কমলা-ট্রাম্প বিতর্কে গুরুত্ব পেতে পারে যেসব বিষয়

কমলা হ্যারিস (বাঁয়ে), ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডানে)ফাইল ছবি

আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দুই প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি বিতর্ককে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৭টায়) মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এবিসি নিউজ-এর আয়োজনে এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সরাসরি মোকাবিলার জন্য এটাই কমলার একমাত্র সুযোগ। এ বিতর্কের জন্য নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছেন কমলা। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের রাজনৈতিক আধিপত্যের ইতি টানার অঙ্গীকার করেছেন তিনি।

এই বিতর্ককে বিশেষ করে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিজেকে ভোটারদের সমান তুলে ধরার জন্য লড়ছেন তিনি। এই গ্রীষ্মে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন পাওয়ার পর যে ইতিবাচক সময় তিনি পার করছেন, সেটা ধরে রাখার জন্য এ বিতর্কটি গুরুত্বপূর্ণ। এতে যেসব বিষয়ে দুই প্রার্থীর মধ্যে কথার লড়াই হতে পারে, তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো:

অর্থনীতি

এই বিতর্কের অন্যতম বিষয় হতে পারে অর্থনীতি বিশেষ কর মূল্যস্ফীতি। বিতর্ক শুরুর আগে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পের প্রচার শিবির থেকে এমনই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে গত বছর আমেরিকানদের বার্ষিক আয় আগের বছরের চেয়ে ৪ শতাংশ বেড়েছে। যদিও মূল্যস্ফীতির অভিঘাত তাঁদের সহ্য করতে হয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বেড়েছে কর্মসংস্থানও।

তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, তাঁর সময় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এর চেয়ে ভালো ছিল। তাঁর মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে জনগণকে ভুগতে হচ্ছে।

এদিকে, মধ্যবিত্তদের আর্থিক সামর্থ্য বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে আসছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এ ছাড়া জীবনযাপনের ব্যয় কমানোরও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। বিতর্কে অর্থনীতিতে বাইডেন প্রশাসনের সফলতার পাশাপাশি এ বিষয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরতে পারেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী।

অভিবাসন

দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বিতর্কের অন্যতম বিষয় হতে পারে অভিবাসন। বিতর্কের আগে ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের প্রচার করা ভিডিওতে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থতার দায় ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলার ওপর বর্তায় এ যুক্তি তুলে ধরছেন রিপাবলিকানরা।

ভিডিওটির সঙ্গে ট্রাম্পের প্রচার দলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমেরিকার অকল্পনীয় পতন ঘটনার জন্য কমলা হ্যারিস হোয়াইট হাউসে আছেন। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, অবৈধ অভিবাসীদের অপরাধে আমাদের সমাজ জর্জরিত এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা আমাদের ভূমিকা হারিয়েছি।’

প্রচার কৌশলের অংশ হিসেবে বাইডেনের নেওয়া পদক্ষেপের জন্য কমলাকেও দায়ী করার চেষ্টা করে আসছেন ট্রাম্প, বিশেষ করে সীমান্ত ইস্যুতে। একই সঙ্গে লিঙ্গ ও জাতিগত পরিচয় নিয়েও তাঁকে আক্রমণ করে আসছেন ট্রাম্প।

গর্ভপাত অধিকার

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বর্তমানে গর্ভপাত ও প্রজনন অধিকার বড় বিতর্কের বিষয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, গর্ভপাত ও প্রজনন অধিকার বিষয়ে ট্রাম্পকে কাবু করার চেষ্টা করবেন কমলা। তিনি গর্ভপাত অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেবেন এবং এ বিষয়ে ট্রাম্পের অস্পষ্ট অবস্থান নিয়ে খোঁচা দিতে পারেন।

নভেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে গর্ভপাত ইস্যুতে সুবিধা আদায় করতে চায় ডেমোক্র্যাট শিবির। বিষয়টি তারা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয় হিসেবে দেখছে, যা মধ্যপন্থী ভোটার টানতে সহায়ক বিশেষ নারীদের। এ জন্য রিপাবলিকানদের গর্ভপাত নিষিদ্ধের অঙ্গীকারের সঙ্গে ট্রাম্পকে সরাসরি জড়াতে কোমর বেঁধে নামছেন ডেমোক্র্যাটরা।

সিএনএনের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, গর্ভপাত ও প্রজনন অধিকারের মতো বিষয় সামলানোর ক্ষেত্রে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর নারী ভোটাররা গড়ে ২৭ পয়েন্ট বেশি ট্রাম্পের চেয়ে কমলার প্রতি আস্থার কথা জানিয়েছেন।

ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধ

বিতর্কে ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধসহ আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে কী বলছেন কমলা ও ট্রাম্প, সেসব বিষয়েও সবার নজর থাকবে। ডেমোক্র্যাট শিবিরের ভোট ব্যাংক বৈচিত্র্যপূর্ণ হওয়ায় গাজার বিষয়টি পাশ কাটাতে চাইবেন কমলা। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা স্পষ্ট নয়।

ডেমোক্র্যাট কনভেনশনে দেওয়া ভাষণ এবং নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা ইস্যুতে কমলা ইসরায়েলের আত্মরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রতি সমর্থনের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। সমালোচকেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট কৌশল অবলম্বন করেননি।

অন্যদিকে, ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি নিজের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি রিপাবলিকান ইহুদি ভোটারদের কনভেনশনে দেওয়া বক্তব্য তিনি বলেন, ‘কমলা ক্ষমতায় আসলে ইসরায়েল রাষ্ট্র বলে কিছু থাকবে না।’

এ ছাড়া লিঙ্গ ও জাতিগত পরিচয় নিয়ে কমলাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে পারেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়টি সামনে এনে ট্রাম্পকেও পাল্টা আক্রমণ করতে পারেন কমলা হ্যারিস।

আরও পড়ুন