পটোম্যাক থেকে ৪০ মরদেহ উদ্ধার, ব্ল্যাক বক্স ধরে তদন্ত

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ওই দুর্ঘটনায় উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারের ৬৭ আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ফ্লাইট ডেটা (উড্ডয়নসংক্রান্ত তথ্য) ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার উদ্ধার করা হয়েছে।

স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে রোনাল্ড রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল বিমানবন্দরের কাছে মাঝ–আকাশে আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের সঙ্গে মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ হয়। এরপর উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারটি হিমশীতল পটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়।

উড়োজাহাজে ৬৪ জন ও হেলিকপ্টারে সেনাবাহিনীর ৩ সদস্য ছিলেন। এই ৬৭ আরোহীর কেউ বেঁচে নেই বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্কাই নিউজের খবর অনুযায়ী, ইতিমধ্যে ৪০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

দুর্ঘটনার পরপরই সেখানে ছুটে যান প্রায় ৩০০ উদ্ধারকর্মী; কিন্তু এ দুর্ঘটনায় কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই বলে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়। এরপর উদ্ধার তৎপরতা কার্যত মরদেহ উদ্ধারের কাজে পরিণত হয়।

ওয়াশিংটন ডিসি ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিসেসের প্রধান জন ডোনেলি ৪০টি মরদেহ উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন। প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার রাতে উদ্ধারকাজ স্থগিত করা হয়। তবে ডুবুরিদের আশা, সব দেহাবশেষ তাঁরা উদ্ধার করতে পারবেন।

ডুবুরিদের উদ্ধার তৎপরতাকে সহজ করতে নদী থেকে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের কিছু ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নেবে উপকূলরক্ষী বাহিনী। ওই ধ্বংসাবশেষগুলো সরানোর পর পরিস্থিতি নিরাপদ হলে আবারও পানিতে নামবেন উদ্ধারকারীরা।

তবে এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের পুরো তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্কেটার, চীনের দুই নাগরিক, হাঁস শিকারে বের হওয়া কয়েকজন বন্ধু এবং উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারের ক্রুরা রয়েছেন।

এ ঘটনার তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সিবিএস ও এবিসি নিউজকে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আমেরিকান এয়ারলাইনসের ওই উড়োজাহাজের রেকর্ডিং যন্ত্রগুলো (ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার) উদ্ধার হয়েছে, যা সাধারণত ব্ল্যাক বক্স নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্বাধীন তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড এখন ব্ল্যাক বক্সের তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করবে। ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড এ ঘটনার তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, হেলিকপ্টারের ক্রুর ভুলে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সম্ভবত তিনি আমেরিকান এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটির গতিপথ বুঝতে পারেননি।

দুর্ঘটনা নিয়েও ট্রাম্পের রাজনীতি

ভয়াবহ দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক দোষারোপের খেলায় মেতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ দুর্ঘটনার জন্য তিনি দায়ী করেছেন জো বাইডেন ও বারাক ওবামা সরকারের কর্মী-বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি (ডিইআই) নীতিকে।

উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর বাইডেন প্রশাসনের পরিবহনবিষয়ক মন্ত্রী পিট বুরজাজকে লক্ষ্য করে ডিইআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক পরিসরে কথা বলতে শুরু করেন। পিট বুরজাজ সমকামী হিসেবে পরিচিত।

ট্রাম্প বলেন, ‘ডিইআই অনুসরণ করতে গিয়ে বিমান সংস্থাগুলোয় তাঁরা যোগ্য কর্মীদের আসতে দেননি। আর আমরা যোগ্য লোকদের চাই।’ এ দুর্ঘটনার জন্য কর্মক্ষেত্রে ডিইআই নীতি দায়ী কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি হতে পারে।’

ট্রাম্প পরিবহন খাতে তাঁর বৈচিত্র্য নীতির সমালোচনা করেন। একই সুরে কথা বলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।

২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির পর যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে এটিই সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। ১৯৮২ সালে পটোম্যাক নদীর ওপর ফোরটিনথ স্ট্রিট ব্রিজে এয়ার ফ্লোরিডা ফ্লাইট ৯০ বিধ্বস্ত হয়েছিল। ওই ঘটনায় ৭০ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু নিহত হন। শুধু চার যাত্রী ও এক ক্রু বেঁচে গিয়েছিলেন।