ট্রাম্পের ‘নতুন অধ্যায়ে’ নিজেদের ঐক্য ধরে রাখতে ইউরোপের নেতাদের জোর চেষ্টা
ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির নাটকীয় পরিবর্তনে কীভাবে সাড়া দেওয়া হবে, সে বিষয়ে ইউরোপের নেতাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সের প্যারিসে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত এ অঞ্চলের নেতাদের অনানুষ্ঠানিক এক শীর্ষ বৈঠকে এ বিভক্তি দেখা দেয়। তবে মতপার্থক্য কাটিয়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টাও চালান তাঁরা।
বৈঠকে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর চাপ দেয়।
এর আগে জার্মানির মিউনিখে একটি বার্ষিক নিরাপত্তা সম্মেলনে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেন। তাঁর বক্তব্যে ইউরোপের নীতিনির্ধারকেরা ভীষণভাবে ব্যথিত হন।
ইউরোপের নেতারা এই ভেবে চিন্তিত যে মস্কোর সঙ্গে শান্তি আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁদের পাশাপাশি কিয়েভকেও বাদ দেবেন। আজ মঙ্গলবার সৌদি আরবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের মধ্যে এক বিরল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মিউনিখ সম্মেলনের প্রেক্ষাপটে গতকাল প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে তড়িঘড়ি ইউরোপের নেতাদের জরুরি বৈঠক ডাকেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।
ইউরোপের নেতারা এই ভেবে চিন্তিত যে মস্কোর সঙ্গে শান্তি আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁদের পাশাপাশি কিয়েভকেও বাদ দেবেন। আজ মঙ্গলবার সৌদি আরবে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের মধ্যে এক বিরল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্যারিস বৈঠকে ইউরোপীয় নেতারা যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করার ওপর জোর দেন, সেসবের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব ব্যয় বৃদ্ধি, কিয়েভকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হলে কিয়েভে শান্তিরক্ষী হিসেবে ইউরোপের সেনা পাঠানো ইত্যাদি।
ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি—দুজনের সঙ্গেই টেলিফোনে কথা বলেন মাখোঁ। আজ সকালে এ টেলিফোন আলাপে তিনি ইউক্রেনের জন্য ‘জোরালো ও গ্রহণযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার’ আহ্বান জানান। এ ক্ষেত্রে মাখোঁ এমন শান্তিচুক্তির আহ্বান জানান যেন তা ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মিনস্ক চুক্তির মতো না হয়। ওই চুক্তি পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাতের অবসান ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছিল।
যুদ্ধ চলাকালে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে যেকোনো ধরনের বিতর্ক করা হবে ‘একেবারে অপরিপক্ব’ ও ‘খুবই অযথার্থ’।ওলাফ শলৎজ, জার্মান চ্যান্সেলর
মাখোঁর সঙ্গে ফোনালাপের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেলেনস্কি বলেন, ‘জোরালো ও গ্রহণযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা’ প্রতিষ্ঠা করাসহ শান্তি অর্জনে ‘অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি’ বিনিময় করেছেন তাঁরা।
এদিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, টেকসই শান্তিচুক্তি হলে অন্যদের পাশাপাশি তিনিও ইউক্রেনে ব্রিটিশ সেনা মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনা করতে প্রস্তুত আছেন। তবে তিনি বলেন, ওয়াশিংটনকে অবশ্যই এতে (নিরাপত্তা নিশ্চিত করায়) সমর্থন জানাতে হবে। কেননা, ইউক্রেনে আবারও হামলা চালানো থেকে রাশিয়াকে কার্যকরভাবে নিবৃত্ত রাখার একমাত্র পথ যুক্তরাষ্ট্রের তরফে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, টেকসই শান্তিচুক্তি হলে অন্যদের পাশাপাশি তিনিও ইউক্রেনে ব্রিটিশ সেনা মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনা করতে প্রস্তুত আছেন। তবে তিনি বলেন, ওয়াশিংটনকে অবশ্যই এতে (নিরাপত্তা নিশ্চিত করায়) সমর্থন জানাতে হবে। কেননা, ইউক্রেনে আবারও হামলা চালানো থেকে রাশিয়াকে কার্যকরভাবে নিবৃত্ত রাখার একমাত্র পথ যুক্তরাষ্ট্রের তরফে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া।
বৈঠকে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসন বলেন, সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তাঁর সরকারের মন খোলা রয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, সেনা পাঠানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে সমর্থন দেবে কি না, সেটি এক বড় প্রশ্ন।
ফ্রেডেরিকসন আরও বলেন, রাশিয়া সমগ্র ইউরোপকে এখন হুমকি দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে দ্রুত যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হলে তা দেশটিকে সেনাদের সংগঠিত করা, ইউক্রেন বা ইউরোপের অন্য দেশে আবার হামলা চালানোর সুযোগ এনে দেবে।
এসব আলোচনার পর জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, যুদ্ধচলাকালে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে যেকোনো ধরনের বিতর্ক করা হবে ‘একেবারে অপরিপক্ক’ ও ‘খুবই অযথার্থ’।
যাহোক, প্যারিস বৈঠকের পর ইউরোপের নেতাদের পক্ষ থেকে কোনো যৌথ বিবৃতি বা বড় ধরনের ঘোষণা দেওয়া হয়নি। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী নেতারা বলেছেন, এমন বিবৃতির জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বা ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠান প্রয়োজন।