অ্যাসাইলাম আবেদন এখন আরও কঠিন
আমেরিকার ইউএসসিআইএসের অধীনে ‘রিফিউজি, অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অপারেশনস ডাইরেক্টরেট (আরএআইও) বিভিন্ন সময়ে অ্যাসাইলাম বা আশ্রয় সংক্রান্ত কর্মকর্তাদের বেসিক ট্রেনিং কোর্সের আওতায় বিভিন্ন লেসন প্ল্যান প্রকাশ করে। এবারের একটি আপডেট করা লেসন প্ল্যানের মধ্যে অ্যাসাইলাম সংক্রান্ত এই পরিবর্তন এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরবর্তী অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের আবেদনে এই পরিবর্তনের কারণে ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব পড়বে। এ বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি ইউএসসিআইএসের অ্যাসাইলাম ডিভিশনের চিফ জন ল্যাফারটি এই নতুন লেসন প্ল্যান জারি করেন। এটি ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বলবৎযোগ্য হবে। এই নতুন লেসন প্ল্যানের ব্যাপারে ইউএসসিআইএস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে বিদ্যমান অভিবাসন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ট্রাম্প করেছিলেন, অ্যাসাইলামের আবেদনকে আরও কঠিন করে তোলার পদক্ষেপকে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আরেক ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অভিবাসন বিষয়ক পরামর্শদাতারা বলছেন, যারা সত্যিকার অর্থেই সহিংস পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন—এই পরিবর্তন তাদের আমেরিকায় আশ্রয়ের মাধ্যমে যথাযথ নিরাপত্তা পাওয়া এমনকি তাদের আবেদন সঠিকভাবে বিবেচিত হওয়ার বিষয়টিও আটকে দিতে পারে। অ্যাসাইলাম কর্মকর্তা এবং অভিবাসন কৌসুলিদের কাছে সরবরাহ করা এই রহস্যময় লেসন প্ল্যান ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ এবং এর বাস্তবায়ন নীতিমালার হইচইয়ের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই পরিবর্তনটি ব্যাপকভাবে প্রচারিত না হলেও আইনজীবীরা বলছেন, অ্যাসাইলামের আবেদন কীভাবে পর্যালোচনা করা হবে, সে ব্যাপারে এবং পরবর্তীতে আমেরিকায় অ্যাসাইলাম আবেদন করতে ইচ্ছুকদের সংখ্যা রোধ করতে কোন নতুন আইনের প্রবর্তন ছাড়াই এটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। ইউএসসিআইএসের সাবেক পরিচালক লিয়ন রদ্রিগেজ বলছেন, ‘এটা একটা স্পষ্ট বার্তা যে, আমরা আরও কঠোর হতে চাই। আমি মনে করি, অ্যাসাইলাম কর্মকর্তারা এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ভালো করেই বুঝতে পারবেন।’
সহিংসতার শিকার হয়েছে এমন অভিবাসী নারী ও শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা হল তাহিরী জাস্টিস সেন্টার যা আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল’ইয়ারস অ্যাসোসিয়েশনের ন্যাশনাল অ্যাসাইলাম কমিটির সদস্য। এই তাহিরী জাস্টিস সেন্টারের চিফ অব পলিসি অ্যান্ড প্রোগ্রামস আরচি পিয়াতি মনে করেন, এই পরিবর্তনের কারণে সহিংসতার শিকার হলে যারা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ধারা ১০১(এ)(৪২)-এর আওতায় শরণার্থীর সংজ্ঞাভুক্ত হবেন, তারাও তাদের আইনজীবী, পরামর্শক অথবা বিচারকের মুখোমুখি হওয়ার আগেই অন্যায্যভাবে অ্যাসাইলামের আবেদন অনুমোদন হওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন।
