ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কাজ করছেন ট্রাম্প, বললেন ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব
অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য সম্মতিতে পৌঁছাতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই যুদ্ধের ইতি টানা তাঁর সক্রিয় প্রচেষ্টার অংশ। যদিও এখনো ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে বসতে কয়েক সপ্তাহ বাকি রয়েছে।
গত শনিবার প্যারিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হয়। এরপর জেলেনস্কিকে ইঙ্গিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘জেলেনস্কি ও ইউক্রেন একটি চুক্তি করে এই পাগলামি বন্ধ করতে রাজি হবে।’
গত রোববার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ন্যাটো থেকে বের করে আনার বিষয় তিনি বিবেচনা করবেন। এ দুই হুমকি নিয়ে ইউক্রেন, ন্যাটো জোটের মিত্ররা ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা মহলের অনেককে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
এনবিসি টেলিভিশনের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, প্রায় তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন কি না। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি কাজ করছি।’
গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না, জানতে চাওয়া হলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে চাই না। কারণ, আমি এমন কিছু করতে চাই না, যা সমঝোতা আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’
ট্রাম্প দ্রুত যুদ্ধবিরতির যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ও ইউক্রেনের প্রকাশ্যে ঘোষিত নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ট্রাম্পের এ আহ্বানের বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন জেলেনস্কি। ট্রাম্পের এ মন্তব্য এটারও ইঙ্গিত দেয় যে আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের আগেই তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য বেশ জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
গত সপ্তাহান্তে ট্রাম্প প্যারিসে ফ্রান্স ও ইউক্রেনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পরই তিনি দ্রুত ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
কয়েক বছর আগে ভয়াবহ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত প্যারিসের নটর-ডেম ক্যাথেড্রাল মেরামত করে গত রোববার সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এ অনুষ্ঠানে বিশ্বের অনেক নেতা যোগ দিয়েছিলেন। তাতে যোগ দিতেই ট্রাম্প ও জেলেনস্কি প্যারিসে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে ইউক্রেন বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো উপদেষ্টাকে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা যায়নি।
এ বৈঠকের পর ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, কিয়েভ একটি চুক্তি করতে রাজি হবে। তিনি আরও লেখেন, ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত, আর এ জন্য আলোচনা শুরু হওয়া উচিত।’
ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘ভ্লদিমিরকে (পুতিন) আমি ভালো করে জানি। এখনই তাঁর পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। চীন সহায়তা করতে পারে। বিশ্ব অপেক্ষা করছে!’
গত শনিবার প্যারিসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ও ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠককে ‘গঠনমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন জেলেনস্কি। তবে বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
জেলেনস্কি বারবার বলে আসছেন, ইউক্রেনের ‘ন্যায্য ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি চুক্তি দরকার, যা রুশরা কয়েক বছরের মধ্যে ভঙ্গ করতে পারবে না।’
গত রোববার মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘আমরা যখন রাশিয়ার সঙ্গে কার্যকর শান্তিচুক্তির কথা বলব, প্রথমেই বলতে হবে কার্যকর শান্তির নিশ্চয়তার বিষয়ে। অন্য যে কারও চেয়ে ইউক্রেন বেশি শান্তি চায়। রাশিয়াই আমাদের ভূখণ্ডে যুদ্ধ নিয়ে এসেছে।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ট্রাম্পের পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত তারা। রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থান নিয়ে আছে। একই সঙ্গে পেসকভ ২০২২ সালের অক্টোবরে জেলেনস্কির জারি করা একটি ডিক্রির কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ওই ডিক্রিতে বলা হয়, পুতিন যত দিন রাশিয়ার নেতৃত্বে থাকছেন, তত দিন কোনো আলোচনা ‘অসম্ভব’।
পুতিনের একটি ঘোষণার পরই জেলেনস্কি ওই ডিক্রি জারি করেছিলেন। সে সময় রুশ প্রেসিডেন্ট অধিকৃত ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ বলে ঘোষণা করেছিলেন। মস্কোর এ ঘোষণাকে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করে কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলো।
রোববার সম্প্রচারিত এনবিসির সাক্ষাৎকারটি ধারণ করা হয় গত শুক্রবার। অর্থাৎ ট্রাম্পের প্যারিস সফরের আগে। ওই সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প ন্যাটো সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাতে তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদে পশ্চিমা সামরিক জোটটিতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ অব্যাহত থাকবে, সে রকমটি তিনি দেখছেন না।
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্র যে অনুদান দেয় সেখান থেকে কানাডা ও ইউরোপের সদস্যদেশগুলো এক তরফাভাবে উপকৃত হয়। সামরিক জোটটিতে যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বেশি অর্থ দেয়। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ন্যাটোর সদস্যদের ওপর নিজেদের ভাগের অর্থ দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি করেছিলেন।