যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশিরাও

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের দেওয়া বেষ্টনীর একাংশ ভেঙে ফেলে পুলিশ। এ সময় মুখোমুখি অবস্থান নেয় দুই পক্ষ। গত বুধবারছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটনে ৩৬ একর জায়গাজুড়ে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা গেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি। বৈধ পরিচয়পত্র ছাড়া ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে ভেতরে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন। পাশাপাশি পরীক্ষাও চলছে।

শুধু কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে দুই দিন আগেও হাজারো শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। গতকাল সেখানে বিপুলসংখ্যক সাংবাদিককে দেখা গেল। তাঁদের অনেকের ক্যামেরা বিশ্ববিদ্যালয় ফটকের দিকে তাক করা। কথা হলো সেখানে কর্তব্যরত বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের ভেতরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। কোনো সহিংসতা নেই। আন্দোলনকারীদের অনেকে এখন ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রধান ফটকের কাছেই অবস্থান করছেন।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানা ইয়াসমিন
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র, ২ মে
ছবি: তোফাজ্জল হোসেন

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সুলতানা ইয়াসমিন। স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকছিলেন। তাঁর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। সুলতানা ইয়াসমিন বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজয় বরণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কাকতালীয়ভাবে ঠিক সেদিনই ক্যাম্পাসের হ্যামিলটন হলে হস্তক্ষেপ করে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ। একই দিনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নিমাত শফিক জানিয়েছেন, তাঁরা কোনো অবস্থাতেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না। এই ঘোষণার পর থেকে আমরা হ্যামিলটন হলের নাম দিয়েছি হিন্দ’স হল। হিন্দ হলো সেই ৬ বছরের ফিলিস্তিনি শিশু, যাকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করেছে।’

সুলতানা ইয়াসমিন আরও বলেন, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

আরও পড়ুন
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ
ছবি: তোফাজ্জল হোসেন

আন্দোলনে বাংলাদেশি ছাত্রদের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন নোহা। মঙ্গলবার রাতে তিনি গ্রেপ্তার হন। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আন্দোলনে ছিলাম। পুলিশ আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।’

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শোয়াইব আহমেদ ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণ হলো, পুলিশের ধরপাকড়ের কারণে আন্দোলন জোরালো হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট নিমাত শফিককে সম্প্রতি কংগ্রেসে ডেকে রিপাবলিকানরা নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছেন। নিমাত শফিক দেখেছেন, তাঁর আগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যাঁদের কংগ্রেসে ডাকা হয়েছে, তাঁদের কাউকে কাউকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। তাই পুলিশ ডেকে তিনি শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করিয়েছেন। তারপর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আন্দোলন জোরালো হয়ে উঠছে।

আমি আন্দোলনে ছিলাম। পুলিশ আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।
বাংলাদেশি ছাত্রদের পক্ষে নেতৃত্বদানকারী নোহা
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র, ২ মে
ছবি: তোফাজ্জল হোসেন
আরও পড়ুন

ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সফল হবে বলে মনে করেন মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাঈমুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছে। তারপর নানা আন্দোলনে কলাম্বিয়ার শিক্ষার্থীরা যাদের বিরোধিতা করেছে, তারা পরাজিত হয়েছে। আমি আশাবাদী, এই আন্দোলনও সফলতা পাবে।’

ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে চলমান আন্দোলন থেকে বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড় করছে পুলিশ। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ এপ্রিল শুরু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক এ আন্দোলনে ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা করেছে। তারপর নানা আন্দোলনে কলাম্বিয়ার শিক্ষার্থীরা যাদের বিরোধিতা করেছে, তারা পরাজিত হয়েছে। আমি আশাবাদী, এই আন্দোলনও সফলতা পাবে।
মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাঈমুল হাসান