রাজনীতিতে আরও শক্তিশালী অবস্থানে ইলন মাস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ইলন মাস্কের অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল। যার পুরস্কার হিসেবে তাঁকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে মাস্কের মতো ব্যক্তির রাজনীতিতে প্রভাব রাখার সুযোগের বিষয়টি গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকেরা।
গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার), মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সসহ বিশ্বের কয়েকটি বিশিষ্ট প্রযুক্তি সংস্থার মালিক ইলন মাস্ক।
গত মঙ্গলবার বিকেলে মাস্ককে একটি বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, সরকারি ব্যয়, আমলাতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রণ কমানোর উদ্দেশ্যে একটি নতুন ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগ’ (ডিওজিই) গঠন করা হবে। তবে এই নতুন সংস্থার সঠিক অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়৷ কারণ, এটি স্পষ্টতই একটি সরকারি বিভাগ হবে না।
তবে স্বাভাবিকভাবেই এই নিয়োগ ইলন মাস্ককে সরকারি নীতির ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিয়েছে। যদিও ডিওজিইর কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে।
রাজনীতিতে ৫৩ বছর বয়সী মাস্কের মতো অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার মালিকদের হস্তক্ষেপ ও উপস্থিতি নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন ডিজিটাল অধিকার বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাইবার পলিসি সেন্টারের ফেলো এবং ‘দ্য টেক কুপ: হাউ টু সেভ ডেমোক্রেসি ফ্রম সিলিকন ভ্যালি’র লেখক মারিয়েট জে শ্যাক বলেন, মাস্ক যে ধরনের প্রযুক্তি পরিচালনা করেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মালিকানাধীন সংস্থাগুলো অসম্ভব রকম প্রভাবশালী এবং তথ্য ও ভূরাজনীতিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে।
স্বঘোষিত ‘মধ্যপন্থী’ থেকে কট্টর ডানপন্থী
১৯৯০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী মাস্ক সফল ব্যবসায়ের একটি স্ট্রিং তৈরি করেছেন। বর্তমানে আনুমানিক ২২৪ বিলিয়ন ইউরোর বেশি সম্পদের মালিক তিনি। তাঁর ব্যবসায়িক সাফল্য ধীরে ধীরে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে সাহায্য করেছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ কর্মসূচি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য মাস্কের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (স্পেসএক্স) ওপর নির্ভরশীল। স্পেসএক্সের সহায়ক সংস্থা স্টারলিংক বিশ্বের কয়েকটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহ করছে৷ ইউক্রেন থেকে গাজা, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে সামরিক বাহিনীর যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এটি একটি অপরিহার্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে ইলন মাস্কের সম্পৃক্ততা একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টার পরপরই মাস্ক প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন। জুলাই থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় সমর্থনকারী একটি সুপার পিএসিতে প্রায় ১১ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছেন মাস্ক।
এরপর কী হতে পারে
সাইবার নীতিবিশেষজ্ঞ শ্যাক সতর্ক করে বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল পরিকাঠামোর ওপর ক্ষমতার এই কেন্দ্রীকরণ গণতন্ত্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এই সম্ভাব্য প্রভাবের প্রথম আভাস দেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্পের রানিংমেট (হবু ভাইস প্রেসিডেন্ট) জেডি ভ্যান্স পরামর্শ দিয়েছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যদি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে; বিশেষত মাস্কের এক্সকে লক্ষ্য করে কঠোর নিয়মনীতি প্রণয়ন করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর প্রতি তার সমর্থন পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
ইইউ বর্তমানে তাদের নতুন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নীতির সম্ভাব্য লঙ্ঘনের জন্য এক্সের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে ইলন মাস্ককে বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হতে পারে।
শ্যাক বলেন, মাস্কের বিষয়ে কিছু অনুমান করা যায় না; তাঁর অবস্থান রাতারাতি পরিবর্তিত হতে পারে। যখন উল্লেখযোগ্য পণ্য ও পরিকাঠামো নিয়ন্ত্রণকারী কেউ তাঁর মন পরিবর্তন করেন, তখন প্রভাবও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হয়।