টাইটানিক ঘিরে পর্যটনে আছে রোমাঞ্চ, আছে ঝুঁকিও

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষরয়টার্স ফাইল ছবি

সশরীর টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেয়েছেন হাতে গোনা মানুষ। এই ধ্বংসস্তূপ দেখতে যেতে চাইলে প্রয়োজন অর্থনৈতিক সক্ষমতা, বিশেষজ্ঞদের কাছে যাওয়ার সুযোগ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেওয়ার ইচ্ছা।

যাঁরা এসব শর্ত পূরণ করতে পারবেন, তাঁদের জন্য আট দিনের মিশন ঘোষণা করে পর্যটন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওশানগেট এক্সপেডিশনস। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩ হাজার ফুট নিচে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে নিয়ে যাবে কার্বন ফাইবারের তৈরি তাদের সাবমেরিন। এতে রয়েছে পাঁচটি আসন। জীবনের এই বিরল অভিজ্ঞতা নিতে প্রতি আসনের জন্য ব্যয় করতে হবে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার।

‘টাইটান’ সাবমেরিন
ছবি: রয়টার্স

রোমাঞ্চ-সন্ধানীদের মধ্যে ঝুঁকি রয়েছে এমন পর্যটনের  প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ওশানগেট এক্সপেডিশন শুধু একটি উদাহরণ। এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বেসরকারিভাবে কাজ করে। তারা মানুষকে সাগরতলের অভিজ্ঞতা দেয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান মহাসাগরের এমন গভীরে নিয়ে যায়, মানুষ সাধারণত যেখানে যাওয়ার কল্পনা করতে পারে না।

বিশেষ ইভেন্টের ক্ষেত্রবিশেষজ্ঞ জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান টিএআরএর মালিক নিক ডি’ আনুঞ্জিও বলেন, ‘অতি-ধনাঢ্যদের কাছে ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা পেতে অর্থ ব্যয় কোনো বিষয় নয়। তারা এমন কিছু চায় যা, তারা কখনোই ভুলবে না।’

ওশানগেট ২০২১ ও ২০২২ সালে টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপ দেখাতে তাদের অভিযান সফলভাবেই চালিয়েছে।

অতি বিলাসী ভ্রমণ খুবই ব্যয়বহুল। কারণ, এখানে রয়েছে অনেক খরচ আর সতর্ক প্রস্তুতির বিষয়। এর মধ্যে কিছু কিছু খুবই ব্যতিক্রম, যা নিয়মনীতির আওতায় থাকে না। টাইটানও সরকারের নিয়মনীতির অধীনে ছিল না। ওশানগেট দাবি করে, প্রযুক্তিটি এত নতুন এবং এখনো এটির পর্যালোচনা হয়নি।

উত্তর ক্যারোলাইনার ক্যাম্পবেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং সমুদ্র বিষয়ে ইতিহাসবিদ সাল মেরকোগ্লিয়ানোর মতে, টাইটান সাবমেরিনের নিরাপত্তা বিধি মেনে চলার প্রয়োজন নেই। কারণ, এটি আন্তর্জাতিক জলসীমায় কাজ করে।
ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্টকটন রাশও বারবার দাবি করেছেন, ডুবোজাহাজ নিয়ে বিদ্যমান বিধানগুলো বাণিজ্যিক উদ্ভাবনের চেয়ে যাত্রী সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়, যা আসলে অপ্রয়োজনীয়।

স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিনের ২০১৯ সালের জুন মাসের সংখ্যায় প্রকাশিত একটি সাক্ষাত্কারে রাশ বলেছিলেন, ‘৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে বাণিজ্যিকভাবে চলা ডুবোযানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এটি খুবই নিরাপদ। কারণ, তাঁদের এ–সংক্রান্ত নিয়মনীতি আছে।’

এই ঝুঁকি শুধু গভীর সমুদ্রেই নয়, আছে মহাকাশযানেও। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুসারে, বাণিজ্যিকভাবে মানুষ বহনকারী মহাকাশযানের চলাচলের বিধান স্থগিত আছে মার্কিন কংগ্রেসে। এর অর্থ হলো ভার্জিন গ্যালাকটিক, ব্লু অরিজিন বা স্পেসএক্সের নকশা করা মহাকাশযানের ক্ষেত্রে সরকারি নিরাপত্তা বিধি প্রযোজ্য নয়। সম্প্রতি যাঁরা মহাকাশ ভ্রমণ করেছেন, তাঁদের ‘জেনেশুনে সম্মতি’ পত্রে সই করতে হয়েছে। সেখানে লেখা ছিল, মিশনে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় তাঁরা মেনে নেন।

ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, এ বছরের শেষের দিকে  মার্কিন কংগ্রেসের স্থগিতাদেশটি নবায়ন না হলে, তারা মানুষ বহনকারী বাণিজ্যিক মহাকাশযানের নিরাপত্তার বিষয়টি আরও জোরদার করতে প্রস্তুত আছে।

অ্যাবারক্রম্বি অ্যান্ড কেন্টের প্রাইভেট জেট এবং বিশেষ আগ্রহের ভ্রমণবিষয়ক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান এপ্টিং বলেছেন, বিলাসবহুল ভ্রমণের আয়োজনকারী কোম্পানি সাধারণত ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রায় ১৮ মাস আগে থেকেই দুঃসাহসিক ভ্রমণের পরিকল্পনা করে।

আরও পড়ুন