাসনের অংশ হিসাবে তিনি (কমলা) কেন আরো বেশি নীতিগত লক্ষ্য অর্জন করেননি সেসব নিয়েও প্রশ্ন করেন ট্রাম্প।
দেশজুড়ে নারীদের গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের দিকে আঙ্গুল তোলেন কমলা। আরেক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ট্রাম্প আদৌ সক্ষম (ফিট) কিনা, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে হামলা এবং ‘দূর্বল আর ভুল জাতীয় নিরাপত্তানীতি ও পররাষ্ট্রনীতির’ জন্যও বিতর্কে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কমলা তোপ দাগেন।
বিতর্কে ট্রাম্প বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একজন ‘অস্তিত্বহীন’ প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যা দেন। জবাবে কমলা বলেন, ‘নির্বাচনে আপনি বাইডেনের বিরুদ্ধে লড়ছেন না, আপনি লড়ছেন আমার বিরুদ্ধে।’
বির্তকের শেষ পর্যায়ে এসে ট্রাম্প বলেন, জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বাজে’ প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট।
এর আগেই কমলা বলেন, ট্রাম্প খুব সহজেই বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ নেতাদের দিয়ে প্রভাবিত হন। তাঁকে (ট্রাম্প) নিয়ে বিশ্বনেতারা হাসাহাসি করেন।
বিতর্ক শেষে হওয়ার পর পরই ৩৪ বছর বয়সী গায়িকা টেলর সুইফট এবারের নির্বাচনে কমলাকে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দেন। এক্স পোস্টে সুইফট বলেন, তিনি কমলাকে ভোট দেবেন। কারণ তিনি ‘অধিকারের জন্য লড়াই করেন এবং আমি বিশ্বাস করি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য একজন যোদ্ধার প্রয়োজন। আমি মনে করি তিনি একজন প্রতিভাধর নেত্রী এবং আমি বিশ্বাস করি যে আমরা এই দেশে আরও অনেক কিছু অর্জন করতে পারব যদি আমরা বিশৃঙ্খলা না করে শান্ত হয়ে পরিচালিত হই। ’
পোস্টের শেষে গায়িকা টেলর সুইফট নিজেকে ‘নিঃসন্তান ক্যাট লেডি’ হিসাবে পোস্টে স্বাক্ষর করেন। কিছু সময় পর এর জবাব দিয়ে এক্সে পোস্ট দেন মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং টেসলার সিইও ইলন মাস্ক। তিনি লিখেন, ‘ভালোই টেলর … তুমি জিতেছ … আমি তোমাকে একটি সন্তান উপহার দেব এবং তোমার বিড়ালদের জীবন দিয়ে পাহারা দেব।’
দেড় ঘণ্টার বিতর্কে দুজনই কথার লড়াইয়ে মেতে ওঠেন। যুক্তি উপস্থাপন, আক্রমণ–পাল্টা আক্রমণে একে অপরকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—জিতলেন কে?
কয়েকজন বিশ্লেষকের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ বলছে, ‘আজ রাতে, কমলা জিতেছেন’। অন্যদিকে ভোটারদের মতামতের ভিত্তিতে ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, মঙ্গলবার রাতের বিতর্কে এগিয়ে রয়েছেন কমলা।