প্রচলিত আইনে যখন কেউ আমেরিকায় ভিসা ছাড়া প্রবেশের সময় অথবা ভিসা নিয়ে প্রবেশের পর দাবি করেন, তিনি পারসিকিউশন অথবা টর্চারের শিকার হয়েছেন এবং বাঁচার জন্য আমেরিকায় এসেছেন, তখন তিনি অ্যাসাইলাম দাবি করতে পারেন। কোনো ব্যক্তি অ্যাসাইলাম পাওয়ার যোগ্য কিনা সে ব্যাপারে যদিও শেষ পর্যন্ত একজন অভিবাসন বিচারক সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু প্রথম ধাপে একজন অ্যাসাইলাম কর্মকর্তা আবেদনকারীর ইন্টারভিউ করেন এবং নির্ধারণ করেন আবেদনকারীর কোনো ‘নির্যাতন অথবা নিপীড়নের বিশ্বাসযোগ্য ভীতি’ (ক্রেডিবল ফিয়ার অফ পারসিকিউশন অর টর্চার) রয়েছে কিনা। এই পরিবর্তনের আগের ভার্সনের লেসন প্ল্যানে ছিল, কোনো আবেদনকারীর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যদি একজন অ্যাসাইলাম অফিসারের যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ (রিজনেবল ডাউট) থাকে তাহলে তিনি ওই আবেদন পূর্ণ শুনানির জন্য ইমিগ্রেশন বিচারকের কোর্টে রেফার করবেন। নতুন লেসন প্ল্যানে এই বিধান তুলে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় এত দিন আবেদনকারীর হাবভাব, অকপটতা এবং সংবেদনশীলতা (ডেমিনর, ক্যানডর অ্যান্ড রেসপন্সিভনেস) অনেক গুরুত্ব পেত। অ্যাসাইলাম অফিসাররা এটা স্বীকার করতেন যে, আবেদনকারীর ডেমিনর, ক্যানডর অ্যান্ড রেসপন্সিভনেস তার সাংস্কৃতিক আবহ, বিদেশে অবস্থান করা, দেশে ফেলে আসা দুঃস্বপ্ন, দীর্ঘ ভ্রমণ কিংবা ভাষাগত দুর্বলতায় প্রভাবিত হতে পারে। কিন্তু নতুন লেসন প্ল্যানে এই প্রভাবকগুলোকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাবক’ (সিগনিফিক্যান্ট ফ্যাক্টর) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি যে কারণে অ্যাসাইলাম অফিসাররা আবেদনকারীর বিশ্বাসযোগ্যতার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করার আইনগত ভিত্তি পেয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে আইনজীবীর সহায়তায় ইমিগ্রেশন বিচারকের মুখোমুখি হওয়ার আগেই ‘ক্রেডিবল ফিয়ার’ নেই মর্মে যে রায় অ্যাসাইলাম অফিসার কর্তৃক পেয়ে যাচ্ছেন তাকে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক স্টিফেন লেগমস্কির মত ‘কম নিয়ন্ত্রণমূলক বিশ্বাসযোগ্য ভয় সীমারেখা’ (লেস রেস্ট্রিক্টিভ ক্রেডিবল ফিয়ার থ্রেশোল্ড) নীতির সমর্থকেরা প্রকৃতই মৃত্যুভয় ও সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের প্রতি অবিচার হিসেবে চিহ্নিত করছেন।
অন্যদিকে কনজারভেটিভ ইমিগ্রেশন পলিসি সেন্টারের পরিচালক জেসিকা ভন এই পরিবর্তনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তার দৃষ্টিতে এটি অবৈধ ও অযোগ্য অ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসাইলামের গোটা ব্যবস্থাটির অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার করবে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কেননা সাম্প্রতিক সময়ের পুরো ব্যবস্থা অ্যাসাইলাম আবেদনকারীর জন্য সহায়ক ছিল এবং অ্যাসাইলামের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা অ্যাসাইলাম কর্মকর্তার জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়েছিল। গত পাঁচ/ছয় বছরে তাই অ্যাসাইলামের আবেদন এমন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, দেখে মনে হচ্ছিল লোকেরা খুবই সহনশীল একটা ব্যবস্থার ফায়দা লুটছিল।’
এ ছাড়া চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির বর্তমান সেক্রেটারি জন কেলি ইউএসসিআইএস, সিবিপি ও আইসিইয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ‘ইমপ্লিমেন্টিং দ্য প্রেসিডেন্টস বর্ডার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট ইম্প্রুভমেন্ট পলিসি’ ও ‘এনফোর্সমেন্ট অব দ্য ইমিগ্রেশন ল’ টু সার্ভ দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’ নামে দুটি মেমোরেন্ডাম জারি করেন যেখানে অধিকতর কঠোর অ্যাসাইলাম প্রক্রিয়ার কথা জোর দিয়ে বলা হয়।