আটলান্টায় বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশ

বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশ মঞ্চে লেখক-সাহিত্যিকবৃন্দ।
বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশ মঞ্চে লেখক-সাহিত্যিকবৃন্দ।

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অনাবাসী কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে দু দিনের এক অসাধারণ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হলো জর্জিয়ার আটলান্টায়। উত্তর আমেরিকা বাংলা সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে ‘বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশ’ রীতিমতো হয়ে উঠেছিল বৈশ্বিক একটি অনুষ্ঠান। আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য, কানাডা, বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কবি সাহিত্যিকেরা সমবেত হয়েছিলেন জর্জিয়ার আটলান্টায়। স্থানীয় আয়োজক সংগঠন ছিল সেবা বাংলা লাইব্রেরি।

‘বাংলায় বিশ্ব, বিশ্বে বাংলা’ স্লোগানকে সামনে রেখে গত ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর দু দিনের এই বিশ্ব সমাবেশের আহ্বায়ক ছিলেন খ্যাতিমান গল্পকার ও কথাসাহিত্যিক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন লেখক সাহাব আহমেদ। সমাবেশটি সফল করতে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন লেখক ও গবেষক পূরবী বসু।

লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিনের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় ৩১ আগস্ট সকালে বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি হয় বার্কমার হাইস্কুল মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানটি শুরু হয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ এই উদ্বোধনী সংগীতের মধ্য দিয়ে। বক্তব্য রাখেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও সাহাব আহমেদ। এরপর আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। সমাবেশ উপলক্ষে ‘হৃদবাংলা’ নামে চমৎকার একটি প্রকাশনা বের করা হয়। লেখক হ‌ুমায়ূন কবিরের সম্পাদনায় প্রকাশিত প্রকাশনাটির মোড়ক উন্মোচন পর্বে অন্যদের মধ্যে ছিলেন পূরবী বসু। মৌলবাদীদের হাতে নিহত আটলান্টা প্রবাসী প্রকৌশলী ও লেখক অভিজিৎ রায় স্মরণে এ সময় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে প্রদীপ প্রজ্বালন করে বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সমাবেশের উদ্বোধন করেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে দিনব্যাপী কবিতা, গল্প পাঠ, সাহিত্যবিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বিকেলে প্রদর্শিত হয় ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর ওপর শামীম আল আমিনের পরিচালনায় তৈরি একটি তথ্যচিত্র। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল যন্ত্রসংগীত, মঞ্চনাটক ও গান। এ সময় গান গেয়ে শোনান মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী তাজুল ইমাম, সেজান মাহমুদ, জীবন বিশ্বাস ও মনিকা মুনা। সঞ্চালনা করেন সাবিনা হাই উর্বি।

পরদিন ছিল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন। সকালটি শুরু হয় সাহিত্য আসরের মধ্য দিয়ে। ছিল কয়েকটি সেমিনার। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের নামে তৈরি দুটি আলাদা মঞ্চে আলোচনায় অংশ নেন বক্তারা। সন্ধ্যায় আটলান্টার স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী, অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন। সবশেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পূরবী বসু।

সমাবেশের আহ্বায়ক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত জানান, প্রথমবারের মতো এই আয়োজনে ধারণার চেয়েও বেশি সাড়া পাওয়া গেছে। সফল এই সম্মেলনের পথ ধরে ভবিষ্যতেও এটি চলতে থাকবে। সেই সঙ্গে দিনে দিনে এই সমাবেশের আঙ্গিক আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।

দু’দিনের আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আরও ছিলেন মতলুব আলী, আনিস আহমেদ, তাজুল ইমাম, লুৎফর রহমান রিটন, মাহাবুব হাসান সালেহ, হুমায়ূন কবীর, ড. গুলশান আরা কাজী, আনিসুজ্জামান, আশফাক স্বপন, কুন্তল রুদ্র, কাজী জহিরুল ইসলাম, লালন নূর, ইকবাল, সাদ কামালী, মোহাম্মদ ইরফান, আনোয়ার ইকবাল, আশরাফ আহমেদ, খায়রুল আনাম, দীপেন ভট্টাচার্য, সেজান মাহমুদ, মল্লিকা ধর, সুপ্রিয় দাস, অমিতাভ রক্ষিত, পারভীন বানু, আবদুন নূর, মৌ মধুবন্তী, জেসমিনা ভট্টাচার্য, হারুন রশীদ, হাসান মাহমুদ, রুদ্র শঙ্কর, অনিন্দিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ধনঞ্জয় সাহা, সুজয় দত্ত, রিপা নূর, মোহাম্মদ হাসিবসহ অনেকে।