অভিবাসীবিষয়ক ‘দ্রুত অপসারণ’ নীতির আওতা বাড়ানোর ট্রাম্পের পদক্ষেপ আটকাতে মামলা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েই জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব সুবিধা বন্ধে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পছবি: রয়টার্স

অভিবাসীদের বিতাড়ন করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান ‘দ্রুত অপসারণ’ নীতির আওতা বাড়ানোর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদক্ষেপ আটকে দিতে মামলা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার অভিবাসনসংক্রান্ত একটি সংগঠন এই মামলা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসকারী লাখ লাখ লোককে দেশ থেকে বের করে দিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে অঙ্গীকার করেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতেই ‘দ্রুত অপসারণ’ নীতির আওতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।

অভিবাসীদের পরামর্শক হিসেবে কাজ করা ‘মেক দ্য রোড নিউইয়র্ক’ নামের একটি সংগঠন ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার আদালতে ওই মামলা করেছে। তারা বলেছে, ‘দ্রুত অপসারণ’ নীতির আওতায় পড়া অভিবাসীদের কোনো আইনজীবীর সহায়তা নেওয়ার সুযোগ নেই এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাঁদের অপসারিত হওয়ার বিরুদ্ধে তাঁরা কোনো প্রমাণ দাখিল করতে পারবেন না।

মামলায় বলা হয়েছে, ‘এক্সপিডাইটেড রিমুভাল’ নামে পরিচিত এ নীতি যথাযথ প্রক্রিয়া, অভিবাসন আইন ও প্রশাসনিক আইন অনুসরণ না করায় তা সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে।

মামলায় বলা হয়েছে, ‘এক্সপিডাইটেড রিমুভাল’ নামে পরিচিত এ নীতি যথাযথ প্রক্রিয়া, অভিবাসন আইন ও প্রশাসনিক আইন অনুসরণ না করায় তা সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে।

সংগঠন ‘মেক দ্য রোড নিউইয়র্ক’ ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার ফেডারেল বিচারকের প্রতি ওই নীতিকে এটির আগের শর্তাবলীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

সদ্য বিদায় নেওয়া প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে গ্রহণ করা হয়েছিল ‘দ্রুত অপসারণ’বিষয়ক নীতি। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ১৪ দিনের মধ্যে দেশটির সীমান্তের ১০০ মাইলের (১৬০ কিলোমিটার) ভেতর থেকে আটক হওয়া নথিপত্রবিহীন অভিবাসীদের ক্ষেত্রে নীতিটি প্রয়োগ করা হতো। তবে ট্রাম্প এ নীতির আওতা বাড়ানোর কারণে এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো স্থান থেকে আটক হওয়া অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করতে পারবেন দেশটির কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন

গত মঙ্গলবার ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এই নীতির আওতা বাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করা ব্যক্তি, যাঁরা বৈধ মর্যাদা পাননি ও অন্তত দুই বছর দেশটিতে থাকার বিষয় প্রমাণ করতে পারবেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে নীতিটি।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্রের কাছে জানতে চাইল তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রসারিত ‘দ্রুত অপসারণ’ নীতি অভিবাসীদের ব্যাপারে যথাযথ প্রক্রিয়া ও সংবিধান অনুসরণ করা এড়াতে ট্রাম্পকে প্রতারণামূলক একটি সুযোগ এনে দেবে।
আনন্দ বালাকৃষ্ণান, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের কৌঁসুলি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে অনুসরণ করা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাঁদের আইনি সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু আওতা বাড়ানো ‘দ্রুত অপসারণ’ নীতিতে তা নেই। এ নীতিতে আইনি সুরক্ষা পেতে বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে।

‘মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট’–এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন ওই নীতি কার্যকর করার বিষয়টি কয়েক দিন, এমনকি কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার হয়ে উঠতে পারে।

আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের কৌঁসুলি আনন্দ বালাকৃষ্ণান এক বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রসারিত দ্রুত অপসারণ নীতি অভিবাসীদের ব্যাপারে যথাযথ প্রক্রিয়া ও সংবিধান অনুসরণ করা এড়াতে ট্রাম্পকে প্রতারণামূলক একটি সুযোগ এনে দেবে।

টেক্সাসে যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকো সীমান্তে পাহারায় মার্কিন সেনাসদস্যরা।
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ট্রাম্প তাঁর প্রথম দফার প্রেসিডেন্ট মেয়াদে ২০১৯ সালে অভিবাসীদের বিষয়ে যে নীতি অনুসরণ করেছিলেন, ‘দ্রুত অপসারণ’ নীতির সম্প্রসারণ সেটিরই প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় বসেই তিনি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেন। এখন সরকার চাইলে সেখানে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে পারবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে গণহারে অবৈধ অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রেজিস্ট্রারের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক নোটিশ অনুযায়ী, অভিবাসীদের নিয়ে ওই নীতি কার্যকর হয়েছে ২১ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকে। নোটিশে বলা হয়েছে, এ পরিবর্তনের প্রভাব জাতীয় নিরাপত্তা ও জনগণের নিরাপত্তা বাড়াবে। সেই সঙ্গে অভিবাসনসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়ার সুযোগ তৈরির মাধ্যমে সরকারি খরচ কমাবে।

গত সোমবার ক্ষমতা নেওয়ার পর অভিবাসীসংক্রান্ত আরও কিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে নথিপত্রহীন মা-বাবার সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল করার সিদ্ধান্ত। সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অভিবাসনসংক্রান্ত একটি নীতি থেকেও সরে গেছে বর্তমান প্রশাসন। সে অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তর কিছু দিকনির্দেশনা বাতিল করেছে। ওই নির্দেশনায় স্কুলের মতো ‘স্পর্শকাতর’ এলাকায় অভিবাসন কর্মকর্তাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হতো।

আরও পড়ুন

নতুন আরেক নির্দেশনায় ‘মানবিকতার খাতিরে ছাড়’ দেওয়ার সুবিধাও বাতিল করা হয়েছে। এ সুবিধার আওতায় সুনির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হতো। এখন বিষয়টি প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদা যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন