অবকাশে গিয়েও কতই না ব্যস্ত ট্রাম্প!
করোনা মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে কাটছে বড়দিন। তাদের বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে। বড়দিনের ছুটি কাটাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গেছেন ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো অবকাশকেন্দ্রে। তবে হোয়াইট হাউস বলছে, আমেরিকার জনগণের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ট্রাম্পের এই ‘ক্লান্তিহীন’ কাজের সূচিতে রয়েছে কিছু ফোনকল ও নিজের লোকদের নিয়ে বৈঠক।
৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে রাষ্ট্রীয় কাজে ট্রাম্প খুব বেশি সক্রিয় নন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন। হাজারো মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যস্ত থাকছেন নির্বাচন জালিয়াতির ভুয়া দাবি নিয়ে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়ে এখন কেউ-ই আর কোনো হিসাব মেলাতে পারছেন না। তাঁর নিজ দলের আইনপ্রণেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মার্কিন নাগরিক কারও মধ্যে ট্রাম্পকে নিয়ে কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই।
জনগণের জন্য জনপ্রতি দুই হাজার ডলার করে প্রণোদনা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েই ট্রাম্প অবকাশে চলে যান। ট্রাম্পের এমন প্রস্তাব তাঁর দলের আইনপ্রণেতারাই প্রত্যাখ্যান করেছেন।
টানা মতভেদ শেষে সমঝোতার পর কংগ্রেসে দুই দল নাগরিক প্রণোদনার প্রস্তাব গ্রহণ করে। জনপ্রতি ৬০০ ডলারের প্রণোদনার প্রস্তাবের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চাল চালেন। ঘোষণা দেন, তিনি প্রতিজনকে ২০০০ ডলার করে প্রণোদনা দিতে ইচ্ছুক। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ডেমোক্র্যাট দল দ্রুত তাদের প্রস্তাবে সংশোধনী আনে।
বৃহস্পতিবার প্রস্তাবটি সিনেটে প্রত্যাখ্যান করা হয়। সিনেটে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। রিপাবলিকান সিনেট থেকে প্রেসিডেন্টকে সমঝোতার রিলিফ (জনপ্রতি ৬০০ ডলার) আইনে অনুমোদন দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার নাগরিক প্রণোদনা আইনে স্বাক্ষর করার জন্য বিলটি কংগ্রেস থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, নাগরিকদের বর্ধিত নগদ সহযোগিতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে কংগ্রেসে পৃথক আরেকটি আইন প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে।
ক্ষমতার শেষ প্রান্তে এসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওয়াশিংটনের পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছেন। কংগ্রেস প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা বিলে ভেটো দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ফেডারেল সরকার চালিয়ে রাখার অর্থ বিলে প্রেসিডেন্টের ভেটো মোকাবিলার জন্য কংগ্রেস ছুটির এই সপ্তাহে আবার ওয়াশিংটনে সমবেত হচ্ছে।
করোনা রিলিফ প্রস্তাবের পাল্টা প্রস্তাব উপস্থাপন করে নিজের দলের আইনপ্রণেতাদেরই বিপাকে ফেলে দিয়েছেন ট্রাম্প। ফ্লোরিডার অবকাশকেন্দ্র থেকে ফিরে নাটকীয়ভাবে ট্রাম্প করোনা রিলিফ আইন এবং ফেডারেল সরকার চালিয়ে রাখার অর্থ প্রস্তাব অনুমোদন দিতে পারেন বলে কেউ কেউ অবশ্য আশা করছেন।
রিপাবলিকান সিনেটর রওয় ব্লান্ট বলেছেন, অবকাশ থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফিরে এসে আইন প্রস্তাব অনুমোদন করাটাকেই সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতি বলে এখন মনে করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউসের সাবেক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন নাটকীয়ভাবে বিলগুলোর অনুমোদন দেওয়ার সম্ভাবনা ‘ফিফটি-ফিফটি’।
কেউ কেউ মনে করছেন, মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘পকেট ভেটো’ প্রদান করতে পারেন। এমন ‘পকেট ভেটো’ কংগ্রেসের অধিবেশন শেষ হওয়ার ১০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। ফলে কংগ্রেস এ ধরনের ভেটো মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে পায় না।
নিজের লোকজনকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একের পর এক ক্ষমা প্রদান করার ঘটনা নিয়ে রিপাবলিকান দলের লোকজন মুখ খুলছেন। রিপাবলিকান সিনেটর বেন সাসেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এমন ক্ষমা প্রদানকে বাজে উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ট্রাম্প এখনো নির্বাচনের ফল নিয়ে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। টুইট-ফেসবুকে নানান বার্তা দিয়ে নিজের ভুয়া দাবি চাঙা রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। ট্রাম্প এখন চেষ্টা করছেন ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে একটা ঝামেলা বাধানোর। এ নিয়ে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের চাপে ফেলার চেষ্টা করছেন তিনি।
প্রতিবছর আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠার এই সময়টিতে আমেরিকার মানুষ এবার একদম ভালো নেই। স্থানীয় সময় অনুসারে রাত পোহালেই ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের বেকার ভাতার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। লাখো পরিবার ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় ঘর থেকে বিতাড়িত হওয়ার হুমকিতে পড়েছে। বড়দিনের ছুটির পর বহু ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান তাদের অফিসের সদর দরজায় স্থায়ী তালা ঝোলানোর কথা ভাবছে।